বেসরকারী ক্লিনিকপাথরঘাটায় এ্যানেস্থেসিয়া ও গাইনী চিকিৎসক ছাড়াই সেবা, মৃত্যু ঝুকিতে রোগীরা
দক্ষিনের প্রত্যান্ত অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটা। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। চিকিৎসার নমে অপচিকিৎসাই প্রতারিত হচ্ছে হাজারো মানুষ। পাথরঘাটায় ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে বেসরকারী ক্লিনিক। প্রত্যান্ত অঞ্চলের নিম্ন অয়ের মানুষ কম খরচে এসব ক্লিনিকে এসে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এ সুযোগে এসব ক্লিনিকের মালিকরা হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। চিকিৎসার নামে দেয়া হচ্ছে অপটিকিৎসা। ভুলে ভরা চিকিৎসায় অনেকের মরন পথ বেছে নিতে হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলার হাসপাতাল সড়কের দুপাশে গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক গুলোতে স্থায়ী চিকিৎসকের বিপরিতে ভাড়াটে ভুয়া চিকিৎসক দ্বারা সিজারিয়ান ও জটিল অপারেশনসহ নানা রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। ভাড়াটে হাতুরে চিকিৎসক জটিল অপারেশন করেই স্থান ত্যাগ করায় ওই সকল রোগী চিকিৎসক পর্যাবেক্ষনে না থাকার কারনে অনেক সময় সমস্যার সম্মুক্ষিন হয়ে পরেন। অনেক সময় দেখা যায় জটিল অপারেশনের রোগীর সমস্যা হলে স্থায়ী ভাবে ডাক্তার না থাকায় রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে বরিশালসহ অনান্য সাস্থানে পাঠাতে বাধ্য হয়। একারনে দেখা যায় অনেক রোগী মৃত্যৃর কোলে ঢলে পরেন। অপরদিকে অপারেশনের সময় রোগী অজ্ঞান করার জন্য এ্যনেস্থেসিয়ার ডাক্তার প্রোয়োজন হলেও সে কাজ ম্যানেজাররাই করে থাকেন বলে জানা গেছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে শাপলা ক্লিনিকে ভারাটে চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলেন তাসলিমা বেগম। তার স্বামী মো. ইউসুব আলী পাথরঘাটা নিউজকে বলেন, আমার স্ত্রীর জরায়ূতে সমস্যা হলে শাপলা ক্লিনিকের নিলে ডাক্তার বলেন জরায়ূতে সমস্যা তাই তারা অপারেসনের কথা বললে সেখাইে অপারেশন করা হয়। অপারেশন করলে তারা ভুলে পায়ূপথ সেলাই করে বন্ধ করে দেন। পরে সে গুরুতর অসুস্থ্য হলে বরিশাল নিয়ে গেলে সেখাইে তার মুত্যু হয়।
মৃত শুষমার স্বামী জয়ন্ত পাথরঘাটা নিউজকে বলেন, শাপলা ক্লিনিকে আমার স্ত্রীর অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম নেয়ার সময় রক্তনালী কেটে ফেলা হয়। যার জন্য অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল মেডিকেলে পাঠালে সেখানে তার মুত্যু হয়। চরদুয়ানী ইউনিয়নের তাফাবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আছমার মা হাজেরা বেগম জানান, শাপলা ক্লিনিকে অস্ত্রপচারে আমার মেয়ে মৃত্যু হলে থানায় মামলা করা হয় যা বর্তমানে আদালতে চলমান আছে।
ভুক্তভোগী ছুমাইয়া পাথরঘাটা নিউজকে বলেন, গত ২৯ মে শাপলা ক্লিনিকে আমার সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হলে পরে সিজারয়ানের সেলাইয়ে ইসফেকশন হয় পরে আবার সেথানে আসলে দিতীয়বারের মত অপারেশন করেন তারা। কিছুদিন পরেই একই সমস্যা হলে আমার স্বামী মালিকের কাছে জানতে চাইলে সে চড়ায হয়ে আমার স্বামীতে মারধর করে।
অপর ভুক্তভোগী এলাচি বেগম পাথরঘাটা নিউজকে বলেন, আমার জরায়ূতে সমস্যা হলে শাপলা ক্লিনিকে গেলে তারা অপারেশন করেন এবং তারা আমার পেটের ভিতর প্রশ্রাবের থলিতে পোচ লাগায় এবং সেই থেকে আমার প্রশ্রাব নামতেই থাকে এ নিয়ে আমার স্বামীর সংসার ভেঙ্গে যায়। পরে আমি ঢাকা গিয়ে অপারেশন করে এখন মোটামুটি শুস্থ্য হয়েছি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাথরঘাটা হাসপাতাল সড়কের দুপাশে ছায়ারমত গড়ে গচিয়ে ওঠা শাপলা ক্লিনিক, দোয়েল ক্লিনিক, মাজেদা ক্লিনিক ও সৌদি প্রবাসী ক্লিনিক রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ক্লিনিকেই প্রাথমিক অনুমোধন থাকলেও সম্প্রতি অপচিকিৎসার কারনে রোগীর মৃত্যৃ হওয়ায় পাথরঘাটা সার্জিক্যাল ক্লিনিক, নাইমা কবির ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব ক্লিনিকে স্থায়ী চিকিৎসক এবং দক্ষ সেবিকা না থাকায় ম্যানেজার এবং মালিকের ব্যাবস্থাপত্রেই চলে চিকিৎসারত রোগীরা। সবশেষ ১৪ জুলাই সৌদি প্রবাসী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় সালমা নামের এক প্রসুতি মায়ের মৃত্যু অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।
সালমার স্বামী মনির হোসেন পাথরঘাটা নিউজকে জানান, আমার স্ত্রী সালমা বেগমের প্রসব জনিত ব্যাথা অনুভব হলে গত ১৩ জুলাই বিকেলে পাথরঘাটা সৌদী প্রবাসি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে রাত অনুমান দেড়টার দিকে চিকিৎসক রুনা রহমান অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সিজার করান। ঘন্টা খানিক পর অপরাশেন থিয়েটার থেকে বের করে সালমার হাইপ্রেসার বলে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলে। তাৎক্ষনিক ক্লিনিক কতৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স ভারা করে দেন। স্বজনদের সন্দেহ হলে নিকটবর্তী পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আনোয়ার উল্যাহর কাছে রোগির সবশেষ অবস্থা পরীক্ষার জন্য গেলে তিনি সালমাকে মৃত্যূ ঘোষনা করেন এবং বলেন, ১ থেকে দেড় ঘন্টা আগে রোগী মারা গেছে।
এবিষয়ে শাপলা ক্লিনিকের মালিক মকবুল হোসেন মিলন সকল অভিযোগ অস্বীকার করে পাথরঘাটা নিউজকে বলেন, অপারেশনের পর ইনফেকশন হতেই পারে। তবে ইনফেকশন হলে আমরাবই বরিশাল নিয়ে যাব। এ্যানেস্থিসিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান তার ক্লিনিকের ম্যানেজার মিলনই ডিপ্লোমা ডাক্তার। সে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই সকল ওষুদ সরবরাহ করে থাকেন।
এবিষয়ে বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. হুমায়ুন শাহীন খাঁন পাথরঘাটা নিউজকে বলেন, আমি সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নেয়ার পরে এখন পর্যন্ত পাথরঘাটায় পরিদর্শন করিনি। বেসরকারী ক্লিনিকে অপচিকিৎসার বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই পরিদর্শন করে বেআইনী কিছু প্রমান পাওয়া গেলে আইনী ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৬ জুলাই