পাথরঘাটায় পছন্দের প্রার্থী না পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগে যোগ দিলেন
পছন্দের প্রার্থী না পেয়ে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা শাখা বিএনপির নেতাকর্মীরা দলে দলে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন বলে জানা গেছে। বিএনপি ত্যাগকরা নেতাকর্মীদের মতে, গত তিন দিনে উপজেলার অন্তত এক হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-২ আসনে (পাথরঘাটা-বামনা ও বেতাগী) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী করা হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি ছিল, ওই আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম মনিকে যেন এবারও মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা না করায় স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মী নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনে নেমেছেন। তারা ওই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমনকে সমর্থন দিয়েছেন।
বরগুনা-২ আসনের ভোট
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরগুনা-২ আসনে তিনটি উপজেলার মধ্যে পাথরঘাটায় ভোটের সংখ্যা বেশি। এ আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে নুরুল ইসলাম মনি তিনবার নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় ওই আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রায়াত গোলাম সবুর টুলু চমক দেখিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর উপনির্বচনে ওই আসনে নৌকার হাল ধরেন শওকত হাসানুর রহমান রিমন।
আওয়ামী লীগে যোগদান
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের শতাধিক কর্মী নিয়ে বিএনপি নেতা মো. শাহ আলম পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপনের কাছে এবং কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন পল্টুর নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, এভাবে গত তিন দিনে অন্তত এক হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তারা এখন নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় কাজ করছেন।
বেশি ভোটের যার দিকে
বরগুনা-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৭ জন। এর মধ্যে পাথরঘাটায় ১ লাখ ২০ হাজার ৭১৪ ভোট। এই ভোটের সিংহভাগই এলাকায় সংসদ সদস্য রাখার জন্য দলমত নির্বিশেষে এলাকার প্রার্থীকে ভোট দেন। খন্দকার মাহবুব হোসেন বামনা উপজেলার লোক বলে তাকে এখানকার মানুষ ভোট দেকে না বলে মনে করেন পাথরঘাটার অনেক ভোটার। তাছাড়া গত ৫ বছরে আওয়ামী লীগ দক্ষিণাঞ্চরে যে উন্নয়ন করেছে তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকায় নৌকা মার্কার ভোট বেড়েছে।
নেতাদের বক্তব্য
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সৈয়দ রিপন জানান, ‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপির রাজনীতি করেছি, তবে বর্তমানে এই দলের বরগুনায় এখন নেতাশূন্য। মনে করেছিলাম, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা নুরুল ইসলাম মনিকে আবার আমাদের মাঝে ফিরে পাবো। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিতে খন্দকার মাহবুব সাহেব এ আসনে জনসমর্থনের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছেন। তাকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে বিএনপির নিশ্চিত আসনটি হারিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।’
পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, ‘পাথরঘাটায় বিএনপি থেকে যদি নুরুল ইসলাম মনিকে ধানের শীষে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হতো তাহলে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো। এখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমাদের নৌকা মার্কার বিজয় সহজভাবে অর্জন করতে পারব। তাছাড়া নুরুল ইসলামপন্থী বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরা আমাদের সমর্থন জানিয়ে নৌকা মার্কার নির্বাচনে নেমে পড়েছেন।’
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১১ ডিসেম্বর