ওরা মানুষের উন্নতিতে বিশ্বাস করে না : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আরো এক মেয়াদে দেশ সেবার সুযোগ দিতে নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই যে, যাকেই নৌকা মার্কা দিয়ে পাঠাব তাকেই আপনারা ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’ তিনি বলেন. ‘আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি বাংলার মানুষের জন্য। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের সুখী সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করা, তাদের উন্নত জীবন দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে বরগুনার তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় এসব কথা বলেন। এর আগে তালতলীর উন্নয়নের জন্য একুশটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। যে ঘটনায় আইভি রহমান সহ ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়। বিএনপি’র আমলে দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়ে ছিলো কারণ তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মানুষের উন্নতিতে বিশ্বাস করে না।
খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করাতেই আজকে কারাগারে রয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা চুরি করলে তাকে আল্লাহও শাস্তি দেন, সেই শাস্তিই তিনি এখন ভোগ করছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশকে দারিদ্র মুক্ত করায় তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, একটি লোকও না খেয়ে থাকবে না, প্রত্যেকের জন্য আমরা বাসস্থান করে দেব এবং তারা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে আমরা সে ব্যাবস্থা করে দেব। দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় চলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে যে সম্মান পেয়েছি তা ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা অতীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন তাই আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট প্রদান করে আমাদেরকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী সকলকে হাত তুলে ওয়াদা করতে বললে এ সময় উপস্থিত হাজারো জনতা দুইহাত তুলে এবং চিৎকার করে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রিজভিউল কবির সভাপতিত্ব জনসভায় করেন।
স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমি টুঙ্গিপাড়া থেকে একসময় স্পিডবোটে করে বরগুনা এসেছি। এই তালতলী একটি ইউনিয়ন ছিল। আজকে সেই তালতলীকে আমরা উপজেলা করে দিয়েছি। আমি যখন প্রথমবার এখানে আসি মাত্র একটা পাকা দালান ছাড়া আর কিছু ছিল না। এখন এখানে সবই আছে। ইনশাল্লাহ আরও হবে।
সরকার প্রধান বলেন, আজ আমরা অনেকগুলো প্রজেক্ট উদ্বোধন করলাম। এখানকার বাঁধগুলো সংস্কার করে জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য প্রকল্প গ্রহণ নিয়েছি। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত হবে। ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে আমরা সেই পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি। যে শিশু এখন জন্ম নিলো বা আগামীতে জন্ম নেবে, তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সরকার কাজ করবে। আমি ছেলেমেয়েদের বলবো, সকলকে লেখাপড়া শিখতে হবে। তাহলে বাবা-মার নাম যেমন উজ্জ্বল হবে। তেমনি দেশের নামও উজ্জ্বল হবে।’
দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদকের কোনও স্থান হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদ দমনে সক্ষম হয়েছি। মাদকের জন্য অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করে দেবো, যাতে খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আমাদের ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদের কোনও স্থান নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই জঙ্গিবাদ বা মাদককে প্রশ্রয় দেবেন না।’
উন্নয়নের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একেবারে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত লেখাপড়ার জন্য বৃত্তি এবং উপবৃত্তি দিচ্ছি। এক কোটি চল্লিশ লাখ শিক্ষার্থী এই টাকা পাচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। প্রত্যেকটা এলাকায় ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধনসহ প্রায় দুইশ রকমের সেবা পাচ্ছে সবাই।
তিনি বলেন, তালতলীর মতো দুর্গম এলাকা থেকেও সব আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছি। পটুয়াখালীর কলাপড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে এখানকার প্রত্যেকটা ঘরেও বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।’
তিনি এ সময় এ অঞ্চলকে বিদ্যুতের হাব হিসেবে গড়ে তোলা সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই, শুধু রাজধানীর মানুষ সুখে থাকবে তা নয়, প্রত্যেকটা গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত সুবিধা পৌঁছাতে চাই। প্রত্যেকটা গ্রামে আমরা শহরের মতো সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। ঘরে বসে ইন্টারনেটে কাজ করে পয়সা উপার্জন করে মানুষ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট নিয়েছি।’
তিনি বলেন, যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার বর্গাচাষিদের বিনাসুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। আমাদের কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের আগে কোনও স্বীকৃতি ছিল না। আমরা তাদের কারিকুলাম ঠিক করে সনদের ব্যবস্থা করেছি। যে সনদের মাধ্যমে তারা দেশে বিদেশে চাকরির সুযোগ পাবে। ‘তারাও আমাদেরই সন্তান। তাদের জীবনমান উন্নত হোক আমরা সেটাই চাই,’যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে তালতলীতে ২১টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- একটি ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, বামনা ও বেতাগি উপজেলায় দুইটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, জেলা পাঠাগার, জেলা পুলিশ লাইনে নারী পুলিশ সদস্যদের জন্য একটি ব্যারাকের নির্মাণ কাজ এবং অন্যান্য প্রকল্প, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেলের সম্প্রসারণ, আমতলী থানা ভবন, বরগুনা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, দোয়াতোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস (উপকূলীয়), হোসনাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার পর ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় বাঁধসমূহ মেরামত, বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী ডিএন কলেজ, পাথরঘাটায় সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ ও আমতলীতে ইউনুস আলী খান ডিগ্রি কলেজ-এর চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, তালতলীতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র, বাকেরগঞ্জ- পাদ্রিশিবপুর- কাঁঠালতলী- সুবিদখালী- বরগুনা সড়ক সম্প্রসারণ কাজ, একটি সেতু, তালতলী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, গৌরচন্না ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, বামনা ও তালতলীতে একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ভবন।(বাসস)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২৭ অক্টোবর