পাথরঘাটা বৈরাগী বাড়ি মন্দিরে প্রতিমার মুকুটে কালেমা লেখা! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ
বরগুনার পাথরঘাটা পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বৈরাগী বাড়ি মন্দিরের প্রতিমা দুর্গার মাথার মুকুটে আরবিতে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” লেখা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার দুপুরে প্রতিমা বিসর্জনের সময় বিষয়টি একজনে দেখতে পেয়ে ছবি ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করলে মুহূর্তের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ছবিতে দেখা যায় দুর্গার মাথার মুকুট এর পিছনের অংশে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের একটি বইয়ের মলাট দিয়ে নকশা তৈরি করে প্রতিমার মুকুটে হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। যাতে আরবি অক্ষর এ বড় বড় করে লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”।
এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে নেটিজেনরা নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এতে মামুন আহমেদ নামে একজন মন্তব্য করেছেন
“মুসুলমান ও হিন্দুদের মধ্য যে সম্প্রিতি সেটা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্যই এটা তারা ইচ্ছে করে করছে,এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না…..”.
কাকন মোল্লা লিখেছেন “আমরা সকলে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহ-অবস্থানে বসবাস করে আসছি । আমরা কখনোই হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন কাজে বা কাউকে এবং তাদের কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কোন প্রকার বৈরিতা প্রকাশ করি নাই।”
তিনি আরো লিখেছেন, আমাদের হিন্দু-মুসলিম সহ অবস্থান বজায় রাখার জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।”
মাসুম বিল্লাহ মন্তব্য করেছে “অবশ্যই এদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। নইলে মুসলমান নিজ হাতেই তাদের বিচার করবে কিন্তু।”
এরকম অসংখ্য মন্তব্য ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে বড় ধরনের সহিংসতার ও আসংখা করছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাথরঘাটা পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিটুল আমাদের সময়কে জানান, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা কোন তৃতীয় পক্ষ ব্যক্তি বা কোনো মুসলিম ঘটায়নি। বরং যারা ওই মন্দিরের দায়িত্বরত সভাপতি-সম্পাদক রয়েছেন এর দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে। কেননা পাথরঘাটা পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই মন্দিরটি অবস্থিত। এখানে বহিরাগত কোন লোক ঢুকে এমন ঘটনা ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই।
পূজা পরিষদের সভাপতি অরুন কর্মকার জানান, মা দুর্গার মুকুটে ইসলাম ধর্মের কালিমা দিয়ে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে। অন্য ধর্মকে অবমাননা করা সব ধর্মেই নিষিদ্ধ। আমি পূজা পরিষদের সকল সদস্যদের কে এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। এমনকি আজান ও নামাজের সময় যাতে মুসলমানদের ইবাদতের বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য মাইক বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলাম।
অরুণ কর্মকার আরো জানান, কোন ধর্মকে অবমাননা করার পক্ষে আমি নই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে অপরাধীকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে আমরা সহায়তা করব। যাতে করে মুসলমানদের সাথে আমাদের সাথে সম্প্রীতি বিঘ্ন না ঘটে।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন জানান, ইতিমধ্যেই প্রতিমা বিসর্জন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। শহরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান বিষয়টি ইতিমধ্যে আমি অবগত হয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।