চানাচুর বিক্রেতা থেকে এমপি মনোনয়নপত্র প্রত্যাশী
বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় সপ্তম শ্রেণিতেই পড়াশোনার পাট চুকে যায়। ধরতে হলো সংসারের হাল। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে মায়ের বানানো আচার-চানাচুর বিক্রি করতে শুরু করলেন। দিনশেষে মা আনোয়ারা বেগমের হাতে অর্জিত টাকা তুলে দিতেন। সন্ধ্যার পর এরুলিয়া বাজারে একটি সিডি ভাড়া দেওয়ার দোকানে বসতেন। এভাবেই কেটে গেল তিন বছর। দোকানের মালিক শহীদুল ইসলাম একদিন আলমকে জানালেন, তিনি মালয়েশিয়া চলে যাবেন। মালপত্র বিক্রি করে দিতে চান।
দোকানে ছিল একটা সাদাকালো টেলিভিশন আর ১০০টি সিডি, ছিল কিছু ভিসিআরের ক্যাসেটও। মায়ের সঙ্গে আলাপ করে ১৬ হাজার টাকায় দোকানের সব মালপত্র কিনে নিলেন আলম। সিডির দোকানেই ভালো আয়-রোজগার হচ্ছিল। আচার-চানাচুর বিক্রি বাদ দিয়ে দিলেন। ঠিক তখনই আলমের মনে উঁকি দিল মেরিনা সিনেমা হলের ভেতর জেগে ওঠা স্বপ্নটা। একবার চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?
টাকা-পয়সা খরচ করে একটা কমেডি গানের ভিডিওতে মডেল হলেন। এলাকায় ভিডিওর সিডি ছড়িয়ে গেল। আলম মনে মনে বেশ খুশি, কারণ টিভিপর্দায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামের অনেকেই খুশি নয়। স্মৃতি রোমন্থন করে আলম বলেন, ‘গ্রামের লোকজন আমাকে গালি দিতে লাগল, কেন জোকার হলাম। অনেক মুরব্বি ভিডিওটা দেখে মজা পেলেও বললেন, জোকার হয়ে লাভ নেই। চিন্তা করলাম টাকা যেহেতু খরচ করব, আমি হিরোই হব।’
স্থানীয় এক এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজ এলাকায় ডিশ সংযোগের ব্যবসা শুরু করলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন গানের মিউজিক ভিডিও বানান। মডেল হন নিজেই। ডিশে সেই গান প্রচার করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিউজিক ভিডিও করেছেন।
২০০৯ সালে বিয়ে করেন পাশের গ্রামের সুমী নামের এক তরুণীকে। আলম সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও সুমী পড়েছেন এসএসসি পর্যন্ত। তাদের সংসারে আসে নতুন দুই অতিথি। নিজের নামের সাথে মিলিয়ে রাখেন সন্তানদের নাম। পুত্র আবির ও কন্যা আলো। এখন সংসার আর ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত আলম। পাশাপাশি নিজে কিছু মিউজিক ভিডিও করেন। সেগুলো নিজের ক্যাবল চ্যানেলেই প্রচার করেন। গ্রামের মানুষরাও তাকে বাহবা দেয়। আলম উৎসাহ পান।
বগুড়া সদরের এরুলিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক আলম সম্পর্কে বলেন, ”আলম ছেলে খারাপ না। কষ্ট করে বড় হয়েছে আলম। সে গান গাইতে পারে না, নাচতেও পারে না। তবে তার মডেলিং এর শখ আছে এটা জানি।”
এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, ”আলম সম্পর্কে জানি সে ডিশ ব্যবসা করে। নির্বাচনও করে। দুইবার দাঁড়িয়েছিল। হেরে গেছে। তবে এলাকার মানুষজন তাকে পছন্দ করে। নির্বাচনে এবার সে দ্বিতীয় হয়েছে। ছেলে হিসেবে খারাপ না, তবে শুনছি মডেলিং-এর দিকে তার ঝোঁক।”
২০১৬ সালের মাঝামাঝি হুট করেই ফেসবুকে আলমের কয়েকটি মিউজিক ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে। সেই ভিডিও কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও হৈচৈ বাঁধিয়ে দেন আলম। আলমকে খুঁজে বের করে গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে ‘কে এই হিরো আলম?’ শিরোনামে খবর।
ওই বছরে বছর গুগলে তাঁকেই সবচেয়ে বেশি খুঁজেছে মানুষ। আলমের এই জনপ্রিয়তা নজরে আসে চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও। ঢাকার কয়েকজন উঠতি নির্মাতা তাঁকে নিয়ে কয়েকটি মিউজিক ভিডিও ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এরই মধ্যে পরিচয় হয় রোহান নামের একজন তরুণ অভিনেতার সঙ্গে। দেশীয় চলচ্চিত্রের বাইরে ভারতের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করতে যাচ্ছেন আলম।
আলম বলেন, ‘প্রথম যখন মিউজিক ভিডিও বানাই তখন কেউই আমার সঙ্গে মডেল হতে চাইত না। দ্বিগুণ টাকা দিয়ে তাদের নিতাম। এখন অনেকেই আমার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ চায়। সিনেমার পর্দায় নায়কের মারামারি দেখে একদিন অবাক হয়েছিলাম, এখন আমি নিজে নায়ক হয়ে মারামারি করেছি, লোকে সেটা দেখছে। এই যে মনোনয়ন পেপার নিয়েছি সবাই আলোচনা-সমালোচনা করছে- এটাই আমার প্রাপ্তি। (সূত্রঃ কালের কন্ঠ)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৪ নভেম্বর