শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন আগামীকাল
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু ‘শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’ আগামীকাল রবিবার উদ্বোধন করা হবে। সেতুটির উদ্বোধন উপলক্ষে আজ শনিবার সকালে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি’র শুভ উদ্বোধন করবেন। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে ‘শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’। এ উপলক্ষে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সেতুটির পূর্বপারে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এলাকায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। নির্মাণ করা হয়েছে মঞ্চ ও প্যান্ডেল।
এতে সভাপতিত্ব করেন কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত যুগ্ম সচিব রইচ উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল আলম, পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: জাফর আলী প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণের সাথে কথা বলে সেতুটি উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। কুড়িগ্রাম এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থ ও প্রযুক্তিতে এই গার্ডার সেতুটি নির্মিত হয়েছে। ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৫০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি উত্তারাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু। এই সেতুটি উত্তর ধরলার তিনটি ইউনিয়নসহ কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী। সেতুর সুবিধা পাবেন কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ।
এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এই সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। সেতুটি নির্মাণ করছে সিমপ্লেক্স এবং নাভানা কনস্ট্রাকশন গ্রুপ। ৯৫০ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৮০ মিটার চওড়া সেতুটির ১৯টি স্প্যান ও ৯৫টি গার্ডার রয়েছে। দৈর্ঘ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর পর এই সেতুর অবস্থান বলে নির্মাণকারী সংস্থা এলজিইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এলজিইডি সূত্রে আরো জানা গেছে, মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ফুলবাড়ী ও লালমনিরহাট অংশে ২ হাজার ৯১৯ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ বাবদ ১৩ কোটি ৯ টাকা, ৩ হাজার ৪৮০ মিটার নদী শাসনে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে ১৩ একর।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সেতুটি চালুর ফলে সোনাহাট স্থল বন্দরের সাথে দেশের অন্য অংশের যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় প্রসার ঘটবে ব্যবসা বাণিজ্যের। পাশাপাশি কৃষি পণ্যের বিপণন, মুমূর্ষ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়াসহ আমূল পরিবর্তন হবে এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার। ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে নদীর পাড়ের মানুষ। ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী উপজেলার ১০ লাখ মানুষ রংপুর বিভাগীয় শহরে সহজে যাতায়াত করতে পারবে। ঢাকার সাথে ফুলবাড়ীর দূরত্ব কমবে প্রায় ১০০ কিমি।
‘শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’ দিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যসহ অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের পণ্য পরিবহন ব্যয় বহুলাংশে কমে আসবে। সোনাহাট স্থল বন্দরের মাধ্যমে ভারতের আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও অরুণাচল-পূর্বাঞ্চলীয় এই ৭টি রাজ্যের পণ্য পরিবহন ব্যয় বহুলাংশে কমে আসবে। বাড়বে আমাদানি-রপ্তানি।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী বলেন, ‘এই সেতুটি ছিল ফুলবাড়ীবাসীর প্রাণের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন, উদ্বোধনও করবেন। তাই এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।’