যারা অন্য পেশা থেকে শোবিজে এসে সফল, কুড়িয়েছেন প্রশংসা জনপ্রিয়তা।
যে কোনো অবস্থান থেকে সফলতা অর্জন করা যায়, যদি ইচ্ছা শক্তি প্রবল থাকে। বিনোদন জগতে আছেন তেমনই কিছু সফল ব্যক্তি। যারা অন্য পেশা থেকে শোবিজে এসে সফল হয়েছেন। কুড়িয়েছেন প্রশংসা ও জনপ্রিয়তা।
কেউ কেউ মরে গিয়েও চির জাগ্রত আছেন ভক্তদের হৃদয়ের মণিকোঠায়। এমনই কিছু সফল ব্যক্তির গল্প লিখেছেন- হাসান সাইদুল
* খলিল উল্লাহ খান
১৯৫৯ সালে ‘সোনার কাজল’ ছবিতে প্রথম অভিনয় শুরু করেন তিনি। সিনেমায় আসার আগে বেশ কয়েকটি নাটকেও অভিনয় করেন। অভিনয় জগতে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
প্রয়াত খলিল উল্লাহ খান খলিল সবার কাছে একজন খল অভিনেতা হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন মূলত একজন আর্মি অফিসার। ১৯৫১ সালে আর্মি কমিশনে যোগ দিয়ে কোয়েটাতে চলে যান।
১৯৫২ সালে ফিরে এসে আনসার অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘদিন সাসপেন্ড থাকার পর তা উইড্র হয় ১৯৭৭ সালে। ১৯৯২ সালে বয়সের কারণে রিটায়ার করেন আনসার ডিপার্টমেন্ট থেকে।
* আবুল হায়াত
টিভি নাটকে, সিনেমায় আর বিজ্ঞাপনে সফলতার সঙ্গে অভিনয় করে আসছেন তিনি। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ রচিত অনেক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন।
১৯৬৯ সালে ‘ইডিপাস’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো টিভি পর্দায় দেখা যায় আবুল হায়াতকে। ‘মিসির আলি’ চরিত্রে অভিনয়টি তার বিশেষ কাজ। একটা সময় তিনি নিয়মিত লেখালেখিও করতেন।
একজন দক্ষ ও প্রবীণ অভিনেতা হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার (পুরকৌশলী)। বুয়েট থেকে ১৯৬৭ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ১৯৬৮ সালেই ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী পদে যোগ দেন।
* দিলারা জামান
ইডেন কলেজে পড়ার সময় তিনি ছিলেন ছাত্রী সংসদের সাহিত্য সম্পাদিকা। ১৯৬৫ থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি দিলারা জামানের অভিনয় জীবনের বয়স।
দিলারা জামানের স্বামী ফখরুজ্জামান চৌধুরী একজন সাবেক সরকারি আমলা, সুপরিচিত কলামিস্ট ছিলেন। টিভি পর্দায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছেন দিলারা জামান। তার আগে দিলারা জামান ছিলেন একজন শিক্ষিকা।
চট্টগ্রাম ও ঢাকার অনেক স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের।
* হুমায়ূন আহমেদ
তিনি কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৭৩ সালে অধ্যাপনার মাধ্যমে। সে সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রভাষক থাকাকালীন প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ রচনা করেন।
একসময় লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে ছেড়ে দেন অধ্যাপনা। ছাত্রছাত্রীদের অতি জনপ্রিয় শিক্ষক লেখালেখি করা অবস্থায় নাটক-সিনেমাতেও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও চির জাগ্রত হয়ে আছেন লক্ষ কোটি ভক্তের হৃদয়ের মণিকোঠায়।
* বুলবুল আহমেদ
পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি মঞ্চাভিনয়ে জড়িত ছিলেন। একটা সময় চাকরি জীবন শুরু করেন তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে। অভিনয়ের চাপে একসময় তিনি ছেড়ে দেন চাকরিও।
চার দশকেরও বেশি সময় শিল্পী জীবনে বুলবুল আহমেদ প্রায় তিনশরও বেশি নাটক এবং দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ চারবার তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
* হানিফ সংকেত
তিনি একাধারে উপস্থাপক, পরিচালক, লেখক ও প্রযোজক। দর্শক-শ্রোতাদের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন প্রায় দুই যুগ ধরে। উপস্থাপনায় তার ভিন্ন এক শৈলী হচ্ছে, তিনি বাংলা কিংবা বিদেশি শব্দ এক করে বলেন না। শুদ্ধ বাংলায় করেন উপস্থাপনা।
জনপ্রিয় এ গণমাধ্যম কর্মী প্রকৃত পক্ষে ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। চাকরিও করতেন। পরবর্তীতে শোবিজের টানে চাকরি ছেড়ে দেন।
* ফজলুর রহমান বাবু
জনপ্রিয় এ অভিনেতা নিজেকে একজন বিনোদনকর্মী পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ১৯৮৩ সালে অগ্রণী ব্যাংকে যোগদান করেন এবং তার কর্মস্থল ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়।
ঢাকায় চলে আসার পর তিনি মামুনুর রশীদের ‘আরণ্যক নাট্যদল’ মঞ্চ দলে যোগ দেন। ১৯৯১ সালে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। তার প্রথম সিনেমা দ্বারুচিনি দ্বীপ।
* রিয়াজ
বিএফডিসিতে চাচাতো বোন ববিতার সঙ্গে ঘুরতে এসেছিলেন রিয়াজ। ববিতা তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন প্রয়াত চিত্রনায়ক জসিমের সঙ্গে। জসিমের খুব পছন্দ হল।
তিনি তখন ‘বাংলার নায়ক’ নামে একটি সিনেমার কাজ শুরু করতে যাচ্ছিলেন, সেটাতেই নিয়ে নিলেন রিয়াজকে। তারপর থেকে রিয়াজকে পেছনে তাকাতে হয়নি। অথচ এ চলচ্চিত্র অভিনেতা ছিলেন মূলত একজন পাইলট।
তুরস্কে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, দেশে ফিরে পেয়েছিলেন কমিশন। কিন্তু মন টিকল না সেখানে। ছেড়ে এলেন ইউনিফর্ম আর ক্যান্টনমেন্টের জীবন। চাকরি ছাড়ার পর কী করবেন ভাবছিলেন, এমনই সময়ে একেবারেই অপ্রত্যাশিতভাবে নতুন একটা দিগন্ত উন্মোচিত হয়ে গেল তার সামনে।
* হাসান মাসুদ
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ব্যাচেলর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে তার পথচলা শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্র এবং অনেক নাটকে অভিনয় করেন।
তার প্রথম সঙ্গীত অ্যালবাম ‘হৃদয় ঘটিত’ ২০০৬ সালে প্রকাশ পায়। জনপ্রিয় এ অভিনেতা ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯২ সালে অধিনায়ক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি নিউনেশন এবং পরবর্তীতে ডেইলি স্টারে ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। বিবিসির বাংলাদেশের প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন কিছুদিন।
* মাহফুজ আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’-এ বাকের ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেয়া মতি চরিত্রে অভিনয় করা মাহফুজকে চেনে না এমন দর্শক খুব কমই আছে।
নব্বই দশকে অনেক জনপ্রিয় অভিনেতার ভিড়ে তিনি মূলত পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করতেন। শেষের দিকে ‘সবুজ ছায়া’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে বেশ আলোচিত হন।
জনপ্রিয় এ অভিনেতা ক্যারিয়ারের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনাকালীন বিনোদন পাতায় লিখতেন, সেই সুবাদেই ইমদাদুল হক মিলনের পরামর্শে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘কোন কাননের ফুল’-এ ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করার মধ্য দিয়ে টিভি নাটকে নাম লেখান।