পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি এবং কম ধূমপায়ী দেশগুলো কি ?
পৃথিবীর যে কয়েকটি দেশে ধূমপান কমেছে তার মধ্যে ফ্রান্স সবার উপরে রয়েছে।
২০১৬-১৭ সালে দেখা গেছে দেশটিতে ধূমপায়ীর সংখ্যা অতীতের তুলনায় ১০ লাখ কমেছে।
কিন্তু বিশ্বজুড়ে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা কর্মসূচী থাকলেও সার্বিকভাবে পুরো বিশ্বে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েছে।
বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসে বিবিসি দেখার দেখার চেষ্টা করেছে পৃথিবীর কোন দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি ধূমপান করা হয় এবং কোন দেশে ধূমপানের প্রবণতা সবচেয়ে কম।
আরো পড়ুন:
সিগারেট খেয়ে দশজনে মারা যাচ্ছে একজন
বাংলাদেশে ‘নারীদের মধ্যে তামাক এবং মাদক ব্যবহার বাড়ছে’
কিরিবাতি:
জনসংখ্যার অনুপাতে এ দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ ধূমপান করে। এখানে পুরুষদের তিনভাগের দুইভাগ এবং নারীদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ধূমপান করে। প্রশান্ত মহাসাগরের এ দ্বীপ দেশটিতে মোট জনসংখ্যা এক লাখ তিন হাজার। দেশটিতে তামাক নিয়ন্ত্রণের ঢিলেঢালা নীতি এবং সিগারেটের উপর কর কম হওয়ার কারণে ধূমপায়ীর সংখ্যা বেশি।
মন্টেনিগ্রো:
সমগ্র ইউরোপের মধ্যে মন্টেনিগ্রোতে ধূমপায়ীর হার সবচেয়ে বেশি। পূর্ব ইউরোপের দেশ মন্টেনিগ্রোতে ৪৬ শতাংশ মানুষ ধূমপান করে। এ দেশটির জনসংখ্যা ছয় লক্ষ তেত্রিশ হাজার। দেশটিতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি বছরে চার হাজারের বেশি সিগারেট পান করে। জনসমাগমের জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও অফিস, রেস্টুরেন্ট, বার এবং গণ পরিবহনে ধূমপান করে মানুষজন।
গ্রিস:
পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ ধূমপায়ীর দেশ গ্রিসে মোট পুরুষ জনসংখ্যার অর্ধেক ধূমপান করে। নারীদের মধ্যে ধূমপান করে প্রায় ৩৫ শতাংশ। ২০০৮ সালে দেশটিতে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হলেও মানুষজন সর্বত্রই ধূমপান করে। দেশটিতে প্রতিবছর প্রচুর অবৈধ সিগারেট আসে।
পূর্ব তিমুর:
এ দেশটি পৃথিবীর সবচেয়ে ধূমপায়ী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে ৮০ শতাংশ ধূমপান করে। পৃথিবীর যেসব দেশে পুরুষরা সবচেয়ে বেশি ধূমপান করে, পূর্ব তিমুর তাদের মধ্যে সবচেয়ে উপরে। তবে এখানে নারীদের মধ্যে মাত্র ছয় শতাংশ ধূমপান করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দরিদ্র এ দেশটিতে তামাক সমাজের অংশ হয়ে গেছে। এখানে এ প্যাকেট সিগারেটের দাম এক ডলারের কম। যদিও সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য সতর্কতা বার্তা দেয়া আছে, কিন্তু এটি বাস্তবে অর্থহীন হয়ে রয়েছে। কারণ এ দেশটির প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে অর্ধেক নিরক্ষর।
রাশিয়া:
পৃথিবীর সবচেয়ে ধূমপায়ী দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া পঞ্চম অবস্থানে। এখানে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে পুরুষদের ৬০ শতাংশ ধূমপান করে। নারীদের মধ্যে ধূমপায়ীর ২৩ শতাংশ। গণ-পরিবহন এবং কর্মক্ষেত্রে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও সিগারেটের হরেক রকমের বিজ্ঞাপন ধূমপায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। অনেক দোকানে এক প্যাকেট সিগারেটের দাম এক ডলারের কম। রাশিয়ায় সিগারেটের বাজার ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption ধূমপানের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে বারবার সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।
যেসব দেশে ধূমপায়ীর হার কম :
যেসব দেশে ধূমপায়ীর হার সবচেয়ে কম সেগুলো হচ্ছে - গানা, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, ইরিত্রিয়া এবং পানামা। বিশ্বজুড়ে গড়ে ২২ শতাংশ মানুষ ধুমপান করলেও আফ্রিকায় প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষ ধূমপান করে।
গানা, ইথিওপিয়া এবং নাইজেরিয়া তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তাছাড়া এসব দেশে নারীদের ধূমপান করার বিষয়টিকে সামাজিকভাবে অনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইথিওপিয়াতে এক ধরনের ছোট গাছের পাতা চিবিয়ে থাকে মানুষজন। এটির নাম ‘খাট’। এ পাতা চিবানোর কারণে ধূমপান করার প্রবণতা কম মানুষের মাঝে।
পৃথিবীর যেসব উচ্চ আয়ের দেশ আছে সেখানেও ধূমপায়ীদের সংখ্যা কমেছে। ধূমপান বিরোধী নানা পদক্ষেপ এবং সিগারেটের দাম বৃদ্ধির কারণে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে।
তামাকজাত পণ্যের বাজার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, চীনে সবচেয়ে বেশি তামাক উৎপাদন এবং ব্যবহার করে।
দেশটিতে ৩০ কোটি মানুষ ধূমপান করে অর্থাৎ পৃথিবীর মোট ধূমপায়ীর এক তৃতীয়াংশ চীনে।
তবে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিগত দুই দশকের তুলনায় চীনে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে।
পৃথিবীর যে দেশে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি ধূমপান করে সেটি হচ্ছে ডেনমার্ক। ইউরোপ-জুড়ে নারীদের ধূমপানের প্রবণতা পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি।
তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর এক হিসবে বলা হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে তামাকজাত পণ্যের বাজার প্রায় ৭৭০ বিলিয়ন ডলার।
সুত্রঃ বি বি সি বাংলা