গণমাধ্যম নিয়ে কিছু কথা

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৭:৩১ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | আপডেট: ০৫:৩০ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
---

গণমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। গণমাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের একটি সার্বিক চিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ইলেকট্রনিক ও মুদ্রণ মাধ্যমÑ এ দুই ধরনের গণমাধ্যম বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চালু আছে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বিগত নব্বই দশকের গোড়া থেকে আমাদের দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে পরিসর। একসময় ক্যাবল বিটিভি ও দু-একটি পত্রিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল গণমাধ্যম।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধানস্বীকৃত। এই পরিচিতি থাকার পরও অনেক সময় গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ আর কড়াকড়ির বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে হয়। মন খুলে, স্বাধীন ও নির্ভয়ে প্রকাশের পরিবেশ অনুপস্থিত থাকে। এর পরও গণমাধ্যমের থেমে নেই তার অসঙ্কোচ প্রকাশের পথচলা। যদিও বিভিন্ন সময় অদৃশ্য কোনো কালো পর্দায় ঢাকা পড়ে গণমাধ্যমের খোলা জানালা।

এক দিকে বেশ কিছু গণমাধ্যম তাদের নিজস্ব ধ্যানধারণা নিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলে অন্য কোনো পক্ষকে। নিরপেক্ষ ও সত্য প্রকাশে দৃঢ় থাকতে পারে না। অথচ একটি গণমাধ্যমের এটিই প্রাণ। আবার বেশ কিছু গণমাধ্যমে চোখ পড়লেই বোঝা যায়, কে কার কিংবা কে কোন মানসিকতাসম্পন্ন। যেটি হওয়া মোটেই উচিত নয়।

অন্য দিকে অনেক গণমাধ্যম চেষ্টা করে তার সত্যটুকু প্রকাশ করতে। সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন অসঙ্গতি, সমস্যা, পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এরা ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশ করে পাঠকের সামনে খোলাসা করে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়কে। জীবনধর্মী ও বাস্তবভিত্তিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেয়, যে কারণে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। সতর্ক হন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোর অনেকগুলোর মালিক ও পৃষ্ঠপোষক রয়েছেন সমাজের প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। অনেক সময় তাদের মতামত নিতে গিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে সেসব গণমাধ্যমকে বেশ কিছু কাটছাঁট করতে হয়। সংবাদ ও বিভিন্ন টকশো বা বিশ্লেষণধর্মী লেখা প্রকাশ করতে হয় ভেবেচিন্তে। এটি যেকোনো কারণেও হতে পারে। কোনো ছুতোয় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের মতো কোনো উদ্যোগ না নেয়াই উচিত। আর গণমাধ্যম ও তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেÑ এটিই সবার প্রত্যাশা। দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আমাদের দেশের গণমাধ্যমকর্মী ও সাংবাদিক সমাজে বিভাজন দেখা যায়। বিষয়টি অবাধ তথ্য সরবরাহের অন্তরায়। গণমাধ্যম ও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে পাঠক ও দর্শকদের আস্থা অর্জন করা। সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য প্রকাশে দৃঢ় থাকা উচিত। সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যা আরো শক্তিশালী হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ুণœ করার যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠিন ঐক্য থাকতে হবে। মতভিন্নতাকে দূরে ঠেলে এগিয়ে যেতে হবে। পৃষ্ঠপোষকতা ও বিভিন্ন কারণে যেসব গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলো আবার চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। মাধ্যম সমাজের দর্পণ। ঘটনার নির্যাস হুবহু তুলে ধরে মানুষের মধ্যে অবাধ তথ্য সরবরাহ করা গণমাধ্যমের দায়িত্ব। কোনো ধরনের ভয়ভীতি ও চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে প্রকৃত খবরটি প্রকাশ করা জরুরি। সমাজ ও দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করতে পারে গণমাধ্যমগুলো।

আমাদের গণমাধ্যম তার দায়িত্ব পালনে অটল থাকবে, ঐক্যবদ্ধ থাকবে সাংবাদিক সমাজ, বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন রোধে ভূমিকা রাখবেÑ এটিই কামনা করি। কোনো কারণে গণমাধ্যমের চলার পথ রুদ্ধ হোক, খর্ব হোক স্বাধীনতা এটি আমরা চাই না। আমরা চাই, বন্ধ থাকা সব গণমাধ্যম খুলে দেয়া হোক। নির্ভয়ে তার দায়িত্ব পালন করুক সব সংবাদকর্মী। আস্থা অর্জন করুক সব গণমাধ্যম।(লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক)

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)