অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালীদের চাপে নৌযানের নকশার অনুমোদন
নৌযানের নকশার অনুমোদন নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে দেশে। মান নির্ধারণ ছাড়াই নকশা অনুমোদন দেয়া হয়, এ অভিযোগ রয়েছে নৌপরিবহন অধিদফতরের বিরুদ্ধে।
অথচ নৌযানের অনুমোদন পেতে কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয় অথবা শর্ত পূরণ করতে হয়, এ ব্যাপারে কোনো মানদণ্ড তৈরি না করেই নতুন করে আবারও নৌযানের অনুমোদন দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে নৌ-অধিদফতর। প্রাথমিকভাবে ২৯৪টি নৌযানের নকশার তালিকা তৈরি করে কাজ শুরু করা হয়েছে।
বলাবাহুল্য, নকশা অনুমোদনের সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড না থাকায় বর্তমান প্রক্রিয়ায় প্রভাবশালী মহলের চাপ থাকবে। এমনকি প্রাথমিক তালিকা তৈরির সময়ও রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের চাপ সহ্য করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে।
এই চাপ কর্তৃপক্ষ কতটা সহ্য করতে পারবে, এটা এক বড় প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত, নৌযানের নকশা অনুমোদনের জন্য কোনো বাড়তি খরচের প্রশ্ন না থাকলেও এ ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। নকশা অনুমোদন পাইয়ে দেয়ার জন্য একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কথাও শোনা যায়।
আরও স্মরণ করা যেতে পারে, নকশা অনুমোদনে ঘুষ লেনদেনে পরপর দু’জন প্রধান প্রকৌশলী দুদকের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। নৌপরিবহন অধিদফতরে নকশা জমা দেয়া হয় নিবন্ধিত ডিজাইন হাউসের মাধ্যমে। কিন্তু দেখা যায়, নানা কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছানুযায়ী নকশা নাকচ করে অথবা অনুমোদন দেয়।
এককথায় এক ধরনের নৈরাজ্যের কবলে পড়েছে নকশা অনুমোদনের বিষয়টি। কারিগরি কমিটির আদৌ কোনো ভূমিকা রয়েছে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
জানা গেছে, নকশা অনুমোদনের জন্য যেসব আবেদন অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই ঘুষসহ আটক নৌ-প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনের সময় জমা পড়েছিল। সেসব নকশাই নাকি গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি।
নকশা অনুমোদনের সময় যদি শতভাগ সততার আশ্রয় নেয়া না হয়, তাহলে যে নৌযান ও নৌযাত্রীরা আগামীতেও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। লঞ্চ দুর্ঘটনার একটা বড় কারণ নৌযানের ত্র“টিপূর্ণ নকশা ও ফিটনেসের অভাব।
এ পর্যন্ত লঞ্চ দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; কিন্তু দুর্ঘটনা রোধ করা যায়নি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও নৌ-অধিদফতরের উচিত হবে নকশা অনুমোদনের সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড ঠিক করে তার ভিত্তিতে এর অনুমোদন দেয়া। অর্থের বিনিময়ে অথবা প্রভাবশালীদের চাপে নৌযানের নকশার অনুমোদন দেয়া হলে নৌ-পরিবহনে ঝুঁকি রোধ করা যাবে না।