আমতলীতে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে মারধরের অভিযোগ
যৌতুকের টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক সন্তানের জননী গৃহবধূ কাজল বেগমকে (২৫) স্বামী বেল্লাল প্যাদার হাতে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আহত গৃহবধূকে মঙ্গলবার রাতে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার বেতমোড় গ্রামে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে আমতলী উপজেলার বেতমোড় গ্রামের জালাল ফকিরের মেয়ে কাজল বেগমের সাথে একই গ্রামের শাহ আলম প্যাদার ছেলে বেল্লাল প্যাদা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ের বাবা জালাল ফকির জামাতাকে যৌতুক হিসেবে এক লক্ষ ৩৫ হাজার টাকায় একখানা মোটর সাইকেল ও স্বর্ণালংকারসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দিয়ে দেয়। রাজমিস্ত্রি কাজের আড়ালে বেল্লাল মাদকসেবন ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে এমন অভিযোগ শ্বশুর জালাল ফকিরের। নেশার টাকার প্রয়োজন হলেই বেল্লাল স্ত্রী কাজলকে মারধর করে বাবার বাড়ী থেকে টাকা এনে দিতে বলে। নিরুপায় হয়ে কাজল তার বাবার বাড়ী থেকে টাকা এনে দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে কয়েক দফায় সালিশ বৈঠক হয়েছে। গত কোরবানী ঈদে বেল্লাল শ্বশুর বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে ব্যবসা করবে বলে স্ত্রী কাজলকে তার বাবার কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা এনে দিতে বলে। টাকা আনার জন্য সোমবার কাজলকে শ্বশুর বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। ওইদিন বিকেলে টাকা না আনায় কাজলকে কয়েক দফায় মারধর করে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দরজার শিক দিয়ে পুনরায় বেধড়ক মারধর করে টাকা এনে দিতে বাধ্য করে। মারধরের এক পর্যায় কাজল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। খবর পেয়ে বাবার বাড়ীর লোকজন কাজলকে উদ্ধার করে মঙ্গলবার রাতে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এদিকে বেল্লাল প্যাদা কাজলকে বিয়ের দুই বছর পূর্বে পার্শ্ববর্তী গ্রামের হাওয়া নামের এক মেয়েকে প্রথম বিয়ে করে। ওই স্ত্রীকে বেল্লাল টাকার জন্য নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয়। এরপরে বেল্লাল প্রেমের ফাঁদে ফেলে কাজলকে দ্বিতীয় বিয়ে করে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার গৌরাঙ্গ হাজড়া বলেন, অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ কাজল বেগমের মুখের বামপাশে ফোলা জখম, তলপেটে ব্যথা ও সারা শরীরে ফুলা জখম রয়েছে।
গৃহবধূ কাজল বলেন, বিয়ের পর থেকে বেল্লাল আমাকে নির্যাতন করে আসছে। যখনই নেশার টাকার প্রয়োজন হয় তখনই আমাকে মারধর করে বাবার বাড়ী থেকে টাকা এনে দিতে বাধ্য করে। বিয়ের চার বছরে অর্ধশতাধিক বার মারধর করেছে। তিনি আরও বলেন গত কোরবানীর ঈদে আমার বাবার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে দেড় লক্ষ টাকা ব্যবসা করবে বলে আমাকে এনে দিতে বলে। বাবা বাড়ী থেকে টাকা এনে দিতে না পারায় আমাকে মারধর করেছে।
বেলাল প্যাদা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতের কথা অস্বীকার করে বলেন, বিয়ের আগে টাকা দেয়ার কথা ছিল। ওই টাকা আনতে সোমবার বাবার বাড়ীতে যায়। কিন্তু টাকা না আনায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায় একটি থাপ্পর দিয়েছি মাত্র।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোঃ নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২৯ আগস্ট