বেওয়ারিশ লাশের আতঙ্কে পাথরঘাটার মানুষ
মাহফুজা ইসলাম: বেওয়ারিশ লাশের ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে পাথরঘাটার প্রায় দু’ লক্ষাধিক মানুষ। এঘটনায় স্থানীয়রা অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন। পুলিশী মামলার ভয়ে এটি ঘটেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় একের পর এক বেওয়রিশ লাশ এলেও পুলিশ এর হদিস করতে পারছেনা। গোটা পাথরঘাটা জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এঘটনা তদন্তে স্থানীয় পুলিশের সাথে সাদা পোশাকে ডিবি, সি আইডি সহ সরকারের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে গত ১০ বছরে নামে-বেনামে বরগুনার পাথরঘাটায় লাশের মিছিলে যোগ হয়েছে ৩০ টিরও বেশী লাশ। পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় আধা কিলোমিটারের মধ্যেইও মিলছে লাশ পাওয়ার ঘটনা। এমন কি খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের আশেপাশে অপরদিকে পাথরঘাটা থানা সীমানা প্রাচীরের সাথে মিলছে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের লাশ। এছাড়াও পারিবারিক সহিংসতার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক ঘটনা ও রয়েছে। একের পর এক অজ্ঞাত লাশ পাওয়াার মধ্য দিয়ে পাথরঘাটা পরিণত হয়েছে লাশের শহরে। প্রতি বছরের শুরু ও শেষে এই মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। এতে সাধারণ মানুষ রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। লাশ গুলো কাদের? কোথা থেকে আসছে লাশগুলো? এ ধরনের সংশিলিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মন্তব্য করেছেন।
এঅবস্থায় পুলিশের বিশেষ তদন্ত টিম দিয়ে তদন্ত করে দ্রুত অপরাধী সনাক্ত করতে না পারলে সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন মাদক পাচার কারীর সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে এদের। দূর থেকে মাদকের বড় চালান নিয়ে আসা এসব ব্যক্তিদের সাথে টাকার বুনিবনাদ না হওয়ার কারণে এদের কে হত্যা করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হতে পারে। আর এতে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ততা আছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো বলেন, এই সকল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে গভীর অনুসন্ধানে পুলিশকের আরো সচেষ্ট হতে হবে বলে জানান।
দীর্ঘ কয়েক দিন ধরে পাথরঘাটা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে বিগত দিনের লাশগুলো মিলছে পাথরঘাটার গুরুত্বপূর্ণ স্থানের বেশিভাগই পুকুরে বা পরিত্যক্ত ডোবাতে। যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ পুকুরের ঘাটের নিচে, থানার সামনে টিএন্ডটি মাঠে, কলেজের পিছনের খালে, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শিশু টিকাদান কেন্দ্রের ডোবায় ও পাশে ৩ টি, আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে, আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুকুরে, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে, কে এম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ডোবায়, তাসলিমা মেমোরিযাল একাডেমী সংলগ্ন পুকুরের ঘাটের নিচে, পাথরঘাটা কলেজ ক্যাম্পাসের পুকুরে। এসব জায়গাসহ পাথরঘাটা ৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ৩০ টির মত লাশ পাওয়া গেলেও অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার জট খুলতে পারেনি প্রশাসন। গত বছরের (২০১৭) ১০ আগস্ট পাথরঘাটা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা অঞ্জাত কিশোরীর মরদেহ উদ্ধারের পর দীর্ঘ সময় ডিব্#ি৩৯;র তদন্তের পরও নিহত কিশোরীর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে আটককৃত ৪ ছাত্র লীগের নেতাসহ ৫ জনকে দোষী সাব্যস্থ করে একটি প্রতিবেদন পেশ করতে না করতেই গত ২৯ আগস্ট পাথরঘাটা সদর ইউনিয়েনের গহরপুরের একটি পুকুর থেকে অর্ধগলিত এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার হয়, যার পরিচয়ও নিশ্চিত করতে পারেনি এলাকাবাসী।
বিগত দিনে পাথরঘাটা পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বেওয়ারিশ লাশের সন্ধান মিললেও হঠাৎ করে পার্শ্ববর্তী গ্রামে লাশের সন্ধান এর কারণ জানতে চাইলে পাথরঘাটা জুটিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন আগামীর সময়কে বলেন, পুর্বহত্যাকান্ডের ধরনের সাথে এই হত্যাকান্ড সম্পুর্ন এক ও অভিন্ন এবং একই সুতোয় গাঁথা। বিগত হত্যাকান্ডের রহস্য অন্যদিকে ঘুরানোর উদ্দেশ্যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এদিকে পূর্বে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জবানবন্দিতে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করলেও অঞ্জাত তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত না করে প্রতিবেদন দাখিলের ব্যাপারে পুলিশের গাফিলতির কারণকেও দায়ী করেন তিনি।
স্থানীয় ফার্মেসী ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদ বলেন, পরপর দুই তরুণী হত্যার পিছনে মোবাইল ফোনে প্রেম ঘটিত ঘটনা ও থাকতে পারে। তবে পৌর কাউন্সিলর রোকনুজ্জামান বলেন, পাথরঘাটা দুর্গম এলাকা হওয়ায় এই রুটকে ব্যবহার করছে অপরাধীরা। হয়তো বছরে দু-একটি লাশ পাওয়া যায় আর কত লাশ সাগরে মিলে যায় তার ইয়াত্তা নেই। সঠিক তদন্তের অভাবেই বারবার অপরাধ ঘটাতে সাহস করছে দুর্বৃত্তরা বলে তিনি মনে করেন।
পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা মোহাম্মদ খবির আহমেদ বলেন,গত ৫ বছরে পাথরঘাটায় ১২ টির মত লাশ পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে ইতি পূর্বে বেওয়ারিশ লাশগুলোর পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি। আমি যোগদানের পর গত ২৯ আগস্ট একটি লাশ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে গভীর তদন্ত চলছে। পাশাপাশি পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে।
লাশের পরিচয় কেন পাওয়া যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে পাথরঘাটা পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম বলেন, লাশগুলোর চেহারা বিকৃত হওয়ার কারণে বিগত লাশ গুলোর পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দেশের সকল থানায় এব্যাপারে লাশের ছবিসহ ইনফরমেশন দেয়া হয়েছে।