বরগুনা-২: ত্রিমূখী লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি
বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) উপজেলা নিয়ে এ আসন এবার লড়াই হবে ত্রিমূখী। এরা প্রত্যেকেই হেভিওয়েট প্রার্থী হওয়ায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমনটাই দাবি করছেন সাধারণ ভোটাররা। আওয়ামী লীগ থেকে লড়ছেন সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন, বিএনপি থেকে সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন সাবেক দুইবার সাংসদ গোলাম সরোয়ার হিরু।
১১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হলে আ.লীগ ও ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা মাঠ পর্যায়ে সভা সমাবেশ করলেও বিএনপি প্রার্থী এখনো মাঠে দেখা যায়নি। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা পোষ্টার ও লিফলেটের প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।
এই আসনটি বিএনপির ঘাটি হিসেবেই পরিচিত। বিএনপির সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম মনি একজন ব্যবসায়ী থেকে ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৪র্থ সংসদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ৫ম সংসদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম কবিরকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৬ষ্ঠ সংসদে ১৯৯৬ সালে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী গোলাম সরোয়ার হিরুর সাথে বিএনপির টিকিটে নির্বাচন করে মাত্র ১৩৪০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। আবার ২০০১ সালে ৮ম সংসদে বিএনপি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এর পর তত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি নানা দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে পরেন। অুনপস্থিত থাকেন নির্বাচনী এলাকায় একটানা প্রায় ২ যুগ।
আওয়ামীলীগ থেকে বর্তমান সংসদ (১০ম সংসদ) সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনকে মনোনয়ন দিয়েছে। ২০১৩ সালের ২৬ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় গোলাম সবুর টুলু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে উপ-নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন। এর পর তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এক সময় তিনি ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। পুনরায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শওকত হাচানুর রহমান রিমন আ.লীগের যোগ্য প্রার্থী বিবেচিত হয়ে মনোনয়ন দেন।
গোলাম সরোয়ার হিরু প্রার্থী হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন থেকে। তিনি স্বতন্ত্র, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন থেকে নির্বাচন করে এলাকায় ক্যারিশমা দেখান। তিনিও ৫ বার সংসদ সদস্য পদে লড়ে তিন বার নির্বাচিত হন। প্রথম বার ১৯৯১ সাল ৫ম সংসদে স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে লড়ে পরাজিত হন। দ্বিতীয় বার ১৯৯৬ সালে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিল বিএনপির নুরুল ইসলাম মনি। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারীর (৬ষ্ঠ সংসদ) নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বল্প সময়ের জন্য। ৮ম সংসদে ২০০১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন বিএনপির নুরুল ইসলাম মনির সাথে। ২০১৩ সালের উপনির্বাচনে তিনি ইসলামী আন্দোলন থেকে হাতপাখা প্রতীকে প্রতিন্ধিতা করে পরাজিত হন। এবছর আবার তিনি ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। চরমোনাই পীর সাহেবের বিরাট সংখ্যক অনুসারী তার জয়ের প্রধান উৎস বলে মনে করা হয়। তিনি একসময় ছিলেন কালমেঘা পরিষদ চেয়ারম্যান। ১৯৯০ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কিন্তু পরিষদের অনাস্থার কারনে তিনি পদ ছাড়তে বাধ্য হন।
সব মিলিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত আ.লীগ ও ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থী মাঠে জোড়েসোরে নেমেছেন। বিএনপির প্রার্থী এখন পর্যন্ত তৃণমুলে না আসায় বিএনপির নেতাকর্মীরাই সভা-সমাবেশ ছাড়াই প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের ধারণা, এবার তিনজনই হেভিওয়েট প্রার্থী হওযয়ায় লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৪ ডিসেম্বর