বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনাপাথরঘাটায় অবৈধ জালে ধ্বংস করছে রেণু-পোনা (ভিডিও সহ)
পাথরঘাটা নিউজ অনলাইন ডেস্কঃ
পাথরঘাটায় সাগর ও নদীর চরে নিষিদ্ধ মিহি ফাঁসের ‘গড়া জাল’, ‘বেহুন্দী’ ও ‘বেড় জাল’ পেতে ধ্বংস করা হচ্ছে লাখ লাখ মাছের রেণু ও পোনা। বিস্তীর্ণ চরে খাবার খেতে গিয়ে মারা পড়ছে ইলিশের বাচ্চা (জাটকা)। ছোট ছোট ট্রলার দিয়ে নদী মোহনা থেকেও ধরা হচ্ছে জাটকা। বাজারে প্রকাশ্যেই জাটকা বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ গভীর সাগরে মাছ ধরা বড় ট্রলার মালিক সমিতির। ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি আকারের ইলিশকে ‘জাটকা’ বলা হয়।
আট মাস সাগরে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও জেলেরা খাদ্য সহায়তা পায় মাত্র চার মাসের। পাথরঘাটায় নিবন্ধিত ১৪ হাজার জেলের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকে। এসবও জাটকা ধরার অন্যতম কারণ বলে জানা যায়।
এক শ্রেণির অসাধু জেলে সাগর বা নদীতীরবর্তী চরগুলোয় জোয়ার-ভাটার সময় ওই সব নিষিদ্ধ জাল পেতে মাছের বংশ ধ্বংস করছে। এতে এক শ্রেণির প্রভাবশালীর ছত্রচ্ছায়া আছে। প্রশাসন দিনে টহল দিলেও রাতে বেপরোয়া জেলেরা। দুই দিকে বলেশ্বর ও বিশখালী নদী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরবেষ্টিত পাথরঘাটা উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য চর। এই চর ও খালের তীরগুলোয় খুঁটি গেড়ে ‘গড়া জাল’ (স্থানীয় নাম ‘ঘোপজাল’ বা ‘চরগড়া’) পাতা হয়। এক কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় একেকটি জাল। ভাটার সময় জাল খুঁটির নিচে বেঁধে রাখা হয়। ভরা জোয়ারে নদী বা সাগরের লাখ লাখ রেণু, পোনা বা ছোট মাছ বালু ও উদ্ভিদকণা খেতে চরে আসে। তখন ওই জালের ওপরের অংশ খুঁটির মাথায় বেঁধে দেওয়া হয়। ভাটায় পানি শুকিয়ে গেলে জালে আটকা পড়ে ওই সব রেণু, পোনা বা ছোট মাছ। বিক্রয়যোগ্য মাছ তুলে বাজারে নেওয়া হয় আর মরা রেণু বা পোনা ফেলে দেওয়া হয় পানিতে। যেসব জাটকা বাজারে বিক্রি হয় না সেসব শুকিয়ে ফিশমিল ব্যবসায়ীদের কাছে বেচে দেওয়া হয়।
অনুমোদন ছাড়াই সংরক্ষিত বন পেরিয়ে বলেশ্বর ও বিষখালী নদী এবং বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমস্থলে বিস্তীর্ণ চরে শত শত গড়া জাল পেতে রাখা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করেই অবৈধ জাল পাতা হয়।
পাথরঘাটা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান আকন জানান, সংরক্ষিত বনের পাশে চরগুলোয় গিয়ে জাল পাতায় বাধা দিয়েও জেলেদের আটকানো যাচ্ছে না। লোকবল সংকট এর অন্যতম কারণ।
একইভাবে নদী বা সাগর মোহনায় স্রোতের বিপরীতে খুঁটি বেঁধে পাতা হয় শত শত বেহুন্দী জাল। রেণু, পোনাসহ সব মাছ প্রচণ্ড স্রোতের তোড়ে ওই জালে ঢুকে পড়লে আর বের হতে পারে না। বেড় জাল জোয়ারের সময় মাছ চলাচল করে এমন স্থানে দুই দিক থেকে টেনে ছাকনির মতো ছোট-বড় সব মাছ তুলে ফেলে জেলেরা। পরে ছোট্ট মাছ পানিতে ফেলে দেয় বা শুঁটকি আকারে ফিশমিল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। বড়গুলো বাজারজাত করা হয়।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বলেশ্বর ও বিশখালী নদীর বিভিন্ন চর, সাগর মোহনার লালদিয়ার বিস্তীর্ণ চরের কোনো স্থান ফাঁকা থাকে না। জোয়ারের পানিতে মাছ কূলের দিকে এলেই গড়া জাল, বেহুন্দী জাল ও বেড় জালে আটকা পড়ে মারা যায়।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষেদের সদস্য মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘মাছ ধ্বংসকারী নিষিদ্ধ জাল কমে এসেছে। তবে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে পারলে দেশে মাছের আকাল থাকবে না। সরকারের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে জেলেরা অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরে।’
পাথরঘাটা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বেহুন্দী, গড়া জাল ও বেড় জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ হত্যার চেষ্টা করছে এক শ্রেণির জেলে। মৎস্য বিভাগ ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে তাদের প্রতিহতের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। মৎস্য আইনে ওই সব জাল সারা বছর নিষিদ্ধ।’
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির জানান, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং জেলেদের আপৎকালীন নিরাপত্তাবেষ্টনী আরো সংহত করতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহেদ আলী জানান, মাছের রেণু-পোনা রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ ক্রমান্বয়ে সফল হচ্ছে। জনসচেতনতা ছাড়া এসব নিধন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা অসম্ভব।
পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের সব উদ্যোগকে আমরা সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিচ্ছি।(কালের কন্ঠ)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১ মার্চ