কুয়াকাটায় সরকারি জমি উদ্ধারে গিয়ে ক্যাডারদের তোপের মুখে প্রশাসন
পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় অবৈধ দখল হওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৫০ শতাংশ জমি উদ্ধারে গিয়ে পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মহিববুর রহমান মুহিবের ক্যাডার বাহিনীর তোপের মুখে পড়েছে সেখানকার ভূমি প্রশাসন।
দিনে জমি পরিমাপের সময় অশ্লীল বাক্যবাণ এবং বাধা দেয়ার চেষ্টা ছাড়াও রাতে হানা দেয়া হয় মহিপুর ভূমি অফিসে। সেখানে কর্মরত ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি তাকে অফিস করতে নিষেধ এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ক্যাডাররা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কলাপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপ দাস বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন বলে জানান। এমপি মুহিব অবশ্য এসব ঘটনা স্বীকার করেননি। ভূমি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত বা হুমকি দেয়ার কোনো ঘটনা জানা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের মূল পয়েন্টে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ৪৭ শতাংশ জমি গত সপ্তাহে দখল করে নেন প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়া মহিববুর রহমান। নিজের রেকর্ডীয় সম্পত্তি দাবি করে ওই জমি দখলে নেন তিনি। দখলের এ প্রক্রিয়া চলাকালে ভাঙা হয় বেশ কয়েকটি দোকান ও প্রতিষ্ঠান। দোকান ও প্রতিষ্ঠান ভেঙে জমি দখলের সঙ্গে সঙ্গে এর চারপাশের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। এমপি মুহিবের দাবি, ‘বৈধ কাগজপত্র মূলে তার মালিকানায় থাকা ৮ শতাংশ জমির দখল নিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে সরকারি কোনো জমি দখল করা হয়নি।’ পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘১৯৬৮ সালে এ জমির মালিকানা পেয়েছে পাউবো।
এমপি সাহেব কি করে মালিক হলেন তা পরিষ্কার নয়। সর্বশেষ মাঠ জরিপে ৮ শতাংশ জমি এমপি সাহেবের নামে রেকর্ড হলে পাউবোর পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জমির দখলে যাওয়ার চেষ্টা করলে আদালতে আবারও অভিযোগ দেয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি অভিযোগের বিষয়ে আদালতের রায় দেয়ার কথা। তার আগেই বিদ্যমান সব স্থাপনা ভেঙে জমি দখলে নেন তিনি। এক্ষেত্রে দখলে নেয়া হয় ৪৭ শতাংশ জমি। বিষয়টি ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
এমপি মুহিব কর্তৃক এভাবে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। উপর মহল থেকে নির্দেশ আসে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সরকারি জমি দখলমুক্ত করার। সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের নির্দেশে শনিবার কলাপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপ দাস এবং মহিপুর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা (তহসিলদার) রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় ভূমি অফিসের একটি দল কুয়াকাটা গিয়ে বেদখল হওয়া জমিতে নির্মিত সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে পরিমাপ করে। দেয়াল ভাঙার উদ্যোগ নেয়া হলেও এমপি মুহিবের পক্ষে ৬০-৭০ জনের বাধার মুখে ফিরে আসেন তারা।
এ সময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন তারা। দিনের এ ঘটনার পর রাত ৯টা নাগাদ এমপির প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত শাকিল আহম্মেদের নেতৃত্বে অর্ধশত ক্যাডার গিয়ে হানা দেয় মহিপুর ভূমি অফিসে। সেখানে তখন কাজ করছিলেন ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, তারা ভূমি অফিসে ঢুকে এমপি সাহেবের জমিতে যাওয়ার অপরাধে গালাগাল ও ভূমি কর্মকর্তা রফিকুলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। তাকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় তারা। মহিপুর বা কলাপাড়ায় তাকে আর দেখা গেলে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার রাতে অর্ধশতাধিক লোক আমার অফিসে ঢুকে কেন ওই জমিতে গিয়েছি তা জানতে চায়।
পরে আমি বা আমার দফতরের কোনো লোকজন ওই জমিতে গেলে পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তারা আমাকে অফিসে না আসা এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।’ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপ দাস বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম তার দফতরে কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। তিনি আমাকে সব জানানোর পর আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি।’ পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুনুর রশিদ বলেন, ‘পুরো বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। বিষয়টি সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।’ ভূমি অফিসে হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া প্রশ্নে নাম আসা এমপি মুহিবের প্রজেক্ট ম্যানেজার শাকিল আহম্মেদ বলেন, ‘শনিবার দুপুরে আমাদের এমপি সাহেবের জমিতে কিছু লোকজন দেখে সেখানে গেলে তারা জানায় যে জমিতে এমপি সাহেবের করা দেয়াল ভাঙার বিষয়ে মাপজোক করছেন।
আমি কিছু বলতে গেলে তারা হুমকি দেয়। প্রথমে ভেবেছিলাম যে তারা পটুয়াখালী থেকে এসেছে। পরে জানতে পারি তারা কলাপাড়া মহিপুরের লোক। এমপি সাহেবের জমির দেয়াল ভাঙবে এটা মানা যায়?’ রাতে লোকজন নিয়ে মহিপুর ভূমি অফিসে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে অবশ্য শাকিল অস্বীকার করেন। ভূমি অফিসের লোকজনকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে এমপি মহিববুর রহমান বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনার কথা আমার জানা নেই। তাছাড়া আমার কোনো লোকজনও সেখানে যায়নি। এ সবই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।’(তথ্য সূত্রঃ যুগান্তর)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১২ ফেব্রুয়ারি