বাবাকে হারিয়ে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে দুই মেয়ে
মেয়ে বলতে পাগল বাবা। মেয়েরাও বাবা অন্তপ্রাণ। আদর-আবদার সব বাবার কাছে। একটা দিনও বাবা ছাড়া চলে না। বাবা বাইরে গেলে, ফোনের পর ফোন! বাবা, তুমি কখন আসবা? – সেই মেয়েরা আজকে বাবা হারা।
বাবার শোকে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে হাসপাতালে বাঁচা-মরা লড়াই করছে তাহিয়াত-নাহিয়ান। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত কাউন্সিলর একরামুল হকের দুই মেয়েকে নিয়ে এভাবেই বলছিলেন তার বড় ভাই নজরুল ইসলাম।
শনিবার কথা হয় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুলের বড় ভাই নজরুল ইসলামের।
তিনি বলেন, ভাই (একরাম) চলে গেছে, সে আর ফিরে আসবে না। যাদের রেখে গেছে তাদেরও চলে যাবার মত অবস্থা। ঐ ঘটনার দিনের পর থেকে পানি পর্যন্ত মুখে নেয়নি তার দুই মেয়ে। শারীরিক ভাবে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিল, তখন আমরা হাসপাতালের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেই। এখন তারা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
মেয়ে দু’টির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত এ চাচা জানান, বাবা থাকাকালীন যাদের জীবন কষ্টে চলত, স্কুলের টাকা শোধ করতে পারতো না। বাবা না থাকায় তারা এখন কিভাবে চলবে। ঘরে একটা টাকা নেই; যা দিয়ে মেয়েদের পড়াশোনা খাওয়া দাওয়া চলবে।
ভাই সম্পর্কে নজরুল বলেন, ”আমার ভাই যদি খারাপই হত, আমার ভাইয়ের জানাজায় এত মানুষ হত না। কোনো অপরাধীর জানাজায় এত মানুষ হয়? একরাম সৎ ছিল বলে আজ মরে যাবার পর তার ঘরে ভাত নাই। শুধু টেকনাফ না সারাদেশ একরামের পক্ষে। আর সে যদি খারাপ হতো সবাই তার পক্ষে মানুষ কথা বলতো না’।
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি সঙ্গে একরামের পরিবার বিচারও চায়।
‘আমার ভাই ১২ বছর টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনবার পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। টেকনাফ বর্ডার গার্ড পরিচালিত পাবলিক স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। থানায় তার নামে কোনও মামলা নেই। এই মানুষকে তারা ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়েছে, হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই”।
গত ২৬ মে টেকনাফে মাদকবিরোধী কথিত বন্দুকযুদ্ধে সেখানকার পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. একরামুল হকের নিহত হন। এই ঘটনার অডিও রের্কড প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।