‘পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই’ বরগুনায় নির্মিত হচ্ছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৮

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে নেয়াবরগুনার খোট্রার চর নামক স্থানে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোধন ছাড়াই গড়ে উঠছে তাপবিদ্যুত কেন্দ্র। পায়রা নদীর শেষাংশ, বুরিশ্বর নামে সমুদ্রে মিশেছে যেখানে। প্রজনন মৌসুমে সমুদ্রের লবণ পানি থেকে উঠে এসে মা ইলিশ ডিম ছারে এখানে। নদীপারের খোট্টার চরে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে এই নদীতে আসবে কয়লা ভর্তি জাহাজ। আর নদীপাড়ে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনকালে নদীর পানি শুধু উত্তপ্তই হবে না,দুষিতও হবে। যার বড় প্রভাব পরবে ইলিশের ওপর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বরগুনায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে আইএসও টেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানির বিরুদ্ধে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নির্মাণ করা হলে ধ্বংস হবে বন, নষ্ট হবে ইলিশের প্রজননস্থান। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে ইতোমধ্যে আন্দোলন শুরু করেছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা। আর স্থানীয় প্রশাসন বলছে, কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র দেখায়নি কোম্পানিটি।

বরগুনার তালতলীর খোট্টার চরের আশেপাশে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বনাঞ্চল। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন নামে পরিচিত টেংরাগিরি বনও রয়েছে মাত্র ১ থেকে ২ কিলোমিটারের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাড়িয়ে তুলবে অত্র এলাকার তাপমাত্রা। পানি আর মাটি দূষণের ফলে মরতে শুরু করবে বনাঞ্চল, বাসস্থান হারাবে বন্য প্রাণী।

এসব কারণে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। বরগুনার স্থানীয় সনাক’র সভাপতি আব্দুর রব ফকির বলেন, এই প্রকল্পের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তাদের নিয়ে আমরা মানববন্ধন করব।

এবিষয়ে বরগুনা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান সৈয়দ শাহ-আলম বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হলে, এতে সেখানের মাটির গুণাগুণ পরিবর্তন হয়ে যাবে। দূষিত মাটিতে উদ্ভিদ ভালো হওয়ার কথা নয়।’

এ বিষয়ে ক্যামেরার আই এসও টেক কোম্পানির পরিচালক মুঠোফোনে জানান, কাগজপত্র ও বক্তব্য দিবে ঢাকা অফিস। তবে তিনি ঢাকা অফিসের ঠিকানা জানাননি।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো: মোখলেছুর রহমান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই জেলা প্রশাসনকে শুধু অবগত করেছে আই এসও টেক ইলেক্ট্রিফিকেশন কোম্পানিটি। তবে ছাড়পত্র না দিলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন ।

তিনি আরো বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্রসহ অন্যান্য কাজগপত্র তারা আমাদের কাছে উপস্থাপন করবে। যদি কাগজপত্র ঠিক না থাকে তবে আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।

এদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে জার্মানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসছে। সেখানে বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে একের পর এক নির্মাণ হচ্ছে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। অথচ সমুদ্রপারের প্রবাহমান বাতাসকে কাজে লাগিয়ে বায়ু বিদ্যুৎ, পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে পানি বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ করা হলে ধ্বংস হবে না পরিবেশ, বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে বাংলাদেশ।

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/৩০ জুলাই

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)