মহা-ঔষধ জাফরানের উপকারীতা ?
অনলাইন ডেস্কঃ বহুল জনপ্রিয় ও নানান গুণাগুণ সমৃদ্ধ একটি মসলা হলো জাফরান। জাফরান পারস্যের কাছাকাছি উৎপত্তি লাভ করেছে বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীতে এটি ইউরেশিয়ায় হয়ে উত্তর আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা ও ওশেনিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়ে। জাফরান গাছ ভূমধ্যসাগরীয় ম্যাকুইসে (ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে যেখানে ঘন গুল্ম জন্মায়) জন্মায়। অর্থাৎ এটি এমন জায়গায় জন্মে যেখানে অর্ধ আর্দ্র জমির উপর দিয়ে গ্রীষ্মের উষ্ণ ও ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যায়। এর ফুল রক্তবেগুনী রঙের হয়ে থাকে এবং এর সুবাস অনেকটা মধুর মতো। এর ডাঁটাগুলো ২০-৩০ সেন্টিমিটার উচ্চতার হয়। আর এর ডাঁটা, শেকড় এবং ফুল অক্টোবর এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বিকশিত হয়।
ঔষধের জনক হিপোক্রেটিসের মতে, জাফরান কফ, কাশি, ঠাণ্ডা, পাকস্থলীর সমস্যা, অনিদ্রা, গর্ভাশয়ে রক্তপাত, পেট-ফাঁপা ও হৃদরোগের সমস্যা সমাধানে বেশ ভালো কাজ করে। জাফরানে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এবং হাড় ও টিস্যু গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন সি যা যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং আয়রন শোষণে সাহায্য করে। জাফরান দুধেরও রয়েছে অনেক গুণাগুণ। দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে হজমশক্তি ও রুচি বাড়ে। শুধু তাই নয় জাফরান দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বককে রাখে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে জাফরান দুধ খেলে খুব ভালো ঘুম হয়। জাফরানের তেল ত্বককে করে উজ্জ্বল। এমনকি জাফরানের পানিতেও রয়েছে অদ্ভুত সব বৈশিষ্ট্য।
জাফরানের উপকারীতা?
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে
জাফরানে যে প্রাকৃতিক যৌগ আছে তা দৃষ্টিশক্তির অবক্ষয় এবং রেটিনার যেকোনো সমস্যা প্রতিরোধ করে। দ্য ইউনিভার্সিটি অব সিডনির একটি প্রতিবেদন মতে, জাফরান প্রবীণদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। সেই পরীক্ষায়, জাফরানের বড়ি খাওয়ার পর রোগীদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়।
অনিদ্রার সমস্যাটি প্রতিরোধ করে
কিছু কিছু গবেষণা মতে, জাফরান অনিদ্রা এবং বিষণ্ণতা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আধা কাপ পানিতে ৬ থেকে ৮টি জাফরান ভিজিয়ে রেখে ছেঁকে সেই পানিটি খেলে অনিদ্রার সমস্যা দূর হবে। এছাড়াও প্রতি রাতে দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম হয়।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, জাফরান স্মৃতিশক্তির ইন্দ্রিয়গুলোকে কার্যকরী করতে সাহায্য করে। অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম জাফরান খেলে আলঝেইমারস (স্মৃতিশক্তি জনিত সমস্যা) রোগের চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়।
অ্যাজমা রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে
প্রাচীনকাল থেকেই জাফরান অ্যাজমা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এই বিষয়ে তেমন কোনো গবেষণার নজির পাওয়া যায় না। তাই অ্যাজমার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই জাফরান ব্যবহার করা ভালো।
হজমশক্তি বাড়ায়
জাফরানে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে তা হজম জনিত সমস্যার সমাধান করে। এছাড়াও এটি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে এবং জ্বালাপোড়াভাব কমাতে সাহায্য করে। পেপটিক আলসার প্রতিরোধও জাফরান সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও জাফরান হৃদপিণ্ড ও যকৃত সুস্থ রাখতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
জাফরানে যেসব পুষ্টিগুণ রয়েছে
প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ জাফরানে ৩১০ কিলোক্যালরি, ৬৫.৩৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১১.৪৩ গ্রাম প্রোটিন ও ৫.৮৫ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৩.৯ গ্রাম ফাইবার, ১১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৩২৮ মিলিগ্রাম কপার, ১১.১০ মিলিগ্রাম আয়রন, ২৬৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম এবং ২৮ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।
রুপচর্চায় জাফরানের গুণাগুণ
বিভিন্ন ধরনের ফেস প্যাকে জাফরান ব্যবহার করলে ত্বকে যে তফাৎটা আসবে তা নিজেই লক্ষ করতে পারবেন। এখন জানাবো ত্বকের যত্নে জাফরানের গুণাগুণ নিয়ে।
এছাড়াও এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে আপনার ত্বক এক্সফোলিয়েট করে এবং ত্বককে কোমল ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
এ এম বি / পাথরঘাটা নিউজ