দুই ফাইনালিস্ট একই স্টেডিয়ামে পথ হারাল

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৭:৫৮ এএম, ১ জুলাই ২০১৮

দুই ফাইনালিস্ট একই স্টেডিয়ামে পথ হারালমাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট। কাকতালী হলো দুই দলের শেষ খেলাটা হয়েছে রাশিয়ার কাজান অ্যারেনায়।

এই কাজান অ্যারোনায় গত ২৭ জুন ফুটবলবিশ্বকে চমকে দিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয় বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো পুঁচকে দলের কাছে ২-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয় জোয়াকিম লোর শিষ্যদের। খুব স্বাভাবিকভাবেই নীরবতা নেমে এসেছে জার্মান সমর্থক মহলে। এমন হারকে ‘ঐতিহাসিক লজ্জা’ বলছে জার্মান গণমাধ্যম।

গ্রপপর্বের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করে জার্মানি। দ্বিতীয় ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে ইনজুরি টাইমে খুব কষ্ট করে জয় পায় তারা। শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে বিধ্বস্ত। দলের বিদায়ের পর জার্মানিজুড়ে চলছে আহাজারি। সঙ্গে হতাশা-ক্ষোভ। কিকার্স অনলাইন শিরোনাম করেছে, ‘ঐতিহাসিক পতন! জার্মান চ্যাম্পিয়নদের বিদায়’।

টেলিভিশন চ্যানেল এআরডি জার্মানির বিদায়কে বর্ণনা করেছে ‘ঐতিহাসিক বিপর্যয় হিসেবে’। আর দার স্পিজেল’র ভাষা আরও ঝাঁঝালো, ‘ঐতিহাসিক লজ্জা!’দার স্পিজেল লিখেছে, ‘বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার জার্মানি জাতীয় দল প্রথম রাউন্ড টপকাতে ব্যর্থ’।

স্যুডুৎস্কি জিতুং জার্মানির হারকে এক কথায় বলেছে ‘পতন’। বিল্ড শিরোনাম করেছে, ‘বিদায়, আমাদের দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ বাস্তব হয়ে উঠল’।

আজ ৩০ জুন আর্জেন্টিনার হারটি জার্মানির মতো না হলেও পতন প্রায় একই রকম। অবশ্য তাদের শান্তনা ফ্রান্সের মতো বড় দলের সাথে হেরেছে মেসির দল। খেলার শুরুতে একেকটা আক্রণ ছিল টর্নেডোর মতো। প্রবল গতিতে ধেয়ে আসা নামগুলো এমবাপে-পগবা-গ্রিজমান নয়; হারিকেন ঝড়! আর তাতেই তছনছ আর্জেন্টিনার রক্ষণ।

বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচে শনিবার কাজানে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দিল ফ্রান্স। শেষ আটে যাওয়ার আগে এই বার্তাও দিয়ে রাখল, কেন এবার তাদের অন্যতম ফেবারিট ধরা হচ্ছে। একঝাঁক প্রতিভায় ঠাসা দলটার সামনে শনিবার দাঁড়াতেই পারেনি লিওনেল মেসির দল। ৪–৩ ব্যবধানটা একটু ভুলই বোঝাচ্ছে। তবু শেষ মুহূর্তের পাল্টা লড়াইটাই যা একটু সান্ত্বনা হয়ে থাকল আর্জেন্টিনার।

অথচ ১৩ মিনিটে আঁতোয়ান গ্রিজমানের সৌজন্যে পেনাল্টিতে ফ্রান্স এগিয়ে যাওয়ার পরও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আর্জেন্টিনা। খেলার একেবারেই স্রোতের বিপরীতে ৪১ মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার আচমকা শটে এগিয়ে সমতা ফিরিয়েছিল তারা। ১-১ সমতায় শেষ হওয়া অর্ধে ম্যাচে দাপটে তখনো ফ্রান্স এগিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটেই বক্সে মেসির শট ফ্লিক করে জালে জড়িয়ে দেন গ্যাব্রিয়েল মারকাদো। পিছিয়ে থাকা আর্জেন্টিনাই তখন এগিয়ে। ২-১!

কিন্তু ফ্রান্স চাপে ভেঙে পড়েনি। খেলার ধারও কমায়নি। উল্টো আর্জেন্টিনা একটু বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে গেল। আর সেই সুযোগে ৫৭ থেকে ৬৮, এই ১১ মিনিটে আর্জেন্টিনার জালে তিন গোল! ৫৭ মিনিটে পাভার সমতা ফেরালেন। এরপর এমবাপ্পে শো! ৬৪ আর ৬৮ মিনিটে এই তরুণের জোড়া গোলে ম্যাচ তখনই শেষ! ম্যাচের পরের ১৫ মিনিটে আর্জেন্টিনা যা করল, তা শুধুই গোল না খাওয়ার চেষ্টা। গোটা দুই আক্রমণ নিষ্ফলা থাকল গোলমুখে গিয়ে গড়বড় করে ফেলায়।

শেষ মিনিট কয়েক আর্জেন্টিনা মরণপণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনি। এই না-পারার পেছনে আছেন মেসিও। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে বক্সে একটা শট নিয়েছিলেন। সেখানেও স্কোরটা ৪-৩ হলে আর্জেন্টিনা আরেকটি অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের আশা করতে পারত। পরের মিনিটে বক্সে আবারও তার বাড়িয়ে দেওয়া বলে সার্জিও আগুয়েরো ফিনিশিংটা করতে পারেননি। আগুয়েরো যখন পারলেন, ততক্ষণ ম্যাচ প্রায় শেষ। যোগ করা সময়ে মেসির লম্বা বল থেকে মাথা ছুঁইয়ে হেড থেকে ৪-৩ গোল আগুয়েরো। শেষ বাঁশির আগে বক্সের জটলায় আর্জেন্টিনা আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু এবার আর কেউ মার্কোস রোহো হতে পারলেন না!

কদিন আগে ৩১তম জন্মদিন উদ্‌যাপন করা মেসি শেষের ৭ মিনিটের খেলা আরও কয়েকটি মুহূর্তে দেখাতে পারলে ফলটা অন্য রকমও হতে পারত। কিন্তু এখানেই থেমে যেতে হলো মেসিকে। ৩৫–এ পা রেখে পরের বিশ্বকাপে আসবেন কি না, আন্তর্জাতিক ফুটবলকে এখনই বিদায় বলবেন কি না—এই উত্তরগুলো জানতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে এবারের বিশ্বকাপ এই প্রশ্নও তুলে দিল, মেসির সুবর্ণ সময় পার করে আসা এই দলটি নিজের ফুটবলকে ঢেলে না সাজালে আগামী বিশ্বকাপে থাকতে পারবে তো?

পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১ জুলাই

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)