এমপি বদি ও খালাত ভাই মং মং সেন দেশ ছেড়েছেন
ইয়াবা সাম্রাজ্য নিয়ে বহুল বিতর্কিত কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী টেকনাফ-উখিয়া সংসদীয় আসনের এমপি আবদুর রহমান বদিও দেশ ছেড়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ঢাকা ছেড়ে গেছেন। দেশে চলমান ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের সময় এমপি বদির দেশ ছেড়ে যাবার বিষয়টি নিয়ে নানাজন নানা কথা বলছেন। অনেকেই বলছেন, তিনি আর এত সহজেই দেশে ফিরছেন না।
তবে এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নিশ্চিত করে বলেছেন যে, ‘উখিয়া-টেকনাফ সংসদীয় আসনের এমপি আবদুর রহমান বদি সাহেব সৌদি আরব গেছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, পবিত্র ওমরাহ হজ পালন করবেন।’
অপরদিকে এমপি বদির খালাত ভাই টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা, হুন্ডি ও সোনা চোরচালানের ডন হিসাবে পরিচিতি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কারবারি মং মং সেন রাখাইন গতকাল শুক্রবার সকালে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার পাড়ি জমিয়েছেন।
গেল মাসের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশে ইয়াবাসহ মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবার পর থেকেই গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমপি আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। তখন থেকেই দুষ্টজনরা বলে আসছেন, এমপি বদি এবার দেশ ছেড়ে যাবেন। তবে তিনি দেশ ছাড়লেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, পবিত্র ওমরাহ হজ পালনে গেছেন।
এদিকে ইয়াবা সাম্রাজ্যের আরেক ডন হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আহমদও আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সৌদি আরব পাড়ি জমাবার কথা রয়েছে। এ ছাড়াও টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা কারবারি হিসাবে তালিকাভুক্ত আরো অনেকেই ওমরাহ হজসহ আরো নানা অজুহাতে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন।
অপরদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবা, হুন্ডি ও সোনা চোলাচালানের গডফাদার হিসাবে তালিকাভুক্ত টেকনাফের মং মং সেন রাখাইনও গতকাল শুক্রবার সকালে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে পাড়ি জমিয়েছে। মং মং সেন রাখাইন হচ্ছেন এমপি আবদুর রহমান বদির খালাত ভাই।
এমপি বদির পিতা মরহুম এজাহার মিয়া কম্পানির একাধিক স্ত্রীর মধ্যে এক স্ত্রী রাখাইন ধর্মাবলম্বী। সেই রাখাইন ধর্মাবলম্বী স্ত্রীর আপন ভাগ্নে হচ্ছেন মং মং সেন রাখাইন। কয়েক বছর আগেও টেকনাফে মং মং সেন রাখাইনের স্বর্ণ দোকানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অভিযান চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার স্বর্ণালংকারসহ ইয়াবা উদ্ধার করেছিল। আটক হয়ে মং মং সেন বেশ কিছুদিন কারাগারে আটক থাকার পর আবারো ফিরে যান সেই পুরানো পেশায়।
জানা গেছে, এমপি বদির খালাত ভাই রাখাইন ধর্মাবলম্বী মং মং সেন টেকনাফ থেকে যখন-তখন মিয়ানমারে যাতায়াতের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ কারণেই সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচারের ক্ষেত্রে পরিবারটি অন্য রকমের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে।
জানা গেছে, এবার দেশব্যাপী ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে ভীত হয়ে পড়েন মং মং সেন। বিশেষ করে টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা কারবারি আকতার কামাল মেম্বার এবং পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হবার পরই সীমান্তের কারবারিরা যে যেদিকে পারছেন পালাচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৬টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ নৌঘাটে গরু নিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা কার্গো ট্রলারে করে মং মং সেন মিয়ানমারে পাড়ি জমিয়েছে। জানা গেছে, মং মং সেন মিয়ানমার ও বাংলাদেশ দুই দেশেই অবাধে অবস্থান নিয়ে থাকতে পারেন।(সূত্রঃ কালের কন্ঠ)