মা বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য আমাদের করণীয়

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০১:১০ এএম, ৮ মে ২০১৮

মা বাবা
মা-বাবা ছোট শব্দ, কিন্তু এ দুটি শব্দের সাথে কত যে আদর, স্নেহ, ভালবাসা রয়েছে তা পৃথিবীর কোন মাপযন্ত্র দিয়ে নির্ণয় করা যাবে না। মা-বাবা কত না কষ্ট করেছেন, না খেয়ে থেকেছেন, অনেক সময় ভাল পোষাকও পরিধান করতে পারেন নি, কত না সময় বসে থাকতেন সন্তানের অপেক্ষায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছেন, তারাই বুঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন সেদিন থেকে মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল,তখন বুক কেঁপে উঠে, চোখ থেকে বৃষ্টির মত পানি ঝরে, কী শান্তনাই বা তাদেরকে দেয়া যায়! সেই মা বাবা যাদের চলে গিয়েছে তারা কি মা-বাবার জন্য কিছুই করবে না? এত কষ্ট করে আমাদের কে যে মা-বাবা লালন পালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা-বাবা জন্য কী ধরনের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট পৌছবে তা উল্লেখ করা হলোঃ
১। বেশী বেশী দু’আ করা
মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দু’আ করবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দু’আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু’আ করবো তাও শিক্ষা দিয়েছেন।
আল-কুরআনে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন-
وَٱخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِى صَغِيرًا
১। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। (সূরা বানী ইসরাঈল,আয়াতঃ ২৪)
رَبَّنَا ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ
২। হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। (সুরা ইবরাহীম,আয়াতঃ ৪১)
এছাড়া আলস্নাহ রাববুল আলামীন পিতা-মাতার জন্য দূ’আ করার বিশেষ নিয়ম শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেনঃ
رَّبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِىَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارًۢا
হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি যালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না। (সূরা নুহ,আয়াতঃ ২৮)
মা-বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। সদকায়ে জারিয়া করবে।মা বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম বা রোজা আদায় করবে।
হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মানুষ মারা যায় তখন তিন প্রকার আমল ব্যতীত তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। ১। সাদাকায়ে জারিয়া, ২। এমন ইলম যার দ্বারা উপকার সাধিত হয়, ৩। নেককার সন্তান যে তার জন্য দু’আ করতে থাকে। (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং- ৪০৭৭,ইসলামিল ফাঊন্ডেশন)
বিঃ দ্রঃ মূলত জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু’আ স্বরূপ।
২। দান-সাদকাহ করা, বিশেষ করে সাদাকায়ে জারিয়াহ প্রদান করাঃ
মা-বাবা বেচে থাকতে দান-সাদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেচে থাকলে আরো দান-সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে সন্তান দান-সদকাহ করতে পারে।
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَجُلاً، أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّيَ افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَلَمْ تُوصِ وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ أَفَلَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ ‏ “‏ نَعَمْ ‏”‏
আয়িশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার মা হঠাৎ করে মারা গেছেন এবং কোন ওয়াসিয়্যাত করতে পারেননি। আমার মনে হয়, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন তাহলে ওয়াসিয়্যাত করে যেতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদাকাহ করি তাহলে কি তিনি এর সাওয়াব পাবেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-২২১৬,হাদিস একাডেমি)
তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে সাদাকায়ে জারিয়া বা প্রবাহমান ও চলমান সাদাকা প্রদান করা। যেমন পানির কুপ খনন করা, (নলকুপ বসানো, দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরী করা, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা। ইত্যাদি।
৩। মা-বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করাঃ
মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোন মানতের সিয়াম বা রোজা কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম বা রোজা পালন করলে তাদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে।
হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَتَ مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُ
আয়িশাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সওমের বা রোজার কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ হতে সওম বা রোজা আদায় করবে। (সহীহ বুখারী,হাদিস নং-১৯৫২,তাওহীদ পাবলিকেশন)
অধিকাংশ আলেমগণ এ হাদীসটি শুধুমাত্র ওয়াজিব রোযা বা মানতের রোযার বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে নফল সিয়াম বা রোজা রাখার পক্ষে দলীল নাই।
৪। হজ্জ্ব বা উমরাহ করাঃ
মা-বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ্ব বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা উপকৃত হবে।
হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنْ ابْنِ عَبَّاس أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللهَ فَاللهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ
ইবনু আববাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমার আম্মা হাজ্জ্বের মান্নত করেছিলেন তবে তিনি হাজ্জ্ব আদায় না করেই ইন্তিকাল করেছেন। আমি কি তার পক্ষ হতে হাজ্জ্ব করতে পারি? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার পক্ষ হতে তুমি হাজ্জ্ব আদায় কর। তুমি এ ব্যাপারে কি মনে কর যদি তোমার আম্মার উপর ঋণ থাকত তা হলে কি তুমি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহ্‌র হকই সবচেয়ে বেশী আদায়যোগ্য। (সহীহ বুখারী,হাদিস নং-১৮৫২,তাওহীদ পাবলিকেশন)
তবে মা-বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হাজ্জ্ব বা ওমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হাজ্জ্ব-ওমরাহ করতে হবে।
৫। মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করাঃ
মা-বাবার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তার ছাওয়াব দ্বারা তারা উপকৃত হবে।
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ فِي سَوَادٍ وَيَبْرُكُ فِي سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِي سَوَادٍ فَأُتِيَ بِهِ لِيُضَحِّيَ بِهِ فَقَالَ لَهَا ‏”‏ يَا عَائِشَةُ هَلُمِّي الْمُدْيَةَ ‏”‏ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ اشْحَذِيهَا بِحَجَرٍ ‏ فَفَعَلَتْ ثُمَّ أَخَذَهَا وَأَخَذَ الْكَبْشَ فَأَضْجَعَهُ ثُمَّ ذَبَحَهُ ثُمَّ قَالَ ‏”‏ بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ ‏”‏ ثُمَّ ضَحَّى بِهِ
আয়িশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জন্য দু’টি শিং বিশিষ্ট দুম্বা আনতে আদেশ দেন যেটি কালোর মধ্যে চলাফেরা করতো (অর্থাৎ পায়ের গোড়া কালো ছিল), কালোর মধ্যে শুইতো (অর্থাৎ পেটের নিম্নাংশ কালো ছিল) এবং কালোর মধ্য দিয়ে দেখতো (অর্থাৎ চোখের চতুর্দিকে কালো ছিল)। সেটি আনা হলে তিনি আয়িশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কে বললেন, ছুরিটি নিয়ে এসো। এরপর বলেন, ওটা পাথরে ধার দাও। আমি ধার দিলাম। পরে তিনি সেটি নিলেন এবং দুম্বাটি ধরে শোয়ালেন। এরপর সেটা যবেহ করলেন এবং বললেনঃ
بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ
আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ, মুহাম্মাদ পরিবার ও তার উম্মাতের পক্ষ থেকে এটা কবুল করে নাও। এরপর এটা কুরবানী করেন। (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৪৯৩১,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
৬। মা-বাবার ওসিয়ত পূর্ণ করা
মা-বাবা শরীয়াহ সম্মত কোন ওসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব।
হাদিস শরিফে এসেছে-
عَنِ الشَّرِيدِ، ‏‏ أَنَّ أُمَّهُ، أَوْصَتْهُ أَنْ يُعْتِقَ، عَنْهَا رَقَبَةً مُؤْمِنَةً فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏:‏ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي أَوْصَتْ أَنْ أُعْتِقَ عَنْهَا رَقَبَةً مُؤْمِنَةً وَعِنْدِي جَارِيَةٌ سَوْدَاءُ نُوبِيَّةٌ فَذَكَرَ نَحْوَهُ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ ‏:‏ خَالِدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ أَرْسَلَهُ لَمْ يَذْكُرِ الشَّرِيدَ
শারীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তাঁর মাতা তাঁকে তাঁর (মায়ের) পক্ষ হতে একটি মু’মিন দাসী আযাদ করার জন্য ওসীয়ত করে যান। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হয়ে বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মাতা (তাঁর মৃত্যুর সময়) তাঁর পক্ষে একটি মু’মিন দাসী আযাদ করার জন্য ওসীয়ত করে গেছেন। এখন আমার কাছে হাবশের ‘নূবিয়্যা’ এলাকার একটি দাসী আছে। এরপর পূর্বোক্ত হাদীছের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। আবূ দাঊদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ খালিদ ইবন আবদিল্লাহ রাবী শারীদকে বাদ দিয়ে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। (সুনানু আবু দাউদ,হাদিস নং-৩২৬০,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
৭। মা-বাবার বন্ধুদের সম্মান করা
মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া,তাদেরকে হাদিয়া দেয়া।
হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَجُلاً، مِنَ الأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ وَأَعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ فَقَالَ ابْنُ دِينَارٍ فَقُلْنَا لَهُ أَصْلَحَكَ اللَّهُ إِنَّهُمُ الأَعْرَابُ وَإِنَّهُمْ يَرْضَوْنَ بِالْيَسِيرِ ‏.‏ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّ أَبَا هَذَا كَانَ وُدًّا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْوَلَدِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, মাক্কায় এক রাস্তায় আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর সাথে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হলো। আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে আরোহণ করতেন, সে গাধটি তাকে আরোহণের জন্য দিয়ে দিলেন। তিনি তার মাথার পাগড়ীটিও তাকে দান করলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাকে বললেন যে, আমরা তাকে বললাম, আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন। বেদুঈনরা তো অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। (এত দেয়ার প্রয়োজন কী ছিল?) তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, এ ব্যক্তির পিতা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকীর কাজ হচ্ছে তার পিতার বন্ধুর সঙ্গে সহমর্মিতার সম্পর্ক বজায় রাখা। (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৬৪০৭,হাদিস একাডেমি)
মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ مَا غِرْتُ عَلَى نِسَاءِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ عَلَى خَدِيجَةَ وَإِنِّي لَمْ أُدْرِكْهَا ‏.‏ قَالَتْ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا ذَبَحَ الشَّاةَ فَيَقُولُ ‏”‏ أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أَصْدِقَاءِ خَدِيجَةَ ‏”‏‏ قَالَتْ فَأَغْضَبْتُهُ يَوْمًا فَقُلْتُ خَدِيجَةَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنِّي قَدْ رُزِقْتُ حُبَّهَا
আয়িশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খাদীজা ছাড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের আর কাউকে ঈর্ষা করি নি, যদিও আমি তাঁকে পাই নি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেন, এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাঁকে রাগান্বিত করার জন্য বললাম, শুধু খাদিজা (খাদীজাকে এতই ভালবাসেন?) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তার ভালোবাসা আমার অন্তরে গেঁথে দেয়া হয়েছে। (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৬০৬০,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
৮। মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখা
সন্তান তার মা-বাবার আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ،فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ
যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালবাসে, সে যেন পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে। (সহীহ ইবন হিববান,হাদিস নং-৪৩২)
৯। ঋণ পরিশোধ করা
মা-বাবার কোন ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهِ حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ
আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তির রূহ তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যাবত না তা পরিশোধ করা হয়। (সুনান ইবন মাজাহ,হাদিস নং-২৪১৩,হাদিস বিডি)
ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতের যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় । হাদীসে আরো এসেছে,
مَادَخَلَ الْجَنَّةَحَتَّى يُقْضَى دَيْنُهُ
যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (নাসায়ী ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর ১৯/২৪৮; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/২৯)
১০। কাফফারা আদায় করা
মা-বাবার কোন শপথের কাফফারা,ভুলকৃত হত্যাসহ কোন কাফফারা বাকী থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে,
وَمَن قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَـًٔا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰٓ أَهْلِهِۦٓ إِلَّآ أَن يَصَّدَّقُوا۟
যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা)। ( সূরা আন-নিসা,আয়াতঃ ৯২)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ أَعْتَمَ رَجُلٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ فَوَجَدَ الصِّبْيَةَ قَدْ نَامُوا فَأَتَاهُ أَهْلُهُ بِطَعَامِهِ فَحَلَفَ لاَ يَأْكُلُ مِنْ أَجْلِ صِبْيَتِهِ ثُمَّ بَدَا لَهُ فَأَكَلَ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِهَا وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ ‏
বূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে গভীর রাত পর্যন্ত দেরী করে (ইশার সালাত আদায় করে)। এরপর তার পরিবারের কাছে গিয়ে দেখে যে, বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তার স্ত্রী তার খাবার নিয়ে এলে সে সন্তানদের কারণে কসম করলো যে, সে খাবে না। পরে তার ভাবান্তর ঘটলো এবং সে খেয়ে নিল। এরপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসে ও তাঁকে উক্ত ঘটনা বলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করে, পরে তার বিপরীতটিকে তা থেকে উত্তম মনে করে, সে যেন তা করে ফেলে এবং নিজের কসমের কাফফারা দেয়। (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং- ৪১২৫,ইসলামিক ফাঊন্ডেশন)
এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।
১১। ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ
মা-বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহ তা’আলা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ‏:‏ تُرْفَعُ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ مَوْتِهِ دَرَجَتُهُ‏.‏ فَيَقُولُ‏:‏ أَيْ رَبِّ، أَيُّ شَيْءٍ هَذِهِ‏؟‏ فَيُقَالُ‏:‏ وَلَدُكَ اسْتَغْفَرَ لَكَ‏
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোন বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে হে আমার রব, আমি তো এতো মর্যাদার আমল করিনি, কীভাবে এ আমল আসলো ? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো। (আল-আদাবুল মুফরাদ,হাদিস নং-৩৬)
মা-বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
عَن عُثْمَانَ،قَالَ : وَقَفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَبْرِرَجُلٍ وَهُوَيُدْفَنُ فَلَمَّافَرَغَ مِنْهُ قَالَ : اسْتَغْفِرُوالأَخِيكُمْ وَسَلُوااللَّهَ لَهُ بالثَّبَاتِ؛فَإِنَّهُ يُسْأَلُالآنَ
উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে। (মুসনাদুল বাজ্জার,হাদিস নং-৪৪৫ন)
তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেয়া, প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দো’আ করা।
১২। মান্নত পূরণ করা
মা-বাবা কোন মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
أَنَّ امْرَأَةً نَذَرَتْ أَنْ تَصُومَ شَهْرًافَمَاتَتْ فَأَتَى أَخُوهَاالنَّبِىَّ –صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ : صُمْ عَنْهَا.
কোন মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিল, কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করল। এরপর তার ভাই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলরেন, তার পক্ষ থেকে সিয়াম পালন কর। (সহীহ ইবন হিববান,হাদিস নং-২৮০)
১৩। মা-বাবার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা
মা-বাবা যেসব ভাল কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরী করা, মাদরাসা তৈরী করা, দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীসহ যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসাবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে।
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ يَسْتَحْمِلُهُ فَلَمْ يَجِدْ عِنْدَهُ مَا يَتَحَمَّلُهُ فَدَلَّهُ عَلَى آخَرَ فَحَمَلَهُ ‏.‏ فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ ‏ “‏ إِنَّ الدَّالَّ عَلَى الْخَيْرِ كَفَاعِلِهِ
আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একজন লোক এসে তার নিজের জন্য একটি বাহন চাইল। কিন্তু তাকে তিনি দেয়ার মতো কোন বাহন না পেয়ে তাকে অন্য এক লোকের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। সেই ব্যক্তি তাকে একটি বাহন দিল। সে এ ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললে তিনি বলেনঃ সৎকাজের পথপ্রদর্শক উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর সমতুল্য। (সুনান আত-তিরমীযি,হাদিস নং-২৬৭০,তাহকিক্বকৃত)
مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةًحَسَنَةًفَلَهُ أَجْرُهَاوَأَجْرُمَنْ عَمِلَ بِهَابَعْدَهُ مِنْ غَيْرِأَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ
যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদেও সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না। (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-২৩৯৮)
১৪। কবর যিয়ারত করা
সন্তান তার মা-বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা-বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ قَدْ كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِي زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ ‏
সুলাইমান ইবনু বুরাইদা (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারাত করতে নিষেধ করেছিলাম। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তার মায়ের কবর যিয়ারাত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারাত কর। কেননা, তা আখিরাতের কথাকে মনে করিয়ে দেয়। (সুনান আত-তিরমীযি,হাদিস নং-১০৫৪)
কবর যিয়ারত কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে করা যাবে না। কবর যিযারত করার সময় বলবে,
بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى الْمَقَابِرِ كَانَ قَائِلُهُمْ يَقُولُ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ
বুরাইদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে তারা যখন কবরস্থানে যেতেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের শিক্ষা দিতেনঃ ‘‘হে কবরবাসি মু’মিন ও মুসলিমগণ! তোমাদেরকে সালাম। আমরাও ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদেরও তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। (সুনান ইবন মাজাহ,হাদিস নং-১৫৪৭)
১৫। ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করা
মা-বাবা কারো সাথে কোন ভাল কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
وَلَا تَقْرَبُوا۟ مَالَ ٱلْيَتِيمِ إِلَّا بِٱلَّتِى هِىَ أَحْسَنُ حَتَّىٰ يَبْلُغَ أَشُدَّهُۥ ۚ وَأَوْفُوا۟ بِٱلْعَهْدِ ۖ إِنَّ ٱلْعَهْدَ كَانَ مَسْـُٔولًا
আর তোমরা ইয়াতীমের সম্পদের কাছে যেয়ো না সুন্দরতম পন্থা ছাড়া, যতক্ষণ না সে বয়সের পূর্ণতায় উপনীত হয়। আর অঙ্গীকার পূর্ণ কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ( সূরা বনী ইসরাঈল,আয়াতঃ ৩৪)
১৬। কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা
মা-বাবা বেচে থাকতে কোন গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়াহ সম্মতভাবে সংশোধন করে দিবে।
হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ‏
আবু হুরাইরাহ্ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না। ( সহীহ মুসলিম,হাদিস নং- ৬৬৯৭,হাদিস একাডেমি)
অল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মা বাবার জন্য আমলগুলো করার তাওফীক দিন। আমীন!

সূত্রঃ কুরআনের আলো।
লেখকঃ হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল। অনুবাদকঃ আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া। প্রকাশনায়ঃ ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)