পাথরঘাটায় প্রভাবশালীদের দখলে খাল, প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে

এ এস এম জসিম
এ এস এম জসিম, বার্তা সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৭ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | আপডেট: ০৪:৪৬ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

পাথরঘাটায় প্রভাবশালীদের দখলে খাল, প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে যৌবনকালে উপকূলীয় পাথরঘাটায় নদী-খাল নিবারণ করতো লাখো মানুষের তৃষ্ণা ও জীবন-জীবিকা। এ নদীর সুখ-দুঃখের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন তীরের হাজারো পরিবারের সদস্যরা। একসময় নদী-খালের যৌবন আশপাশের বসতিদের ছিল সুখের ছোয়া, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির শিহরণ। এখন অনেকটাই মরতে বসেছে বরগুনার পাথরঘাটার ছোট ছোট খাল। সেইসঙ্গে মারছে তার ওপর ভর করা আশপাশের বসতি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ। কিছু খাল কাটা শুরু হলেও খননকৃত মাটি খালের পাশে রাখার কারণে বৃস্টির মৌসুমে পানিতে ধৃয়ে আবার পূর্বের অবস্থায় রূপান্তরিত হবে বিধায় খাল কাটার সুবিধা থেকে জনগণ বঞ্চিত হবে।

পূর্বে বিষখালী-পশ্চিমে বলেশ্বর নদী আর দক্ষিণে বিস্তৃত বঙ্গোপসাগর। চারদিকে জলরাশি মাঝখানে পাথরঘাটা উপজেলা। এতো পানি থাকা সত্ত্বেও উপজেলার অধিকাংশ খাল ও নদী নাব্যতা সংকটে পড়েছে। নদী ও খালের বুক চিরে বসত ঘর, বেড়িবাঁধ দিয়ে মৎস্যচাষ আর দখল করে পাকা ঘরবাড়ি করা নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। স্থানীয় প্রভাবশালী এবং তাদের ছত্রছায়ায় গডফাদাররা অহরহ দখল করছে। প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি দেখা যায় না। এলাকার কয়েকটি খাল এরই মধ্যে মারা গেছে। কয়েকটি খাল অস্তিত্ব হারানোর পাশাপাশি মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তলদেশে পানির উচ্চতা ক্রমে বাড়ছে। এমন সময় সুন্দরবনের কোলঘেষা বরগুনার পাথরঘাটার বিভিন্ন ছোট ছোট খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানকার কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী ভূমিদস্যু। তাদের ছোবলে ভরাট হয়ে যাওয়া খাল অবৈধ দখল হচ্ছে।

পাথরঘাটায় খাল দখল ১২ নং ঘুটাবাছ মৌজার ৫০৫ নং দাগ ও ৩৩৯৬ নং দাগের ৩৩০০ ফুট লম্বা এবং ১৫২ ফুট প্রস্থের এ পাথরঘাটার খালটি নকশায় থাকলেও বিলুপ্তির পথে। অনেক পুকুরেও পানি ঢুকতো এই খালটি দিয়ে। কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী ভূমিদস্যু দখল করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক কাজে অবৈধ ভাবে ব্যবহার করছে।

স্থানীয়রা জানান, খালগুলো দ্রুত উদ্ধার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা না হলে একদিন পৌরবাসী, কৃষি ও পরিবেশ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কামারহাট বাজার, চরদুয়ানী বাজার, কালীবাড়ি, কাঠালতলী, কালমেঘা, কাকচিড়া, পাথরঘাটা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় খাল অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। এসব এলাকার খালে দখল করে গড়ে উঠেছে পাকা ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কালীপুর মৌজার ২২২২ ও ৩৮৭৩ দাগের ১১ একর ৩৬ শতাংশ জমি নিয়ে এই খালটি, যার প্রস্থ ছিল ১২০ ফিট। বর্তমানে দখলদাররা ভবন ও বাবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় খালটিতে প্রস্থ রয়েছে অর্ধেকেরও কম। খালটি আটকিয়ে কেউ কেউ করছে মাছ চাষ। কালমেঘা ও কাঠালতলী ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক এই খালের পানি ব্যবহার করছে। এই এলাকার অসংখ্য পানের বরজ, রবি শস্যের কাজে ব্যবহার হয় খালের পানি।

উপকূলীয় পাথরঘাটা উপজেলায় ক্রমান্বয় পানির স্রোত না থাকা, ভরাট হওয়া, অবাধে ভরাট করে দখল করায় দেখা দিয়েছে খালের নাব্যতা সংকট, এ কারণে এসব খাল মরতে বসেছে, পাশাপাশি মারছে পরিবেশও। খালের নাব্যতা সংকট ও ভরাট হওয়ায় পাথরঘাটা কৃষিতে প্রভাব পড়ছে। তবে বেশিরভাগ দখলদাররা এলাকায় থাকেন না। যাদের সঙ্গে দেখা হয় কেউ কেউ দখলের কথা স্বীকার করলেও আবার কেউ কেউ রেকর্ডীয় জমিতে ঘর তুলেছেন বলে দাবি করেন।

পাথরঘাটা ভূমি কার্যালয়ের তথ্যে জানা যায়, উপজেলায় সবশেষ এস.এ রেকর্ড অনুযায়ী সরকারি খাল-বিল ও জলাশয় রয়েছে ৩০৭টি। ২০১৭ সালে জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী সংখ্যা হিসেবে ৩০৭টি খাল থাকলেও বাস্তবতায় নেই। উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার বলেন, প্রভাবশালীদের হাতে দখল হওয়ায় ইতোমধ্যেই নাব্যতা সংকটে পড়েছে। খালগুলো দ্রুত উদ্ধার করা না হলে একদিন কৃষি ও পরিবেশ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংকল্প ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক মির্জা এস.আই খালেদ বলেন, পাথরঘাটা কৃষিনির্ভর এলাকা, এছাড়া প্রতি বছর আলুর জোগান দিচ্ছে এখানকার আলু চাষিরা। নাব্যতা সংকটের কারণে কেবল কৃষিতেই প্রভাব পড়বেনা, পড়বে পরিবেশেও। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)