বরগুনা-২ ‘রাজাকারের সন্তান’ ইস্যুতে তোলপাড়
বরগুনা-২ (পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ফরম জমা দিয়েছেন ৩৪ জন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক নেতা মনোনয়ন চেয়েছেন এই আসনে। সর্বোচ্চ ৫২ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন এ জেলারই অপর আসনে (বরগুনা–১)। এসব নিয়ে আলোচনার মধ্যে বরগুনা–২ আসনে হঠাৎ তোলপাড় শুরু হয়েছে নতুন একটি ইস্যুতে, ‘রাজাকারের সন্তান’। গত বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন–প্রত্যাশীদের ‘সাক্ষাৎকার’ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে উপস্থিত বরগুনার কয়েকজন নেতা জানান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীর কোনো সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই তোলপাড় হচ্ছে বরগুনা–২ আসনে।
এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কয়েকজন এবং অন্য নেতারা জানান, সাংসদ শওকত হাচানুর রহমানের বাবা খলিলুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় বরগুনায় পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একজন পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার ফুফা মজিবুর রহমান কনককে খলিল রাজাকারের (সাংসদের বাবা) নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলাও করা হয়েছিল। তবে পঁচাত্তরের পর মামলা আর এগোয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর (সাংসদ) বাবা আরও বহু লোককে হত্যা করেছেন। কিন্তু পরে তিনি মারা গেলে তাঁর বিরুদ্ধে আর মামলা করা হয়নি। তাই এবার আমাদের চাওয়া, রাজাকারের সন্তান যেন মনোনয়ন না পায়।’
ভাস্কর্যশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা মনি মণ্ডল বলেন, ‘খলিল রাজাকার আমাদের বাড়িতে এসে চারটি ঘরে আগুন দেন। এর আগে লুটতরাজ চালান। এ সময় আমার বড় চাচা শরৎ মণ্ডল খলিল মিয়ার নির্দেশে অপর রাজাকার সুলতানের গুলিতে শহীদ হন।’
মনি মণ্ডল আরও বলেন, ‘রাজাকারের সন্তান হয়ে, পিঠ বাঁচাতে আওয়ামী লীগে এসে তিনি (শওকত হাচানুর) সাংসদ পর্যন্ত হয়েছেন। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজাকারের সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তাঁর সঙ্গে আমরাও একমত। আর যেন কোনো রাজাকারের সন্তানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া না হয়।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
২০১৩ সালের ২৬ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বরগুনা-২ আসনের সাংসদ গোলাম সবুর। এতে আসনটি শূন্য হয়। পরে উপনির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন শওকত হাচানুর। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গোলাম সরোয়ার হিরু। উপনির্বাচনের প্রায় তিন মাস পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন শওকত হাচানুর। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হোসেন সিকদার।(তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৬ নভেম্বর