শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এশিয়া কাপ মাশরাফির
শুরু হচ্ছে এশিয়ার ক্রিকেট শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এশিয়া কাপ। আসরের প্রথম দিনেই মাঠে নামবে দুইবারের ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এটি এখন কোটি টাকার প্রশ্ন, এশিয়া কাপে এবার পারবে তো বাংলাদেশ? নাকি স্বপ্নটা অধরাই থেকে যাবে। ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হলেও এশিয়া কাপের প্রথম আসর খেলে বাংলাদেশ পরের বার ১৯৮৬ সালে; কিন্তু একবারও পারেনি শিরোপার মুখ দেখতে।
সর্বশেষ দু’টি আসর হয়েছে বাংলাদেশে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সে আসরেও শিরোপাশূন্য। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এবারের আসরে প্রতিযোগিতা আরো বেশি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বড় ব্যবধানে হেরেও প্রেস্টিজ ইস্যুতে পরা ভারতের সঙ্গে হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কা ও নতুন শক্তি আফগানিস্তান। এদের সঙ্গে তাহলে কী করবে বাংলাদেশ?
ওয়ানডেতে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১-এ জিতলেও যে ম্যাচটি হেরেছে সেটা ছিল তীরে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থায় থাকা ম্যাচ। ফলে আত্মবিশ্বাসটা বেশিই টিম বাংলাদেশের। কিছু ইনজুরি সমস্যা আছে। সব মিলিয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে শিরোপার আশা করতেই পারে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘গত তিন আসরের দুটোতেই আমরা ফাইনাল খেলেছি। ফলে এশিয়া কাপে আমাদের বেশ কিছু ভালো স্মৃতি হয়েছে। এ ছাড়া এশিয়ার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দল এখন বাংলাদেশ। এশিয়ার র্যাংকিং হিসেবেও যদি দেখেন তাতে আমরা তৃতীয় স্থানে রয়েছি। তাই এসব সুখস্মৃতি ও অর্জন এ আসরে ভালো খেলতে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
বাংলাদেশের সাফল্য নির্ভর করছে মূলত দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর। অধিনায়ক মাশরাফি ছাড়াও সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, তামিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যে দিন ভালো করবেন দলও সাফল্য পাবে। বিগত বেশ কিছু সাফল্যের পেছনে এদের অবদান অনেক। বাংলাদেশের এমন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের হিসাব কষলে অন্য সব দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে টিম বাংলাদেশই। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গে এবার যোগ দেবেন লিটন কুমার দাস। লিটনের ওপর অনেক আস্থা। দুবাইয়ের ব্যাটিং ট্রাকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করবেন এ ওপেনার এটাই প্রত্যাশা।
তামিম তো নিয়মিতই ভালো খেলে আসছেন। যার প্রমাণ তিনি সর্বশেষ আসরেও দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে তিনিই ছিলেন সিরিজ সেরা ক্রিকেটার। বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো দিক ওয়ান ডাউনে সাকিব। চমৎকার মানিয়ে নিয়েছেন এ ক্রিকেটার। তামিমের সঙ্গে জুটি বেঁধে দারুণ খেলছেন তিনি। এরপর মিডল অর্ডারে মুশফিক, রিয়াদরাও দায়িত্ব নিয়ে খেলছেন।
কোচ স্টিভ রোডসের এটা দ্বিতীয় সিরিজ হলেও এরই মধ্যে তিনি দলকে অনেকাংশে গুছিয়ে এনেছেন। ব্যাটিং পরামর্শক নেইল ম্যাকেঞ্জিকে পেয়ে ছোটখাট সমস্যাগুলো ভালোভাবেই কাটিয়ে ওঠার কথা ব্যাটসম্যানদের। সব মিলিয়ে ব্যাটিংটা এখন বেশ গোছানোও। এর সঙ্গে কোর্টনি ওয়ালশের পেস অ্যাটাকে মাশরাফি অতুলনীয়। অভিজ্ঞতাও পারফরম্যান্সে সেরা এখন তিনি। তার সাথে রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজ মিলে যেকোনো ব্যাটিং লাইনের জন্য হুমকি।
এ ছাড়া ভারতীয় সাবেক স্পিনার সুনীল যোশিও তার স্পিন ডিপার্টমেন্টকে আরো ধারাল করেছেন। কারণ দুবাইয়ে স্পিনাররও সহায়তা পেয়ে আসছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন প্রস্তুত। তা ছাড়া শনিবারের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে বেশ চেনা!
সম্প্রতি দুই দল বেশ ক’বার মুখোমুখি হয়েছে। এতে একে অপরের দুর্বলতাগুলো বেশ ভালোই জানেন তারা। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য চিন্তার বিষয় সেটি লঙ্কান কোচ হাতুরাসিংহে। বাংলাদেশ দলের দুর্বলতাগুলো তার বেশ ভালোই জানা। বাংলাদেশও এটি জানে। সব মিলিয়ে নিজেদের সবটুকু দিতে পারলে আগামীকাল ভালো একটা ম্যাচ উপহার দেবে মাশরাফিরা।
তা ছাড়া গ্রুপ পর্বে জিতে দ্বিতীয় পর্বে যেতে এই ম্যাচেরও গুরুত্ব অনেক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেলে আফগানদের মোকাবেলা করা সহজ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে মাশরাফি সেটি জানানও দিয়েছেন। ফলে প্রথম ম্যাচেই জয় নিয়ে এগিয়ে থাকতে চায় এটাই এখন টিম বাংলাদেশের প্লান।
ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ৪৪ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। জয়ের পাল্লায় এগিয়ে লঙ্কানরা। ৩৬টি ম্যাচ জিতেছে তারা। বাংলাদেশের জয় ৬টি। দু’টি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। দুই দলের সর্বশেষ লড়াইয়েও ব্যর্থ বাংলাদেশ। হেরেছিল তারা তিন জাতি টুর্নামেন্টের ফাইনালে বেশ বড় ব্যবধানেই। এ দিকটা চিন্তা করলে কিছুটা অ্যাডভান্টেজে শ্রীলঙ্কা। তবে দুর্বলতা তাদেরও আছে। ইনজুরির জন্য বেশ ক’জন নিয়মিত ক্রিকেটারকে রেখেই খেলতে হচ্ছে আজ তাদের। সুযোগটা নেয়ার চেষ্টা করবে মাশরাফিরা সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।