‘নির্ঘুম রাত জেগে জেগে, গিটার কাঁদতে জানে…’
‘ছয়টি তারে লুকিয়ে আছে, ছয় রকমের কষ্ট আমার, ফুরিয়ে যাওয়া মানুষের মতো, নির্ঘুম রাত জেগে জেগে, গিটার কাঁদতে জানে…’
গানে গানে এমনটাই গেয়েছিলেন ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। ‘গিটার কাঁদতে’ এর আগে এমন বাক্যের প্রমাণ, গানের কথা ছাড়া কোথায় ছিল?
গতকাল বরগুনায় একটি কনসার্ট ছিল। মঞ্চে ওঠার পর জেমসকে স্বাভাবিক মনে হয়নি। শোকে ভেতরে ভেতরে ভেঙে গেছেন। এর আগে কখনও জেমস তার দৃঢ়তাকে আড়াল করেননি। গতকাল পারলেন না। জেমস কথা বলতে শুরু করেনব ভেঙে ভেঙে।
তিনি বলেন, কিংবদন্তি গায়ক আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। আজকের অনুষ্ঠানটি করার একদম ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু ১৫ বছর আগের একটা গল্প বলি। আমি আর বাচ্চু ভাই আড্ডা মারি; একদিন আসতে আসতে বাচ্চু ভাইকে বললাম, আমাদের শিল্পীদের জন্য ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, দ্যা শো মাস্ট গো অন (The Show Must Go On)। তাই চেষ্টা করব…’।
কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় জেমসের কণ্ঠরোধ হয়ে আসছিল। এরপর গিটার বাজাতে শুরু করেন। মুখের এক্সপ্রেশন আঙুলের মধ্য দিয়ে গিটারের তারে আছড়ে পড়ছিল। গিটার থেকে ছিটকে বেরোচ্ছিল কান্না। জেমস কান্না আড়াল করতে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, গিটার আড়াল করতে দেয়নি, ছটি তার কেঁদে যাচ্ছিল… গিটার কাঁদতে জানে…
বাংলা ব্যান্ড জগতে আইয়ুব বাচ্চুর খুব কাছের মানুষ হিসেবে জেমসের নাম চলে আসে। আইয়ুব বাচ্চুর নাম উচ্চারিত হলে জেমসের নাম উচ্চারিত হয়, জেমসের নাম উচ্চারিত হলে আইয়ুব বাচ্চুর নাম উচ্চারিত হয়। দুজনই একটা সময়ে ছিলেন ফিলিংসে। আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে জেমসের পরিচয় ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে। এরপর দীর্ঘ ৪০ বছরের সম্পর্ক। এক সঙ্গে করেছেন অনেক কনসার্ট, অনেক অনুষ্ঠান। প্রিয় মানুষ আইয়ুব বাচ্চুর বিদায় যেন মেনে নিতে পারছিলেন না জেমস।
জেমস বলেন,আমাদের সম্পর্কের এই গভীরতার কথা কখনো বোঝাতে পারব না। কেউ হয়তো জানবেও না যে আমাদের একের হৃদয়ে অপরের জন্য কতটা জায়গা রাখা আছে। আমাদের মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল।
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৯ অক্টোবর