বেড়েই চলেছে চালের দাম
রাজধানীর খিলগাঁয় অবস্থিত সুপার শপ স্বপ্ন। ২৫ কেজি চালের একটি বস্তা দেখিয়ে ক্রেতা এর দাম জানতে চান। বিক্রয়কর্মী জানিয়ে দেন দুই হাজার টাকা। ক্রেতা আবার জানতে প্রশ্ন করেন, ‘কত’? উত্তর আসে দুই হাজার টাকা। কয় কেজি? জবাব দেয়া হয় ২৫ কেজি। তাহলে প্রতি কেজির দাম কত পড়ল? জবাব আসে ৮০ টাকা। কী চাল এগুলো? উত্তর- এক নম্বর নাজির শাইল। ক্রেতার প্রশ্ন, তবে দুই নম্বরটার দাম কত? বিক্রয়কর্মী জানালেন, আমাদের এখানে খোলা নাজির শাইলের দুইটা কোয়ালিটি আছে। একটা ৬২ টাকা কেজি, অন্যটা ৬৬ টাকা। আর মিনিকেট আছে ৫২ এবং ৫৮ টাকা দরে।
চালের এমন উচ্চদাম প্রসঙ্গে বিক্রয়কর্মীর ব্যাখ্যা, আগে চাল আমদানির ওপর কোনো শুল্ক ছিল না। এলসি খুলতে এতদিন কোনো টাকাই লাগত না। সমানে আমদানি হয়েছে, দামও কিছুটা সহনীয় ছিল। নতুন বাজেটে আমদানির ওপর ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই আমদানি প্রায় বন্ধ। সুযোগ বুঝে মিলের মালিকেরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। স্বাভাবিক কারণেই পাইকারি এবং খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ছে। বাজেট ঘোষণার পর থেকেই চালের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতদিন অনেকে মনে করেছিলেন বাজেট পাসের আগে এ বিষয়ে কিছুটা হলেও সংশোধনী আনা হবে। কিন্তু গতকাল সংশোধনী ছাড়াই বাজেট পাস হলে এক দিনেই দাম বেড়েছে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা।
খুচরা বাজারে গতকাল মোটা স্বর্ণা চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৮ থেকে ৪২। পাইজাম ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও আগের সপ্তাহে এ চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ টাকা এবং নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহে চিকন চালের দাম কেজি প্রতি আরো দুই থেকে চার টাকা কম ছিল। গত বছর বন্যার আগে মোটা চালের কেজি ছিল ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা ও চিকন চালের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। বন্যার পর মোটা চালের দাম বেড়ে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকায় ওঠে। চিকন চাল ওঠে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। কিন্তু তি সামাল দিতে যে পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে তাতে চালের দাম কমার কথা থাকলেও আগের দামে আর ফিরে আসেনি।
গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা। কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা দাম বাড়িয়েছেন মিলমালিকেরা। এর অর্থ দাঁড়ায় মিলমালিকেরা দাম যা বাড়িয়েছেন পাইকারি আড়তদাররা বাড়িয়েছেন তার চেয়ে বেশি। খুচরা বিক্রেতারা বাড়িয়েছেন পাইকারদের চেয়েও বেশি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো, শুল্কমুক্ত উপায়ে আমদানি করে মজুদ রাখা লাখ লাখ টন চালের দাম আমদানিকারকেরা কোনো কারণ ছাড়াই বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সুযোগে মিলমালিকরাও দেশী চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ যে কৃষকের স্বার্থের কথা ভেবে চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের ঘরে কোনো ধান নেই। ধান চলে গেছে মধ্যস্বত্বভোগী এবং মিলমালিকদের নিয়ন্ত্রণে।(সূত্রঃ নয়াদিগন্ত)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১ জুলাই