সম্মিলিত উদ্যোগে নারী নির্যাতন ও বৈষম্য বন্ধ করতে হবে
শফিকুল ইসলাম খোকনঃ
সমাজে থেমে নেই নারীর প্রতি অবমাননা নির্যাতন ও বৈষম্য। একের পর এক অবমাননা নির্যাতন সহিংসতার ঘটনা ঘটছেই। নানা ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সমাজ তথা রাষ্ট্র এ ব্যাপারে তেমন উলেস্নখযোগ্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাময়িক যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, পর্যাপ্ত নয় তাও। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের ধর্ষণ ও হত্যা করা হচ্ছে।
এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, তৈরি পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের ১২৬ জন কর্মক্ষেত্রে মৌখিক নির্যাতনের শিকার হন। আর যৌন নির্যাতনের শিকার হন ১৮ জন। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন যথাক্রমে ১০৬.৫ এবং ৩০ জন। ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত ১৫০ জন নারী শ্রমিকের ওপর দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে তৈরি পোশাক খাতের নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা ‘কর্মজীবী নারী’ আয়োজিত একটি সেমিনারে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। কেবল তৈরি পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকরাই নয়। দেশের নানা পেশায় নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার।
অবাক ব্যাপার যে, যৌন নির্যাতন করছে কলেজ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডাক্তার, কর্মচারী, পুলিশ, আত্মীয়, চাচা-মামা-খালু, দুলাভাই, আমলা, ধনীর দুলাল, বাসচালক ও তার সহযোগীরা। কেউ বাদ যাচ্ছে না। ধর্ষিত হচ্ছে ছাত্রী, শিশু, যুবতী, পোশাককর্মী, আয়া, বুয়া, গৃহবধূ। রাস্ত্মা-ঘাটে, রেস্ত্মোরাঁয়, চলন্ত্ম বাসে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গৃহে ঘটছে এই পৈশাচিক ঘটনা। কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। আমাদের নারী, শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না, এমনকি ধর্ষণের পর খুন হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, অবমাননা এবং এর বিয়োগান্ত্মক পরিণতি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। পৃথিবীব্যাপীই ঘটছে, তবে ইদানীং বাংলাদেশে যেন এর জোয়ার এসেছে। অপরাধীরা তো এ মানব সভ্যতারই অন্ত্মর্গত, আমাদের চারপাশেরই বাসিন্দা। সবাই কোনো না কোনো পরিবারেই বেড়ে উঠেছে। সে পরিবার থেকে তারা কী শিক্ষা পেয়েছিল- এটাই আমাদের প্রশ্ন।
আমাদের দেশেও নারী নির্যাতন রোধে আইন আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্ত্মবায়ন না থাকায় নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। শুধু আইন তৈরি ও পাস নয় সংশিস্নষ্ট মহলকে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করা উচিত। নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজনে সরকার আরও কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্ত্মবায়নের উদ্যোগ নিতে পারে। রোধ করতে হবে কর্মক্ষেত্রে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন ও বৈষম্য।
মনে রাখতে হবে, নারীর বিরম্নদ্ধে অপরাধ বন্ধ করতে না পারলে নারীদের রক্ষা করা যাবে না। সমাজও পিছিয়ে পড়বে। তাই দেশের মানুষকে সচেতন ও সোচ্চার হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আসুন আমরা নারীর বৈষম্য রোধে এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের মাতা, ভগ্নি, স্ত্রী, কন্যাকে নরপিশাচদের হাত থেকে রক্ষা করি। যৌন হয়রানি শুধু নারী, শিশুর বিরম্নদ্ধে নয়, মানবতার বিরম্নদ্ধে চরম অপরাধ। মানুষের সম্মিলিত পদক্ষেপ আর সংগ্রামই পারে মানুষকে জাগাতে, নারীকে সুরক্ষা দিতে, নারীকে বাঁচাতে।
আমাদের দেশে আইন আছে ভুরি ভুরি, সেই আইনগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আইন অন্ধ হওয়ায় সেই সুযোগে ব্যক্তি বিশেষ প্রয়োগ হতে দেখা যাচেছ। আমাদের যেমন ঐক্যবদ্ধভাবে নারী নির্যাতন ও বৈষম্য দুর করতে হবে, তেমনি সম্মিলিতভাবে আইনের শাসন বাস্তবায়নও করতে হবে।
লেখকঃ সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে গবেষক
msi.khokonp@gmail.com
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২৮ ফেব্রুয়ারি