মানব সম্পদ উন্নয়ন ছাড়া, অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব নয়
বর্তমান সময়ে একটি বহুল প্রচলিত কথা হলো মানব সম্পদ উন্নয়ন। আধুনিক অর্থে মানব সম্পদ উন্নয়ন হল মানুষের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্বিকরণ অর্থাৎ, উৎপাদন কর্মে প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে মানুষের কারিগরী দক্ষতা বা ব্যবহারের উপযোগিতা বৃদ্বিকরণ।
মানবসম্পদ উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের জনগোষ্ঠী একটি বিশাল সম্পদে পরিণত হতে পারে।মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে একটি মানবগোষ্ঠীর সুপ্ত প্রতিভা, প্রচ্ছন্ন শক্তি, লুকায়িত সামর্থ্য, যোগ্যতার প্রসার ঘটে। মানুষকে যেখানে সম্পদ হিসেবে ধরা হয় সেখানে তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটে অন্যথায় তা ব্যর্থ হবে।
একটা সময় মানুষকে সম্পদ নয় বরং সংকট বলে মনে করা হতো। কিন্তু সেই ধারণা এখন সম্পূর্ণ ভাবে পরিবর্তন হয়েছে। কারণ, একটি দেশের অভ্যান্তরীন সম্পদের মধ্যে মানব সম্পদই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। কেবলমাত্র মানুষের দ্বারাই সবকিছুর যথপোযুক্ত ব্যবহার এবং পরিচালনা সম্ভব। আর এই পরিচালনার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন কর্মদক্ষ, মেধাবী ও সৃষ্টিশীল মানব সম্পদ। বর্তমান বিশ্বে মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং তথ্যপ্রযুক্তির যে অকল্পনীয় বিকাশ ঘটেছে। তা আমাদের জন্য বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে একথা সত্য কিস্তু এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গিয়ে আমাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কঠিন চ্যালেঞ্জের। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই তীব্র প্রতিযোগিতায় সফলভাবে টিকে থাকতে দক্ষ মানব সম্পদের গুরুত্ব অপরিহার্য।
বাংলাদেশ সরকার কতৃক গৃহীত ভিশন-২০২১ ইতিমধ্যে জাতিসংঙ্গ থেকে শর্তসাপেক্ষ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। যার জন্য ছয় বছর তাদের তত্ত্বাবধানে থেকে তাদের শর্ত পূরণ করতে হবে। তাহলে কাগজে কলমে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাব। কিন্তু এই বিশাল চ্যালেন্স মোকাবিলা করতে হলে আমাদের একটি দক্ষ কর্মি বাহিনী যে দরকার তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই ।
কিন্তু আমাদের দেশে এখন প্রযন্ত বেশ কিছু সিমাবদ্ধতার কারনে আশানুরুপ দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে ওঠেনি। যার প্রধান প্রধান কিছু কারণের মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা অন্যতম। আমাদের দেশে ব্যাপক হারে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার মান এখনো প্রযন্ত আশানুরুপ বৃদ্ধি পায়নি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষার মান ভালো মনে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা অনেক নিম্নমানের। যেখানে শ্রীলঙ্কা, ভারত ও নেপাল বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। যার কারণে খুব স্বল্প বিষয়ে এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে। যার কারণে দেশে শিক্ষিত বেকার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
একটি দেশে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে সর্বপ্রথম ঐদেশের চাহিদামাফিক বিভিন্ন বিষয়ে মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় ইন্টারনি ও মাঠ পর্যায়ে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কোন কোন বিষয়ে কত সংখ্যক গ্রাজুয়েট দরকার তা পরিকল্পনা করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে সেই অনুযায়ী বিন্যস্ত করতে হবে। তবে কাজের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়াই মানুষের দক্ষতা অধিক অর্জিত হয়। এইজন্য মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি কর্মপরিবেশও উন্নত ও আধুনিক করতে হবে। তাছাড়া,সাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উন্নয়নের উপর যথাযাথ নজড় দিতে হবে।
অন্যদিকে, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক যেহেতু নারী তাই দেশের এই বিশাল জনসংখ্যাকে উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপদ কার্জপরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।
আবার, জনশক্তি রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতেছে। তাই এই খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ার লক্ষে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। যুব ও ক্রিড়া উন্নয়ন সংস্থাকে মাঠ পর্যায় আরো গতিশীল করে দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে উদ্ভুদ্দ করতে হবে ।
মনে রাখতে হবে, দেশে দক্ষ কর্মি বাহিনী থাকলে বিদেশি উদ্যেক্তারা দেশের অভ্যান্তরীন বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়। আর যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বৈদেশিক বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম।
তাই একথা বলা যায় যে,মানব সম্পদ একটি দেশের উন্নয়নের চালিকা শক্তি। কোন দেশের জনসংখ্যা যদি অশিক্ষিত, অদক্ষ হয় তাহলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব না।পাশ্চাত্যে আমরা বিভিন্ন দেশের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাই, যে সব দেশের জনশক্তি শিক্ষিত ও দক্ষ ,যে সব দেশ জনসংখ্যা কে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং সেসব দেশ অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে গিয়েছে এবং সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তাই একটি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন ব্যতীত কোন বিকল্প নেই।
মামুন আকন
সাংবাদিক ও কলাম লেখক
mamunakon94@gmail.com
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/৮ আগস্ট