শত শত যাত্রীকে অপেক্ষায় রেখে বরগুনার এমপি শম্ভুর ফেরি পারাপার!
প্রচণ্ড গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ। ঘেমে নেয়ে একাকার নারী ও শিশুসহ অসুস্থ রোগীরাও। ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে একান্ত স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে ঘরমুখো শত শত যাত্রী। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
রবিরার (৭ জুন) সন্ধ্যায় বরগুনার ব্যস্ততম আমতলী-পুরাকাটা রুটের ফেরিঘাটের চিত্র এটি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফেরি ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ার নাম নেই। অসহায় যাত্রীরা কারণ জানতে চাইলে ফেরি কর্তৃপক্ষ জানায়, এমপি সাহেব আসবেন তাই ফেরি ছাড়তে দেরী হচ্ছে।
ভুক্তভোগী যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেরি ছাড়ার নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ৪৫ মিনিট পরে নিজের গাড়ি চরে ফেরিঘাটে আসেন বরগুনা-১ আসনের এমপি ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। ততক্ষণে প্রায় দুই শতাধিক যাত্রীসহ একাধিক দূরপাল্লার গাড়ি, লোকাল বাস, জিপ, মাইক্রোবাস নিয়ে ফেরিটি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এ সময় পুলিশি প্রহরায় এমপি শম্ভুর গাড়ি ঘাটে এসে পৌঁছলে যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস এবং বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল নামিয়ে দিয়ে এমপির গাড়ি ফেরিতে উঠানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভুক্তভোগী যাত্রী জানান, ‘একদিকে প্রচণ্ড গরম আরেকদিকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ ফেরি। তার ওপরে প্রায় তিন কিঃ মিঃ প্রশস্ত নদী। সব মিলিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল চরমে’। তিনি বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এমপি শম্ভু যে কাজটি করেছেন তা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি পৃথক ফেরিতে ভিন্নভাবে পার হতে পারতেন।
এ বিষয়ে আমতলী ফেরিঘাটের একজন টোল আদায়কারী পুলীন বাবু (৫৫) বলেন, ‘এমপি সাহেব একটু দেরী করে আসায় যাত্রীদের একটু সমস্যা হয়ে গেছে। গাড়িও ছিল অনেক, গরমও ছিল প্রচুর। সাড়ে ৬টায় ফেরি ছাড়ার কথা থাকলেও এমপি সাহেবের কারণে ফেরি ছাড়তে ছাড়তে সাতটা পেরিয়ে গেছে। তাছাড়া ফেরিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় একটি মাইক্রোবাসসহ বেশ কিছু মোটরসাইকেলও নামিয়ে রাখতে হয়েছে’।
নামিয়ে রাখা মাইক্রোবাসের একজন যাত্রী বলেন, এমপি সাহেবের দেরি করে আসার কারণে যখন ফেরিতে কোনো স্থান ছিল না তখন তাদের গাড়িটি জোরপূর্বক নামিয়ে দেয়া হয়েছে। যথাসময়ে এসেও তারা ওই ফেরিতে যেতে পারেননি। পরে দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করে তাদের পরবর্তী ফেরি পার হতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘শত শত জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করে একজন জনপ্রতিনিধির এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফেরিঘাটের সকল অসহায় যাত্রীরা’।
বরগুনা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু বলেন, ভুক্তভোগী একাধিক যাত্রী তাদের ভোগান্তির কথা তাকে জানিয়েছেন। তবে ফেরিঘাটে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল, কেন দেরি হয়েছিল তা সঠিকভাবে তিনি জানেন না। তবে যাত্রীদের অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে তবে তা হবে দুঃখজনক বলে তিনি জানান। সাহাব উদ্দিন সাবু আরো বলেন, আমতলী ফেরিঘাটে অতিরিক্ত ফেরি থাকে। বিশেষ কোনো কারণে ঘাটে পৌঁছতে দেরি হয়ে থাকলে এমপি সাহেব অতিরিক্ত ফেরি নিয়ে ভিন্নভাবে পার হতে পারতেন।
আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম দেলোয়ার জানান, আমতলী শহরের একজন আওয়ামী লীগ নেতার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে আমতলী এসেছিলেন এমপি শম্ভু। এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন তিনি। ফেরিঘাটের যাত্রীদের ভোগান্তির কথা শুনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন বিষয়টি তার জানা নেই।
এ বিষয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন মিলন বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি শোনেননি। যদি কেউ এমন অভিযোগ করে থাকেন তবে তা সত্য নয়। তবে ফেরি ঘাটে যখন এমপি সাহেবের গাড়ি পৌঁছেছে তখন ফেরি কানায় কানায় ভর্তি ছিল। অনেক কষ্ট করে, ঝুঁকি নিয়ে ফেরিতে এমপি সাহেবের গাড়িটি উঠিয়েছে ফেরিঘাটের লোকজন। তিনি আরো বলেন, এরপরের ফেরির ট্রিপ ছিল এক ঘণ্টা পরে। ওই ফেরিতে উঠতে না পারলে দীর্ঘ এক ঘণ্টা তাকে ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হতো।
এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের এমপি ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু’র সঙ্গে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। (তথ্য সূত্রঃ কালের কন্ঠ)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/১৮ জুন