ধর্ষণ করেছি ৫ লাখ টাকাও দিয়েছি, নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে
রাজধানীর ধামরাই উপজেলায় ঘাস কাটতে গিয়ে এক প্রতিবন্ধী তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রাম্য সালিশি বৈঠকে ধর্ষককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও সেই টাকা সালিশকারী মাতব্বররা নিয়ে নিয়েছেন নিজেদের পকেটে।
গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার নান্নার ইউনিয়নের ঘোড়াকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে এ ব্যাপারে মুখ খুললে ধর্ষিতার পরিবারকে গ্রামছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন মাতব্বররা।
জানা যায়, ধর্ষক মহসিন মিয়া বিলে তার মেশিনঘরে কাজ করছিলেন। এ সময় পাশের গ্রাম ভাটারখোলা গ্রামের এক প্রতিবন্ধী তরুণী তার মেশিনঘরের পাশে গরুর ঘাস কাটছিল। আশপাশে কেউ না থাকায় মহসিন তরুণীকে মেশিনঘরের ভেতর নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
এ বিষয়ে প্রতিবন্ধী ওই ধর্ষিতার ভাই ইয়াছিন মিয়া ধর্ষকের শাস্তির দাবি করে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে বিচার চান। পরে তারা এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত না করলে ধর্ষিতা ওই প্রতিবন্ধী তরুণীর ফুফাত ভাই মো. মজিবর রহমান, যুবলীগ নেতা মো. জাকির হোসেন (গোড়াকান্দা), মো. সোলাইমানসহ ১৫-২০ জন মাতব্বর ধর্ষকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রাম্যসালিশি বৈঠকের আয়োজন করে। সালিশি বৈঠকে ধর্ষককে নগদ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে সঙ্গে সঙ্গে তা আদায়ও করা হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে জরিমানার কানাকড়িও ধর্ষিতার পরিবারকে প্রদান করেনি তারা।
সালিশে থাকা মো. জাহাঙ্গীর আলম নামক একজন বলেন, আমি এই বিষয়টি থানার মাধ্যমে মীমাংসার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু ধর্ষিতা ওই প্রতিবন্ধী তরুণীর ফুফাত ভাই মো. মজিবর রহমানসহ ১৫-২০ জন মিলে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে গোড়াকান্দা গ্রামে ধর্ষিতা ওই প্রতিবন্ধী তরুণীর বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসায়। সালিশে ধর্ষককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে।
ধর্ষক মহসিন মিয়া (৫৫) জানান, ধর্ষণ করেছি, আমি অভিযোগ ও অপরাধও মাথা পেতে নিয়েছি। গ্রাম্য সালিশের রায় মেনে ৫ লাখ জরিমানাও দিয়েছি। অথচ যার কলংক হলো সেই ধর্ষিতার পরিবার পেলনা জরিমানার একটি টাকাও। সমুদয় টাকা সালিশকারী মাতব্বর ও এলাকার নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। এর অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।
ধর্ষিতার ভাই মো. ইয়াছিন জানান, সালিশি বৈঠকে ধর্ষককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অথচ আমরা জরিমানার কানাকড়িও পাইনি।
এ ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক বলেন, বিষয়টি সত্য হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে সালিশকারী মাতব্বরদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ ধর্ষণের ঘটনা গ্রাম্যসালিশি বৈঠকে আপস মীমাংসা অপরাধ।