সুন্দরবনে শ্যামনগর থানা পুলিশের হরিণ শিকার!
বিশাল এক বোটে ১৬ খণ্ড বরফ নিয়ে গভীর সুন্দরবনে হরিণ শিকার করলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ছয় পুলিশ সদস্য ও তাদের সহযোগীরা। কিন্তু মধ্যরাতে বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়ে শেষ পর্যন্ত শিকারি পুলিশ সদস্যরা হয়ে গেলেন ‘অভিযানকারী’। আর তাদের হাতে গ্রেফতার হল দুই শিকারি। জব্দ হয়েছে তিনটি শিকারকৃত হরিণ ও তিনটি বন্দুক।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে। হরিণ শিকারে নিরাপত্তা ও নেতৃত্বদানকারীরা হলেন- শ্যামনগর থানার এসআই লিটন, এসআই হাফিজ, এএসআই মামুন ও ফজলুল করিম এবং কনস্টেবল আলমগীর ও কনস্টেবল উত্তম কুমার। তারা গ্রেফতার দেখালেন শ্যামনগরের কদমতলির হরিণ শিকারি মঞ্জু ও পাতাখালির মহিবুল্লাহকে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, শ্যামনগর থানার ছয় পুলিশ সদস্য তিনদিন আগে সুন্দরবনের গহিনে বোট নিয়ে হরিণ শিকারের লক্ষ্যে একটি শিকারি দলের নেতৃত্ব দেন। ওই বোটে ছিল ভাড়াটে শিকারি পাতাখালির আজিজ, রমজাননগর ইউপির সাবেক মেম্বর শিকারি আনারুল ও হরিনগরের শিকারি আবদুল আলিম। এছাড়া ছিল কয়েকজন শ্রমিক। তিনদিনে অন্তত দশটি হরিণ শিকার করে বরফাচ্ছাদিত করে রোববার রাত ১২টার দিকে ফিরে আসছিল শিকারি দলটি। কিন্তু বিধি বাম। খবর পেয়ে বন বিভাগ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা বনের চুনকুড়ি নদী ও দোবেকির মধ্যবর্তী স্থানে শিকারি পুলিশ দলের মুখোমুখি হয়। তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে বোট, হরিণ বন্দুক ও পুলিশ সদস্যসহ সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় বন বিভাগের দোবেকি স্টেশনে। সেখানে বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডকে বোঝানো হয়, পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক এবং হরিণ ও বন্দুক জব্দ করেছে। পুলিশ সদস্যরা এ সময় হরিণ শিকারের অভিযোগ বেমালুম অস্বীকার করে জানান, তারা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়েছেন মাত্র। দোবেকি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মোবারক আলি জানান, গভীর রাতে সবাইকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে তারা সবাই চলে গেছেন শ্যামনগর থানার উদ্দেশ্যে।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বসিরুল ইসলামের কাছে সোমবার ভোরে টেলিফোন করা হলে তিনি জানান, ‘আমি খবর পেয়েছি দুটি শিকার করা হরিণ ও তিনটি বন্দুক জব্দ করেছে পুলিশ।’
তিনি আরও জানান, ‘পুলিশ বলছে তারা অভিযান চালাতে গিয়েছিল। তাদের কথা তো আর অবিশ্বাস করা যায় না।’
জানতে চাইলে শ্যামনগর থানার ওসি সৈয়দ মান্নান আলি জানান, ‘সুন্দরবনের ঘটনাস্থল থেকে আমার থানার এসআই লিটন জানিয়েছেন রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেঘনা নদীর মোহনায় একটি বোট দ্রুত গতিতে যেতে দেখে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। পরে ওই বোটে তল্লাশি চালিয়ে ৩টি শিকারকৃত হরিণ ও তিনটি একনলা বন্দুক পাওয়া যায়। এ সময় গ্রেফতার করা হয় আজিজ ও আনারুলকে। অন্যরা পালিয়ে যায়।’
ওসি আরও বলেন, এ বিষয়ে বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ তারাও একই স্থানে অভিযান চালাতে গিয়েছিলেন। তবে ওসির কাছে জানতে চাওয়া হয় এসআই লিটন যে বোট নিয়ে কথিত অভিযান চালান সেটিতে ১৬ খণ্ড বরফ কেন ছিল এবং তারা তিনদিন আগে হরিণ শিকারি দলের সঙ্গে কেন বনে গেছেন এর কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি ওসি। তবে তিনি হরিণ শিকারে তার পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।(সূত্রঃ যুগান্তর)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১০ জুলাই