পাথরঘাটায় ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা
বঙ্গোপসাগরে ভরা মৌসুমেও দেখা মিলছে না রুপালি ইলিশের। মাছ না পাওয়ায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে এই উপজেলার প্রায় ৩৩ হাজার পরিবার। ইলিশ শূন্যতায় হাহাকার চলছে উপজেলার জেলে পল্লীতে। অভাব অনটন আর চরম হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছে এসব জেলে পরিবারগুলো।
নদীতে জাল ফেলে কিছু ইলিশের দেখা মিললেও আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় এনজিওর লোন আর মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধের ভাবনাই জেলে পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা।
উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটা উপজেলায় প্রায় ৮০ ভাগ মানুষই কৃষি ও মৎস্য আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সরকারি হিসাবে এ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার। এ ছাড়াও অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ১৯ হাজারেরও অধিক জেলে।
ইলিশকে ঘিরেই এখানকার জেলে এবং আড়তদারদের জীবন ও জীবিকার চাকা ঘুরছে। বছরের জ্যৈষ্ঠ মাস ইলিশের ভরা মৌসুম বলেই জানান জেলেরা। এ মাস শুরু হলেই উপকুলের নদী গুলো ও বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ওঠার কথা। সেই হিসেবে ইলিশ মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। এ এলাকার নদী বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদী ও বঙ্গোপসাগরে আশানুরূপ দেখা মিলছে না ইলিশের।
পাথরঘাটা বিএফডিসি ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট এম রুহুল আমিন এর তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এবছর ইলিশ মাছের উৎপাদন কম। গত এক সপ্তাহে ১৭৩টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কয়েকগুন কম।
জেলে মনির, হানিফা, রিপন, কালাম খান, বেল্লাল, সিদ্দিক মল্লিকসহ আরো অনেকে জানান, জ্যৈষ্ঠ থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু মৌসুমের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। সারাদিন জাল বেয়ে খরচের টাকা উঠছে না। নদীতে জাল ফেলে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। অনেকেই এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবে ভাবছিলেন, কিন্তু ইলিশ না পাওয়া ঋণের দেনা শোধ করতে পারছেন না। ফলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এনজিও ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কথা শুনতে হচ্ছে তাদের।
দেশের দ্বিতীয় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে ট্রলার গুলো নোঙর করে রাখা। জেলেরা ও বিএফডিসি ঘাটের শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। যে ঘাটে প্রতি বছর এই সময় শ্রমিকরা বসে থাকার সুযোগ পেতনা। এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা তার দশ ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনা-বেচা নেই। ফলে আড়তে অলস সময় পার করছেন আড়তদাররাও।
বিএফডিসি ঘাটের মৎস্য ব্যাবসায়ী নজরুল ইসলাম, শহিদ মোল্লা, শাহিন জানান, প্রতি বছর এ সময় ঘাটে ইলিশ বোঝাই ট্রলার আসত। এবছর তেমন ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। আমাদের ঘাটে ইলিশ কম থাকায় বেশী দামে কিনে দুরে রপ্তানি করলে সেখানে কম দামে বিক্রি করতে হয়। বুজে উঠতে পারছিনা এবছর কি করব।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ইলিশ মাছ মিঠা পানিতে থাকে, এবছর বৃষ্টি খুব কম থাকায় মিঠা পানি না পাওয়ায় ইলিশ কম হতে পারে।
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২ সেপ্টেম্বর