জীবনসঙ্গিনী

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৫:৩৬ এএম, ৩০ আগস্ট ২০১৮

জীবনসঙ্গিনীএক প্রথম মানুষ আদম (আঃ)। আল্লাহ তাঁকে সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁকে জান্নাতে স্থান দিয়েছিলেন। অপরিসীম সুখের স্থান জান্নাত, কিন্তু সেখানে থেকেও যেন আদমের (আঃ) মনে সুখ নেই, কীসের যেন বড়ই অভাব। একাকীত্ব যেন তাঁকে গ্রাস করেছে। তো তাঁর এই একাকীত্ব দূর করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কী করলেন? তিনি আদমের বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করলেন এক নারীকে, তাঁর স্ত্রী বিবি হাওয়া (আঃ) কে।

আল্লাহু আকবার!! আপাতদৃষ্টিতে দেখলে সাধারণ একটি ঘটনা, কিন্তু একটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখলে বোঝা যাবে যে এতে চিন্তাশীলদের জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে।
আমাদের বয়সী যুবকেরা আজকাল নিজেদের একাকীত্ব দূর করার জন্য কী করে? কেউ দুনিয়াবী কাজে-কর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। যারা দ্বীন ইসলাম পালনের ব্যাপারে সিরিয়াস নন, তাঁরা হয়তো গান, মুভি, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডাবাজি – এসবের মাঝে ডুবে থেকে নিজের একাকীত্ব দূর করার চেষ্টা করেন। আমরা আলহামদুলিল্লাহ যারা দ্বীনের কিছুটা বুঝ পেয়েছি, তারা হয়তো ইবাদাহ, দ্বীনি ভাইদের সান্নিধ্য, ইলম অর্জন, দাওয়াতি কার্যক্রম – এসবের মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। কিন্তু যে তিক্ত সত্যটাকে আমরা অনেকেই হয়তো উপলব্ধি করতে পারি না তা হলো এই যে, আমরা আসলে আমাদের একাকীত্ব থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি, একাকীত্ব তো আমাদের প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি কিছু মুহূর্তের জন্য তাকে ভুলে থাকতে। কারণ একটাই, একাকীত্ব দূর করার প্রকৃত উপায় আমাদের জানা নেই।

তো এখানে আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর প্রিয় নবীর একাকীত্ব দূর করার জন্য তাঁকে কেন কিছু বন্ধু-বান্ধব দিলেন না, বা অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করলেন না? কেন একজন স্ত্রী দিয়ে তাঁর একাকীত্ব দূর করলেন?

সুবহানআল্লাহ, যিনি আমাদের মালিক, আমাদের রব, তিনি কি আমাদের ফিতরাত বোঝেন না? অবশ্যই বোঝেন, এবং তিনি এটা জানেন যে, একজন পুরুষের হৃদয়ের একাকীত্ব দূর করার জন্য একজন স্ত্রীর বিকল্প কিছু নেই, তেমনিভাবে একজন নারীর একাকীত্ব দূর করার জন্যও একজন স্বামীর বিকল্প কিছু নেই। তাই তিনি ঠিক সেই কাজটাই করলেন।

দুই জীবন চলার পথে অনেক মানুষের সাথে আমাদের সম্পর্ক হয়, অনেকেই আমাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়, অন্তরের খুব কাছে অবস্থান নেয়। কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে আপন কে, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে উত্তর পাওয়া যাবে তা হলো মা-বাবা। কিন্তু এই মা-বাবা কি তাঁদের সন্তানের হৃদয়ের শুন্যতা পূরণ করতে সক্ষম? এ কথা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য যে একজন মানুষ কোনোদিন মা বাবার অবদান অস্বীকার করতে পারবে না। যে কষ্ট সহ্য করে তার মা তাকে জন্ম দিয়েছেন, যে ত্যাগ স্বীকার করে তার মা বাবা তাকে মানুষ করেছেন, ওয়াল্লাহি, নিঃস্বার্থভাবে করে যাওয়া এই কষ্টগুলোর কথা কখনোই ভুলবার নয়। এজন্য মা বাবাকে সম্মান দেওয়ার, তাঁদের হক আদায়ের ব্যাপারে ইসলাম কঠোর গুরুত্বারোপ করেছে।

কিন্তু তারপরও ধ্রুব সত্য এটাই যে মা-বাবার ভালোবাসা কোনোদিন একজন মানুষের হৃদয়ের সকল অভাব মেটাতে পারে না, পারে না প্রতিনিয়ত নিজের সাথে সংগ্রাম করে যাওয়া সেই মানুষটার প্রকৃত প্রয়োজন মেটাতে। যদি তাই হতো তাহলে কেন সারাদিন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডাবাজিতে সময় কাটানো, সবাইকে মাতিয়ে রাখা সেই ছেলেটা দিনশেষে একবুক শুন্যতা নিয়ে ঘুমোতে যায়? কেন পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে চঞ্চল-দুষ্টু হিসেবে পরিচিত সেই মেয়েটিকে মাঝেমধ্যে উদাস নয়নে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়? কেন তারা তাদের হৃদয়ের শুন্যতার কথা কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারে না? আর বলেই বা কি আদৌ কোনো লাভ আছে? প্রশ্নটা পাঠকের দিকেই ছুঁড়ে দিলাম!!

তিন উপরের প্রশ্নটার উত্তর আমাদের অনেকেরই জানা নেই, বা জানা থাকলেও হয়তো বলতে আগ্রহী নই। এ অভাবটুকু পূরণ করা, এই দুঃখ দূর করা কেবল একজনের পক্ষেই সম্ভব; আমাদের জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী।

স্বামী স্ত্রীকে একে অপরের জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী কেন বলা হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যেই উত্তরটা সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হলো তা হলো এই যে, জীবন চলার পথে প্রতিটি পদে আপনার জীবনসঙ্গী আপনাকে সঙ্গ দেবে। তাকে শুধু সুখের সাথী বা দুঃখের সাথী বলা হয় না, বলা হয় জীবনের সাথী। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই জীবন। সুতরাং যে শুধু আপনার সুখের সময় আপনার পাশে থাকে সে কখনো প্রকৃত জীবনসঙ্গী হতে পারে না। বরং প্রকৃত জীবনসঙ্গী তো সে, যে আপনার দুঃখে সমান ব্যথিত হয়, আপনার দুঃখটাকে যে ভাগ করে নেয়, যে আপনার কষ্টের সময়, সংগ্রামের সময় আপনার সঙ্গী হয়।

বিয়ে করতে চাইলে আমাদের ছেলেদেরকে একটা কমন কথা শুনতে হয়, “আগে নিজের পায়ে দাঁড়াও। ভালো বেতন হোক, এটা-সেটা হোক, এরপর বিয়ের কথা ভাবো।” কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে মেয়েটি আমার কষ্টের সময়, আমার সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে আমার সঙ্গী হয়নি, আমায় ভালোবেসে আগলে রাখেনি, সেই মেয়েকে কেন আমি সুখ স্বাছন্দ্যের সময় আপন করে নেব? কেন সে আমার ভালোবাসা পাবে? যদি বিয়ে করি তাহলে কি তাকে স্ত্রীর মর্যাদা, সম্মান দিতে পারবো কোনোদিন? তাছাড়া পরবর্তীতে আমার জীবনে কোনো বিপর্যয় আসলে যে সে আমায় ছেড়ে চলে যাবে না- তারই বা নিশ্চয়তা কী?

আছে কারও কাছে কোনো উত্তর?!

চার আমরা বিয়ে করবো, কিন্তু কীজন্যে? আমরা স্ত্রী বা স্বামী কেন চাই? আমি একজন পুরুষ, তাই পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। তবে তার আগে দেখে নিই আল্লাহ কোরআনে কী বলেছেন,

“তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হলো এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা শান্তি লাভ করতে পারো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। এর মাঝে অবশ্যই চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।’’ [সূরা রুম (৩০):২০-২১]

একজন সঙ্গিনী থেকে আমাদের মূল চাওয়া এটাই, আমরা তার কাছে প্রশান্তি পাবো। অপার্থিব সেই সুখটুকু পাবো, যা কোটি টাকা খরচ করেও পাওয়া সম্ভব না।

চলুন এবার আপনাদের একজন আদর্শ স্ত্রী, একজন মহীয়সী নারীর কথা শোনাই। কে তিনি? তিনি হলেন আমাদের প্রিয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রিয়তমা স্ত্রী, উম্মুল মুমেনিন খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা)।

উম্মুল মুমেনিন খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রথম স্ত্রী। তাঁদের বিয়ের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বয়স ছিলো ২৫ এবং উম্মুল মুমেনিন খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) এর বয়স ছিলো ৪০। বলা হয়ে থাকে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মুল মুমেনিন খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) কে যে পরিমাণ ভালবাসতেন, অন্য কোনো স্ত্রীকে এতটা ভালোবাসতেন না। কিন্তু কেন? ২৫ বছর বয়সী এক যুবক, ৪০ বছর বয়সী এক মধ্যবয়স্কা নারীর মধ্যে এমন কী পেয়েছিলেন যে তাঁকে হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে ভালোবেসেছিলেন?

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোতে খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) কে পাশে পেয়েছিলেন। খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) তাঁর প্রিয়তম স্বামীকে হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছিলেন। দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর অনেক মুসিবত এসেছিলো, সবাই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো, অবিশ্বাস করেছিলো। সেই সময় খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) তাঁর পাশে থেকে তাঁকে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছিলেন, তাঁকে বিশ্বাস করেছিলেন, এবং তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি এবং প্রথম মহিলা যিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দাওয়াত কবুল করেছিলেন, ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) মারা যাবার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনে আরও কয়েকজন স্ত্রী এসেছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) এর অভাব পূরণ করতে পারেননি।

প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভালোবাসা কেমন ছিলো? চলুন কয়েকটা ঘটনা দেখে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি।

■ মাঝে মাঝেই তিনি খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) এর কবরের পাশে বসে অঝোরে কাঁদতেন।

■ খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) এর নাম কেউ তাঁর সামনে উচ্চারণ করলে তিনি নিশ্চুপ হয়ে যেতেন, সবার অগোচরে চলে যেতেন।

■ তিনি খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) এর বান্ধবীদের খোঁজ খবর নিতেন, কোনো পশু কুরবানি দিলে কিছু মাংস তাঁদের জন্য পাঠাতেন। তিনি বলতেন, “আমি তাকে (খাদিজাকে) ভালোবাসি, এজন্য যারা তাকে ভালোবাসে আমি তাদেরকেও ভালোবাসি।”

■ খাদিজা (রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা) মারা যাবার কিছু বছর পর ঘটনাক্রমে একটি গলার হার হাতবদল হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে আসে, তিনি দেখেই চিনতে পারেন যে এই হারটি তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর। হারটি দেখে তিনি অঝোরে কান্না শুরু করে দেন।

শত শত উল্লেখযোগ্য ঘটনার মাঝে মাত্র কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলাম, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসার গভীরতা অনুধাবন করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এই ঘটনাগুলো যখন পড়ি, তখন বিয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী সেটা বুঝতে পারি।

পাঁচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যদি কোনোদিন বিয়ে করার তওফীক দেন তাহলে তো অবশ্যই করবো। হবু স্ত্রীর থেকে খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার। তাকে খুব সুন্দরী হতে হবে, উচ্চশিক্ষিতা হতে হবে, গুণবতী হতে হবে- এমন কিছুই চাই না। তার কাছে আমার চাওয়া এতটুকুই যে,

■ সে আমায় দ্বীনের পথে চলতে সাহায্য করবে, আমায় সাহায্য করবে যেন আমি একজন ভাল মুসলিম হতে পারি, আল্লাহর আরও নিকটে যেতে পারি, প্রতিকূল পরিবেশে ঈমান ধরে রাখতে পারি,

■ জীবনে যখন কোনো কঠিন সময় আসবে তখন সে আমার পাশে থাকবে, আমার হাতটা ধরে রাখবে, বলবে যে সে আমাকে অনেক ভালোবাসে, যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক না কেন জীবনে, সে কখনো আমার হাত ছাড়বে না, একসাথে দাঁড়িয়ে জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মোকাবিলা করবো আমরা,

■ শত দুঃখ-কষ্টের মাঝেও আমি যার ভালোবাসায় সুখ খুঁজে পাবো,

■ যদি কখনো দুর্বল হয়ে পড়ি তখন তার ভালোবাসা আমায় শক্তি যোগাবে,

■ যদি কখনো হতাশ হই, তখন সে আমার জীবনে আশার আলো নিয়ে আসবে,

■ যদি পথ চলতে গিয়ে হোঁচট খাই, তখন আমায় আবার উঠে দাঁড়াতে সে সাহায্য করবে,

■ আর যেদিন জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আসবে তখন তার সাথে আমি এই আনন্দটুকু ভাগ করে নেবো, সেদিন সে আমার আনন্দের সাথী হবে।

এমন একজনকেই তো আমি চাই, এমন কেউই হবে আমার প্রিয়তমা স্ত্রী, আমার জীবনসঙ্গিনী। আমি জানি না সে এখন কোথায় আছে, কেমন আছে। কিন্তু এটুকু বিশ্বাস করি যে সে-ও এমন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আমার জন্য, যেমনটা আমি তার জন্য করছি। সে-ও আমার জন্য তার তার হৃদয়ের গহীনে রাখা সুপ্ত ভালবাসাটুকু সযত্নে লালন করছে, যেমনটা আমি করছি। সে-ও আল্লাহর কাছে আমার জন্য দুআ করছে, যেমনটা আমি করছি। দুআ কবুলের কিছু মুহূর্ত আছে, এই মুহূর্তগুলোতে আমি প্রায়ই একটা দুআ করি:

“হে আল্লাহ, আমাকে একজন দ্বীনদার স্ত্রী দান করুন যে আমার জন্য চক্ষু শীতলকারী, অন্তর প্রশান্তকারী হবে। যাকে আপনি আমার স্ত্রী হিসেবে ঠিক করে রেখেছেন, তাকে হেফাজত করুন, তাকে সবরকম অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখুন, আর আমাকে তওফীক দিন যেন আমি তার জন্য নিজেকে পবিত্র রাখতে পারি।”

এমন একজন জীবনসঙ্গী পাওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কেন আমার মতো একজন অযোগ্য ব্যক্তিকে এমন একটা নিয়ামত দেবেন? এমন মূল্যবান সম্পদের প্রকৃত কদর করা যে আমাকে জানতে হবে! আমার মধ্যে আদৌ এমন কাউকে পাবার যোগ্যতা আছে কিনা, তা চেক করার সময় কেবল একটা মেসেজ পাই, “Error! 404 … Content not found.” তবুও আশা রাখি, আল্লাহর উপর। আশা রাখি যে একসময় আল্লাহর রহমতে সে যোগ্যতাগুলো আমার মধ্যে এসে যাবে, আর তখন আল্লাহ আমার সামনে এনে হাজির করবেন আমার সেই কাঙ্ক্ষিত নারীকে, আমার জীবনসঙ্গিনী, আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে।

ততদিন পর্যন্ত নাহয় অপেক্ষায় থাকলাম, আর সবার কাছে দুআর জন্য দরখাস্ত করলাম।

“হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ করুন।” [সূরা আল-ফুরকান, (২৫):৭৪]

লেখক: সাদমান আবেদীন

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)