বিষখালী নদী তীরের মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়, হুমকিতে ভেরি বাঁধ

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৮:৫৭ পিএম, ১৬ জানুয়ারী ২০১৯ | আপডেট: ০৯:৩৫ পিএম, ১৬ জানুয়ারী ২০১৯

বিষখালী নদী তীরের মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়, হুমকিতে ভেরি বাঁধ
প্রায় তিন যুগ ধরে বিষখালী নদীর দুই তীর জুড়ে চলছে অব্যাহত ভাঙন। সেই ভাঙন কবলিত স্থানগুলো থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে বেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রলারে করে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে মাটি খেকোর দল।

মাটি খেকোরদল নির্বিঘ্নে নদীর পাড়ের মাটি কেটে নেওয়ার ফলে নদী ভাঙন আরো তীব্র হয়ে উঠছে। এদিকে নদী তীরের মাটি কেটে নেওয়ায় হুমকীর মুখে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গুলো।

জানা গেছে, বরগুনার বামনার উপজেলার বিষখালী নদীর তীরবর্তী অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়েই চলছে এক দিকে ভাঙন আর অন্য দিকে বেকু মেশিন ও মাটিকাটা শ্রমিকদের দল বেঁধে মাটি কাটার মহোৎসব। এই মাটি কেটে নিচ্ছে ইট ভাটা মালিক চক্র।   এই চক্র কখনো দিনের আলোয় আবার কখনো রাতের আঁধারে চালায় নদী তীরের মাটি কেটে নেওয়ার কাজ। তবুও প্রশাসন যেন নির্বিকার।

বামনা উপজেলার প্রায় ১২টি ইট ভাটা রয়েছে। এই ইট ভাটাগুলোর ইট তৈরিতে প্রতিদিন কাচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট মাটি। আর এই মাটির সবটুকুই  যোগান দিচ্ছে বিষখালী নদী তীরের কাঁদামাটি।

প্রতিদিন রাত শেষ হতে না হতেই বিষখালীর দুই তীর জুড়ে চোখে পড়ে সারি সারি ট্রলার আর শত শত মাটি কাটার শ্রমিকদের। কখনো কখনো দ্রুত ও অধিক মাটি কাটার জন্য এই বাটা মালিকরা ব্যবহার করে মাটি কাটার বেকু মেশিন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বামনা উপজেলার চেঁচান, খোলপটুয়া, রামনা, দক্ষিন রামনা ও চলাভাঙ্গার বিভিন্ন এলাকাসহ নদী তীরবর্তী প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিষখালী নদীর তীব্র ভাঙন অব্যহত রয়েছে। এতে অন্তত ১২টি গ্রামের আবাদি জমি বিলনি হয়ে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে বামনার বিস্তীর্ণ জনপদ বিষখালীর নদীর অব্যহত ভাঙনে বিলীন হলেও শুধুমাত্র রঞ্চঘাট এলাকা ছারা ভাঙনরোধের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমন বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে এক শ্রেণীর ইট ভাটা  মালিকরা শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে নদী তীরের মাটি কেটে নিচ্ছে। ট্রলার থামিয়ে একদল শ্রমিক ভাঙন কবলিত এলাকার মাটি নির্বিঘ্নে কেটে ট্রলারে ভরে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

নদী তীরের মাটি কেনা বেচায় এখানে গড়ে উঠছে একটি বিরাট চক্র। এই চক্র নদী তীরের মাটি ইটবাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। এর পর বাটা মালিকরা তাদের ইচ্ছে মতোন নদী তীর থেকে শুরু করে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ পর্যন্ত কেটে নেয় মাটি। উপজেলার চলাভাংগা এলাকায় দেখা গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোল ঘেসে তারা মাটি কেটে নিয়েছে। সেখানে বিষখালী নদীর তীর বলতে বুঝায় এখন সেই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধকেই।

খোলপটুয়া  গ্রামের মাধব চন্দ্র রায় আলী  জানান,  ভাঙনের অতি কাছ থেকে এক শ্রেণীর লোক নদীর মাটি কেটে নেওয়ায় নদীর পাড় আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় মাটি খেকোর দল যেন বেশী তাণ্ডব শুরু করেছে।

স্থানীয়রা জানান, গত ঘূর্ণিঝড় সিডরের জালোচ্ছ্বাসে উপজেলার সকল বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও বিষখালী নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়।   অথচ সেই বাঁধের অতি কাছ থেকে এক শ্রেণির লোক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এই মাটি বামনা উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটাসহ পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া,কাঠালিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ নাকরার শর্তে ইটভাটার সাথে সম্পৃক্ত এক কর্মচারী বলেন, পত্রিকায় লিখলে সরকারী আমলাদের ভাতার পরিমানটা বেড়ে যায় কিন্তু আমাদের কর্মকান্ড বন্ধ হয়না।   এই কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ইটভাটার মালিকরা মসোহারা দিয়ে থাকে। শুধু মধ্য থেকে খরচের পরিমানটা বেড়ে যায়। ভাটা মালিকেদের কিছুই হয়না।

বরগুনা জেলার  পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মো. আবু হানিফ বলেন, নদীর তীরের মাটি কাটা অবৈধ। মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে কেউ এর আগে জানায়নি। সরেজমিনে গিয়ে মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা বলেন, গত ৫০ বছরে বিষখালী নদী ভাঙনে বামনার বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র চেঁচান থেকে বামনা লঞ্চঘাট পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটার নদী ভাঙ্গন রোধে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এখনো বিষখালীর অনেকাংশ জুড়ে ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। অথচ শুনেছি নদীর পাড় থেকে  কে বা কাহারা ইটবাটার জন্য মাটি কেটে নিচ্ছে। এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন না হলে নদী ভাঙ্গন আরো ত্বরান্নিত হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি বলেন, নদী তীরের মাটি কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমি এ উপজেলায় নবাগত। এই মাটি কাটার বিষয়ে এখনই আপনার কাছ থেকে শুনলাম। আমি এ অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধের জন্য আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহন করবো।

সুত্রঃ কালেরকন্ঠ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)