আমতলী হাসপাতালে স্ত্রীর লাশ ফেলে পালাল স্বামী!
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করিডরে গৃহবধূ মারিয়া আক্তারের (২০) লাশ ফেলে পালাল স্বামী বেল্লাল হাওলাদার। তিন ঘণ্টা পর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমতলী উপজেলা মাইঠা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আমতলী থানায় অপমৃত্যু মামলা করে শুক্রবার সকালে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত মারিয়া আক্তার কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ গ্রামের মো. নজির হাওলাদারের মেয়ে।
জানা গেছে, এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মারিয়া আক্তারের সঙ্গে আমতলী উপজেলার মাইঠা গ্রামের রশিদ হাওলাদারের ছেলে বেল্লাল হাওলাদারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বর্ণালঙ্কারসহ সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দিয়ে জামাতা বেল্লালের হাতে মারিয়াকে তুলে দেয়।
বিয়ের পর থেকে স্বামী বেল্লাল হাওলাদার, শ্বশুর আবদুর রশিদ হাওলাদার ও শাশুড়ি রূপবানী বেগম যৌতুকসহ বিভিন্ন অজুহাতে নির্যাতন করে আসছিল। বিয়ের ছয় মাসে জামাতার মন জোগাতে বাবা নজির হাওলাদার বিভিন্ন সময় ২০ হাজার টাকা যৌতুক দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হয়নি জামাতা বেল্লাল হাওলাদার।
গত মঙ্গলবার স্ত্রী মারিয়াকে ১০ হাজার টাকা আনার জন্য বাবার বাড়িতে পাঠায়। টাকা নিয়ে আসতে না পারায় স্ত্রী মারিয়াকে স্বামী বেল্লাল বৃহস্পতিবার বিকালে মারধর করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিষপান করেন মারিয়া।
তাৎক্ষণিক মারিয়াকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ওই হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান মারিয়া।
পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে লাশ আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাশ রেখে স্বামী বেল্লাল হাওলাদার পালিয়ে যান। তিন ঘণ্টা লাশ ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করিডরে পড়ে থাকে।
আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মারিয়ার বাবা নজির হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, গত মঙ্গলবার ১০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য মারিয়াকে আমার বাড়িতে পাঠায়। ওই টাকা আমি দিতে পারিনি। এ টাকা না পেয়ে আমার মেয়েকে মেরে মুখে বিষ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার মেয়েকে হত্যা করে ওরা আমাকে খবর দেয়নি। আমি অন্য লোকের মাধ্যমে খবর পেয়ে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে যদি হত্যাই না করত, তবে কেন হাসপাতালে লাশ রেখে বেল্লাল পালিয়ে যাবে। আমি আমার মেয়ে হত্যাকারীদের বিচার চাই।
গৃহবধূ মারিয়ার শাশুড়ি রূপবানী বেগম মারধরের কথা অস্বীকার করে জানান, সবার অজান্তে গৃহবধূ মারিয়া বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে।
আমতলী থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন মিলন বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।