নির্বাচন পরিকল্পনা নিয়ে ইসির বৈঠক বসছে আজ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজের দুটি কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। আজ (সোমবার) অনুষ্ঠিতব্য কমিশন সভায় এ দুটি কর্মপরিকল্পনা উত্থাপন করা হচ্ছে। একটি কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণ ও নির্বাচনের ফল প্রকাশ পর্যন্ত নির্বাচন পরিচালনায় ৯৯টি কাজের চেক লিস্ট। এ কর্মপরিকল্পনায় নভেম্বরে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই ও ডিসেম্বরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও নির্বাচনের প্রচারণার শুরুর পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর ভোটগ্রহণ ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। তবে এ কর্মপরিকল্পনায় তফসিল ঘোষণা ও ভোটগ্রহণের কোনও সুনির্দিষ্ট বা সম্ভাব্য তারিখের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়টি ইসির সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অন্য কর্মপরিকল্পনার ভোটের আগের প্রস্তুতির ২২ দফা কাজের বিবরণ উল্লেখ রয়েছে। এটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ১৬ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর। এর আওতায় নির্বাচন ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার বিষয়ে বৈঠক, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনি এলাকার পরিস্থিতি সংগ্রহের প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সচিবালয় কী কী কাজ করেছে বা আগামী দিনর করবে এবং কাজের অগ্রগতি সবমিলিয়ে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি কমিশন সভায় অবহিত করা হবে। কমিশন যে গাইডলাইন দেবেন, তা অনুসরণ করে নির্বাচনের বাকি প্রস্তুতি নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, সোমবার কমিশনের ৩৬তম সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সভায় ৫টি আলোচ্যসূচি নির্ধারিত রয়েছে। এর একনম্বর এজেন্ডায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে ইসিকে জানানোর বিষয়টি রয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার তালিকায় আলাদা লিঙ্গ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যমান ভোটার তালিকা বিধিমালার সংশ্লিষ্ট বিধি ও ফরমে সংশোধন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, প্রদর্শনী ও এই সংক্রান্ত করণীয়, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনেকালে দু’টি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হচ্ছে। এ সময় থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী ১-১০ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা ও ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মাসের শেষ সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে ইসি। এরপরই তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
ইসি সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অন্যান্য নির্বাচনের মতোই এবারের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। তবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, নির্বাচনি ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, ইভিএম ব্যবহার, ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের মতো নতুন কিছু প্রস্তাব রয়েছে এসব কর্মপরিকল্পনায়। সোমবারের কমিশন সভায় এসব কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন পেলে মঙ্গলবার থেকেই তা বাস্তবায়ন শুরু হবে।
জানা গেছে, কমিশন সভায় নির্বাচন প্রস্তুতিমূলক ১১ ধরনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বা শেষ হওয়ার পথে এমন তথ্য কমিশন সভায় তোলা হচ্ছে। এছাড়া আরও ১১ ধরনের কাজ বাকি রয়েছে জানিয়ে এসব বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনা চাওয়া হচ্ছে।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—নির্বাচনি ব্যয় মনিটরিং করার জন্য তিনশ’ আসনের প্রতিটিতে একটি করে অথবা পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি আসনে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান। ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্র থেকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিশেষ খামে ইসিতে ভোটগণনার বিবরণী প্রেরণ, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন ইত্যাদি কার্যক্রমের প্রস্তাবনা প্রস্তুতের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ ও প্রয়োজনে সভার আয়োজন করা। সারাদেশের ভোটকেন্দ্রের জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) সম্ভব না হলেও ন্যূনতম ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, গাজীপুর, রাজশাহী ও রংপুর মহানগরীর মহানগরীর ভোটকেন্দ্রের অবস্থান, ভোটার সংখ্যা ও অন্যান্য তথ্য বিষয়ক জিআইএস প্রণয়ন।
ভোটের কর্মপরিকল্পনায় যা আছে
জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ ছাড়া তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের ফল প্রকাশ পর্যন্ত ৯৯টি কাজের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ইসি সচিবালয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, নভেম্বরে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন নির্ধারিত থাকবে। তবে এতে তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। একইমাসে মনোনয়নপত্র বাছাই ও মনোনয়নপত্র বাছাই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শেষ তারিখ থাকবে। আপিল শুনানির সব ব্যবস্থা করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ হবে ডিসেম্বরে। এরপরের দিনই প্রতীক বরাদ্দ ও প্রচারণা শুরু হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ডিসেম্বরে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠান ও ব্যালট পেপার ছাপার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কর্মপরিকল্পনায়। ভোটগ্রহণের বিষয়ে ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ নেই।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যেদিনই তফসিল ঘোষণা করা হবে সেদিন ভোটের কাজে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি, ভোটকেন্দ্রের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে।
পরিপত্র ও রাজনৈতিক দলের জোটগঠন সংক্রান্ত চিঠি
তফসিল ঘোষণার দুই দিন পর ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হবে। তিনদিন পর প্রার্থীর হলফনামা ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি প্রচার-সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। ওইদিনই মিডিয়া মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। নভেম্বরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারের বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতর ও বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সঙ্গে সভা হবে। ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনের ফল প্রচারের বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়, টিঅ্যান্ডটি, বিটিআরসি, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে সভা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তফসিলের আগের ২২ দফা কর্মপরিকল্পনায় যা আছে
তফসিল ঘোষণার আগে ২২ দফা কর্মপরিকল্পনার মধ্যে বেশকিছু ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে ইসি সচিবালয়। বাকি কাজগুলো সামনের দিনগুলোয় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—গত এপ্রিলে প্রকাশিত নির্বাচনি এলাকার সীমানার জিআইএস প্রস্তুত, মানচিত্রসহ বই মুদ্রণ ও পোস্টার তৈরি করা। ১০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পূরক ভোটার তালিকার সিডি মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনের সব ধরনের ফরম ও প্যাকেট মুদ্রণ করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে। একই সময়ের মধ্যে ভোটগ্রহণের উপকরণ— গানিব্যাগ ও হেসিয়ান ব্যাগ, স্ট্যাম্প প্যাড, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, অফিসিয়াল সিল, গালা ইত্যাদি সংগ্রহ করা হবে। ২২-২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মপরিকল্পনায় আরও উল্লেখ রয়েছে—
মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলারক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবনা ও সভা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এরপরই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ-সংক্রান্ত প্রস্তাব কমিশনে তোলা হবে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে এ মাসেই।(তথ্য সূত্রঃ বাংলাট্রিবিউন.কম)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৫ অক্টোবর