আবাসিক হোটেলে ফের দেহব্যবসা শুরু সমঝোতার গুঞ্জন!
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কমিশনার এসএম রুহুল আমিনের নানামুখী তৎপরতায় আবাসিক হোটেলগুলোতে পতিতাবৃত্তি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও এই কর্মকর্তার বদলির পরে ফের শুরু হয়ে গেছে পতিতাবৃত্তি। এখন প্রতিনিয়ত হোটেলগুলোতে রমরমা দেহব্যবসার খবর শোনা যাচ্ছে। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে তৎকালীন কমিশনারের বদলি কার্যকর হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানার ওসি তদন্ত আসাদুজ্জামানের সাথে হোটেল মালিকদের সমঝোতা হয়েছে। মুলত এর পর থেকেই বেশ কয়েকটি হোটেলে পুরোদমে শুরু হয় দেহব্যবসা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তৎকালীন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমিনের বদলি হওয়ায় আবাসিক হোটেল পাড়ায় উল্লাস দেখা যায়। আর এ কারনেই একাধীক অসাধু হোটেল মালিকরা অনেকটা প্রকাশ্যেই শুরু করে দিয়েছে দেহব্যবসা। বিশেষ করে নগরীর দক্ষিণ চকবাজার এলাকার হোটেল গালিব, পাতারহাট, পোর্টরোড এলাকার আবসিক হোটেল জোনাকি ও চিল, মহসিন মার্কেট লাগোয়া হোটেল কীর্তনখোলাসহ বেশ কয়েকটি হোটেলেই চলছে হরদমে দেহব্যবসা। পাশাপশি এইসব হোটেলে গভীর রাতে মাদক বানিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশ সেখানে হানা দিলেও কয়েকেদিনের মধ্যে মাদক উদ্ধার বা অনৈতিক বানিজ্যে জড়িতদের গ্রেফতারের উদাহরন কম রয়েছে।
এমত অবস্থায় সূত্রের খবর হচ্ছে- গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওসির বদলির পরে বরিশাল কোতয়ালি থানার চলতি দায়িত্বে থাকা তদন্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের সাথে শহরের বেশকয়েটি হোটেল মালিক সাক্ষাত করেন। কিন্তু সেখানে কি আলোচনা হয়েছে সেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এর পরপরই বেশ কয়েকটি হোটেলে দেহব্যবসার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোন গ্রীন সিগনাল এসেছে কিনা সে বিষয়টিও খোলসা করছেনা মালিকরা। অবশ্য একাধিক হোটেল মালিকের সাথে আলাপচারিতায় আভাস পাওয়া গেছে ওসি (তদন্ত) আসাদুজ্জামানের মধ্যস্ততাই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের সাথে সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টি পুরোই গোপন রাখা হচ্ছে। নাম না প্রকাশ শর্তে একটি আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার জানিয়েছেন, তৎকালীন ওসির বদলির পরে পাতাহাট ও গালিব হোটেলের মালিক মনির তাদের মালিককেও প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওসি আসাদের সাথে সমঝোতায় যেতে আলোচনায় বসার। কিন্তু অসামাজিক কার্যকলাপে তাদের সমর্থন নেই সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। যতদুর জানাগেছে এর পর পরই চলতি মাসের শুরুতে পতিতা বানিজ্য ব্যপক হারে শুরু হয়। সেক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে ওসি তদন্ত আসাদই বিষয়টি সমঝোতায় নিয়ে এসেছেন। এবং ওসি নুরুল ইসলামকেও ম্যানেজ করা হয়েছে। এনিয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদে মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা বলছে, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি চুপ থাকতে বলে তাহলে আমাদের কি করার থাকে।
অপর একটি সূত্রের জোরালো দাবি- মাস অন্তর থানা পুলিশকে প্রতিটি হোটেল থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সন্ধিচুক্তি হয়। এছাড়াও থানা পুলিশের অপারাপর কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়তই নির্ধারিত অর্থ নেয়ারও সুযোগ থাকছে। এই পুরো সমঝোতায় হোটেল মালিকদের পক্ষে ছিলেন পাতার হাট ও গালিবের হোটেল মালিক মনির হোসেন।
তবে এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি নুরুল ইসলাম ও তদন্ত ওসি আসাদুজ্জামান বলেন- আমাদের সাথে হোটেল মালিকদের সাথে কোন ধরনের বৈঠক হয় নি। প্রকাশ্যে দেহব্যবসা চলতে দেখা গেলেও দুই কর্মকর্তাই বলছেন, আবাসিক হোটেলে যদি দেহব্যবসা চলে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হবে। যদিও ওসি নুরুল ইসলাম বলছেন, প্রতিনিয়তই আবাসিক হোটেলে অভিযান দেয়া হচ্ছে। আপনি যোগদান করার পরে কোন আটক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমি যোগদান করার পরে কোন আটক নেই। তবে অভিযান চলছে। আর তদন্ত ওসি বলছেন, প্রত্যেক এসআই এএসআইদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে দেহ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করার বিষয়ে।
অভিযোগ রয়েছে- তৎকালীন কমিশনারের আমলে শহরে অধিকাংশ হোটেলে পতিতা বাণিজ্য বন্ধ হলেও এই মনিরকে কেউ রহিত করতে পারেনি। বরং তার মালিকাধিন বেশ কয়েকটি হোটেলে গোপনে পতিতাবৃত্তি চলছিলোই। এই ব্যবসায় গত কয়েক বছরে তিনি কোটি পতি বনে গেছেন। শহরের রুপাতলি এলাকায় জমি ক্রয় করে সেখানে গড়ে তুলিছেন বিলাস বহুল বাসাবাড়ি। এমত অবস্থায় শহরের হোটেল গুলোতে পতিতাবৃত্তি রোধে বারিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার কি করছে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
সুত্রঃ বরিশাল টাইমস ২৪