কবি আল মাহমুদ আর নেই
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি, সোনালী কাবিনখ্যাত আল মাহমুদ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা ৫ মিনিটে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ৮২ বছর বয়সী আল মাহমুদ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত শনিবার সন্ধ্যার পর তাকে এ হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রথমে সিসিইউ পরে আইসিইউতে রেখে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। গতকাল রাত ১০টায় আল মাহমুদকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
কবি আল মাহমুদের মৃত্যুতে সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আল মাহমুদ ত্রিশোত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম কবি। কবিতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং শিশুসাহিত্য রচনা করেও তিনি খ্যাতির শিখর স্পর্শ করেছেন। ৫০-এর দশকের তার সমসাময়িক কবি-বন্ধুরা যখন একে একে মৃত্যুবরণ করছেন তখন কবি আল মাহমুদ বার্ধক্যজনিত নানান অসুখে থেকেছেন গৃহবন্দী। মাঝে মধ্যে গিয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। দীর্ঘদিন ধরে চোখে ভালো দেখতেন না, কানেও কম শুনতেন। তবু বিশেষ সংখ্যার জন্য তিনি অন্যের সহযোগিতা নিয়ে মুখে মুখে কবিতা রচনা করতেন। কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। ১৯৬৮ সালে ‘লোক লোকান্তর’ ও ‘কালের কলস’-এর জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে পান একুশে পদক।
আল মাহমুদ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাইস্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে পড়ালেখা করেন। সে সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু। তিনি মধ্যযুগীয় প্রণয়োপাখ্যান, বৈষ্ণব পদাবলি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখের সাহিত্য পাঠ করেন।
১৮ বছর বয়সে তার কবিতা প্রকাশিত হয়। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকা এবং কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ, কৃত্তিবাস ও বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে তিনি সুপরিচিত হন।
তার কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৬৯) কাব্যগ্রন্থগুলো তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস কবি ও কোলাহল।
১৯৫৪ সালে আল মাহমুদ ঢাকা আসেন। তখন তিনি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ সাল আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলার চাকরি ছেড়ে দিলে আল মাহমুদ সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধের পরে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সম্পাদক থাকাকালে সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এক বছরের জন্য কারাবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখায় মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোটগল্প গ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
আল মাহমুদ ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দা নাদিরা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৬ ফেব্রুয়ারি