শুভ জন্মদিন ডলি জহুর
ছোটপর্দা কিংবা বড়পর্দায় এক অনবদ্য অভিনেত্রীর নাম ডলি জহুর। পর্দায় তাকে সবসময় প্রাণবন্ত হিসেবে পাওয়া যায়। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে মুগ্ধ করে রেখেছেন দর্শকদের। আদ্যোপান্ত তিনি একজন পেশাদার শিল্পী একইসঙ্গে চমৎকার বন্ধু সুলভ একজন মানুষ। এ প্রজন্মের তারকারা তাকে মা বলেই ডাকেন। তিনিও স্নেহ আর মায়ায় সবাইকে কাছে টেনে রাখেন। আজ নন্দিত এই অভিনেত্রীর জন্মদিন।
এবারের জন্মদিনটি দেশের বাইরে কাটছে ডলি জহুরের। ছয় মাসের জন্য দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া উড়াল দিয়েছিলেন গেলো ফেব্রুয়ারিতে। সেখানে তার একমাত্র ছেলে রিয়াসাত ও তার স্ত্রী রীতা থাকেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তাদের ঘর আলোকিত করে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছিল। সেখানেই তিনি পরিবারের নতুন অতিথিকে নিয়ে এবারের জন্মদিন উদযাপন করবেন।
অভিনয় জীবনে বহু নাটক-টেলিফিল্ম এবং দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর। দর্শকদের কাছে এক মমতাময়ী মা হিসেবে বরাবরই তার উপস্থিতি প্রশংসিত। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা হিসেবে বিবেচনা করেন ডলি জহুর।
১৯৭৪-৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নাট্যদল ‘নাট্যচক্র’তে যুক্ত হন। ওখান থেকেই নিয়মিত অভিনয়ের শুরু।
নিজের অভিনয় নিয়ে ডলি জহুর এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে সিদ্ধান্ত হলো আমাদের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে নাটক করা হবে। আমি যেহেতু এলাকায় নাটক করতাম ভাবছিলাম নাটকে নাম লিখাব; তার আগেই শেখ কামাল ভাই (বঙ্গবন্ধুপুত্র) বলল, ‘তুই না নাটক করিস, এখানে নাম লিখ।’ বিভাগের এই নাটকে অভিনয় করতে দেখেই হয়তো হামিদ ভাই বা নাট্যচক্রের কেউ আমাকে নাট্যচক্রে নিয়ে আসেন। নাট্যচক্রে প্রথম ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নাটকে অভিনয় করি। ওখান থেকে পরে আমার এক বন্ধুর (আমার হাজবেন্ড) সঙ্গে গেলাম কথক নাট্যগোষ্ঠীতে। ওখানে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ করলাম। এই নাটক বেশকিছু প্রদর্শনীর পর বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে মামুন ভাই (মামুনুর রশীদ) আমাকে তার বাংলা থিয়েটারে ‘মানুষ’ নাটকে কাজ করার কথা বলেন। মামুন ভাই জানালেন আমাকে মাথায় রেখে স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন। আমি মানুষ নাটকে কাজ শুরু করলাম। নাট্যচক্রের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ম. হামিদ ভাই আর ভাবী আমাকে ‘অনুস্বারের পালা’ নাটকে অভিনয় করতে বললেন। এ নাটকেও কাজ করলাম। তবে ‘মানুষ’ নাটকে নিয়মিত শো করছিলাম। মানুষ নাটকের শো করতে একবার গেলাম দেশের বাইরে। ওখানে আরণ্যকের ‘ইবলিশ’ নাটকেরও শো হয়। নাজমা ভাবীর অবর্তমানে ‘ইবলিশ’ নাটকেও অভিনয় করলাম। পরে দেশে এসে আরণ্যকের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকে প্রিন্সেস বলাকার চরিত্রে অভিনয় করলাম। এভাবেই আরণ্যকের কর্মী হয়ে গেলাম। তখন অভিনয়ে বেশ নিয়মিত আমি।’
এরপর টিভি ও চলচ্চিত্রে ব্যস্ততা বেড়েছে এই অভিনেত্রীর। আশির দশকে হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘এইসব দিন রাত্রি’ নাটকে অভিনয় করে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন ডলি জহুর। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অসাধারন’। অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক-ছবিতে তার অভিনয় কালজয়ী হয়ে আছে। তারমধ্যে ‘আগুনের পরশমনি’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ইত্যাদি ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৯২ সালে ‘শঙ্খনীল কারাগার’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান।
প্রয়াত অভিনেতা জহুরুল ইসলামের সঙ্গে ডলি জহুরের বিয়ে হয় ১৯৭৬ সালের ৫ নভেম্বর। বিয়ের নয় বছর পর তাদের ঘর আলোকিত করে রিয়াসাতের জন্ম হয়। ডলি জহুর তার স্বামীকে হারান ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর। সেই থেকে জীবনের কঠিন সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে একমাত্র সন্তান রিয়াসাতকে মানুষ করেছেন।
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৭ জুলাই