বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে আর্জেন্টিনা
ওটামেন্ডি ফাঁকায় দাঁড়িয়ে বল রিসিভ করতে পারছেন না। আনমার্ক মেসি ক্রস পাঠাচ্ছেন প্রতিপক্ষের পায়ে। পেরেজ ফাঁকা জাল পেয়েও বল বাইরে মারছেন। আকাশী-নীল জার্সি পরা ১১ জনের শরীরে যেন রাজ্যের চাপ! সেই চাপে ভেঙেচুরে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ০-৩ গোলে হেরে গেছে আর্জেন্টিনা।
১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের শুরুর দুই ম্যাচে জয় পেল না মেসিরা। প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র, আর এই ম্যাচের হার তাদের রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার মুখে ঠেলে দিয়েছে। নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথম দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পেল ক্রোয়েশিয়া। টানা দুই জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে গেল দলটি।
আর্জেন্টিনা এদিন মেসিকে ডানদিকে রেখে ৩-৪-৩ ফর্মেশনে খেলা শুরু করে। আক্রমণে মেসির অন্য পাশে মেজা, মাঝে আগুয়েরো। শুরুর একাদশে ছিলেন না ডি মারিয়া, মার্কোস রোহো এবং লুকাস বিলিয়া। তাদের পরিবর্তে সুযোগ পান মের্কাদো, মার্কোস অ্যাকুইনা এবং এনজো পেরেজ।
সাম্পাওলি আইসল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে খেলিয়েছিলেন ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। মেসি সেদিন সেন্টার মিডফিল্ডার ছিলেন। এদিন ফরোয়ার্ড হিসেবে শুরু করলেও প্রথম ৪৫ মিনিটে কোথায় যে তিনি খেলেছেন, সেটি বুঝে ওঠা যায়নি। এই সময়ে হাতেগোনা কয়েকবার বলের কাছে গিয়েছেন। আগুয়েরো তো শেষ ২১ মিনিটে একবারও বল পাননি! প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর, দ্বিতীয়ার্ধে তিন গোল হজম করে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া আগে চারবার মুখোমুখি হয়েছে। দুইবার জয় ছিল আর্জেন্টিনার, একবার ক্রোয়েশিয়ার। অন্য ম্যাচটি ড্র।
বিশ্বকাপে দুই দলের একবারই দেখা হয়েছে। সেটি ১৯৯৮ সালে। আর্জেন্টিনা ওই ম্যাচে ১-০ গোলে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়।
নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়ামে ৬ মিনিটের মাথায় ক্রোয়েশিয়া প্রথম আক্রমণ করে। ইভান পেরিসিক বক্সের ভেতর বল পেয়ে গোলে শট নেন। আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক উইলফ্রেডো কাবাল্লেরো বাঁদিকে ডাইভ দিয়ে কোনোমতে বাইরে পাঠিয়ে দেন।
আর্জেন্টিনার প্রথম আক্রমণ থেকে দারুণ একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন মেসি। ১২তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে তাকে চোখে রেখে বল পাস করেন এনজো পেরেজ। লাফিয়ে ওঠা বলে তিনি পা দেয়ার আগেই চলে আসেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ড্যানিজেল সুবাসিক।
২১তম মিনিটে বাঁদিক থেকে বল নিয়ে উপরে উঠে দূর থেকেই শট নেন অ্যাকুইনা। উপরের পোস্টে লেগে সেটি বাইরে চলে যায়।
৩০ মিনিটের সময় পেরেজ জাল ফাঁকা পেয়েও বাইরে মারেন! বক্সের ভেতর ক্রোয়েশিয়ার লভেরনের কাছ থেকে বল নিয়ে নেন সালভিও। সালভিও গোলের দিকে শট নিলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে পেরেজের কাছে চলে যায় বল। গোলরক্ষক তখন অনেকটা সামনে চলে আসেন। পেরেজ ফাঁকা জাল পেয়েও বাইরে মারেন।
প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে ক্রোয়েশিয়ার ফরোয়ার্ড অ্যান্টি রেবিচ গোলরক্ষককে ওয়ান-টু-ওয়ান পেয়েও উপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন। মদ্রিচের দারুণ একটি ক্রস ধরে দ্রুত গোলমুখে এগিয়ে যান তিনি। লেফট উইংয়ে আনমার্ক ছিলেন। কিছুটা সামনে এগিয়ে জোরের উপর মারতে গিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন।
আর্জেন্টিনা কতটা নার্ভাস ফুটবল খেলেছে সেটি বুঝতে হলে তাদের প্রথম গোল হজমের দৃশ্যটি দেখতে হবে। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৩তম মিনিটে গোলরক্ষক কাবাল্লেরো বল দিতে চান মের্কাদোকে। তালগোল পাকিয়ে তিনি বল ফেলেন অ্যান্টি রেবিচের সামনে। ক্রোয়েশিয়ান উইঙ্গার ঠাণ্ডা মাথায় ভলিতে বল জালে পাঠিয়ে দেন।
৬১তম মিনিটে আগুয়েরোর বদলি হিসেবে নামা হিগুয়েন বক্সের ভেতর কাটব্যাক করে বল দেন মেজাকে। ৬ গজ দূর থেকে সেটি ঠিক মতো প্লেস করতে পারেননি তিনি। ফিরতি বল চলে আসে মেসির কাছে। তিনিও ঠিকমতো বলে যেতে পারেননি।
৬৮তম মিনিটে পেরেজকে উঠিয়ে দিবালাকে নামান সাম্পাওলি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। বরং ৮০ মিনিটের সময় মদ্রিচের দূর পাল্লার বাঁকানো শটে দ্বিতীয় গোল হজম করতে হয় তাদের।
ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ হয় অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে। রাকিটিচ ফাঁকা জাল পেয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন।(সূত্রঃ দ্যা বাংলাদেশ টুডে)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২২ জুন