ইয়াসিন সূরা নিয়মিত পাঠ করলে অভাব-অনটন দূর হয়

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৬:৪৯ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

সূরা ইয়াসিনসূরা ইয়াসীন (আরবি ভাষায়: سورة يس‎) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কুরআনের ৩৬ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৮৩টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ৫টি। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এক হাদিসে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন, এই সূরাকে কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলা হয়।
এই সূরা ইয়াসীন নামে প্রসিদ্ধ। এক হাদীসে এ সূরাকে “আয়ীমা” বলা হয়েছে এবং অপর এক হাদীসে পাওয়া যে, তওরাতে এ সূরাকে “মুয়িম্মাহ” বলে উল্লেখিত রয়েছে। এই সূরার পাঠকের নাম “শরীফ” বলে বর্ণিত আছে। আর বলা হয়েছে যে, কেয়ামতের দিন এর সুপারিশ “রবীয়া” গোত্র তুলনায় অধিকসংখ্যাক লোকের জন্য কবুল হবে। এছাড়া বিভিন্ন রেওয়ায়েতে এর নাম “মুদাফিয়াও”,”কাযিয়া” বলে উল্লেখ রয়েছে।

ইমাম গযযালী (রহঃ) এর মতে, এই সূরায় কেয়ামত ও হাশরের ব্যাপারে দীর্ঘ বর্ণনা থাকার কারণে একে কুরআনের হৃৎপিণ্ড বলা হয়েছে। সবকিছুর একটা হৃদপিণ্ড আছে, এখান থেকে হৃদপিন্ডের ধারনাটি আসে এবং সূরা ইয়াসীন কোরআনের হৃদপিণ্ড। আবার, “হৃদপিণ্ড” এর অর্থ অনেক পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনার ভিত্তিতে করা হয়েছ।

এটা কোরাআনের অপরিহার্য বিষয়বস্তুর প্রদর্শন করে, যেমন আল্লাহর সার্বভৌমত্ব; আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমতার উদাহরণস্বরূপ হিসেবে তাঁর সৃষ্টি, জান্নাত; বহু-ঈশ্বরবাদী এবং অবিশ্বাসীদের জন্য পুনরুত্থানের পরে তার চরম শাস্তি, এবং অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসীদের সংগ্রাম; এবং অন্যদের মধ্যে মুমিনরা যে সঠিক পথের উপর ছিল তা পুনরায় নিশ্চিত করা। সূরা ইয়াসীন তার প্রাণবস্ত এবং ছন্দযুক্ত আয়াতের সাথে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী পদ্ধতিতে কুরআনের বার্তা প্রদর্শন করে।

হাদীস শরীফে রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘সূরা ইয়াসিন কুরআনের হৃদয়।’যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের কল্যাণ লাভের জন্য পাঠ করবে তার মাগফিরাত হয়ে যায়। তোমরা তোমাদের মৃতদের জন্য এ সূরা তিলাওয়াত করো। (রুহুলমায়ানি, মাজহারি)

ইমাম গাজ্জালী (রহ:) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সূরা ইয়াসিনকে কুরআনের হৃদয় এ কারণে বলা হয়েছে যে, ‘এ সূরায় কেয়ামত ও হাশর-নশর বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা ও অলঙ্কারসহকারে বর্ণিত হয়েছে। পরকালে বিশ্বাস ঈমানের এমন একটি মূলনীতি, যার ওপর মানুষের সব আমল ও আচরণের বিশুদ্ধতা নির্ভরশীল। পরকালের ভয়ভীতি মানুষকে সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করে এবং অবৈধ বাসনা ও হারাম কাজ থেকে বিরত রাখে। তাই দেহের সুস্থতা যেমন অন্তরের সুস্থতার ওপর নির্ভরশীল তেমনি ঈমানের সুস্থতা পরকালের চিন্তার ওপর নির্ভরশীল (রুহুলমায়ানি)।

তিরমিজী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, সুরা ইয়াছিন একবার পাঠ করলে দশবার কোরআন খতম করার নেকী হয় এবং পাঠকের সব গুনাহ মাফ হয়। হাদীসে আরো বলা হয়েছে, রাতে সুরা ইয়াছিন পাঠ করলে নিস্পাপ অবস্থায় ঘুম থেকে উঠা যায় এবং পূর্বের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যে ব্যক্তি সুরা ইয়াছিন বেশী বেশী পড়ে থাকে কেয়ামতের দিন এই সুরাই তার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে। নবী করিম (সাঃ) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত সুরা ইয়াছিন পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে।

হজরত আবু যর (রা:) বলেন, আমি রাসূল সা:-এর কাছ থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন, মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসিন পাঠ করলে তার মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ হয়ে যায়। (মাজহারি)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রা: বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন অভাব-অনটনের সময় পাঠ করে তাহলে তার অভাব দূর হয়, সংসারে শান্তি ও রিজিকে বরকত লাভ হয়। (মাজহারি)

ইয়াহইয়া ইবনে কাসীর বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে (মাজহারি)। এছাড়াও সূরা ইয়াসিনের বহু ফজিলত হাদিসে বর্ণিত আছে, তাই আমাদের এই সূরাটি অর্থ সহ বুঝে পড়া ও আমল করা উচিত।

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৪ এপ্রিল

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)