বরিশাল থেকে পাথরঘাটাসহ সাত রুটে সরাসরি বাস বন্ধ ৩ মাস
বরিশাল নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে পশ্চিমের সাত রুটে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝালকাঠি জেলা বাস মালিক সমিতির সঙ্গে বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের জের ধরে এ অচলাবস্থা চলছে। ফলে ওই রুটগুলোর হাজার হাজার যাত্রী প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আসন্ন ঈদুল ফিতরে সাত রুটের ঘরমুখো কয়েক লাখ মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে মহাদুর্ভোগ।
এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, ৬ জুন ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতিকে নিয়ে বৈঠক করবেন। সংকট সমাধানে বরিশাল ও ঝালকাঠি মালিক সমিতির আন্তরিকতার অভাব আছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ঈদের আগেই চলমান অচলাবস্থার অবসান হবে।
সাড়ে তিন মাস ধরে বাস চলাচল বন্ধ থাকা রুটগুলো হচ্ছে- বরিশাল-খুলনা, বরিশাল-ভাণ্ডারিয়া, বরিশাল-পিরোজপুর, বরিশাল-মঠবাড়িয়া, বরিশাল-ঝালকাঠি, বরিশাল-পাথরঘাটা ও বরিশাল-আমুয়া। ঝালকাঠি জেলা বাস মালিক সমিতি বরিশাল, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ও বরগুনাসহ সাত রুটে তাদের বাস চলাচল করতে দেওয়ার দাবি তুলে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে পশ্চিমাংশের ওই সাত রুটে বরিশাল থেকে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে বরিশালের বাস পশ্চিমের সাত রুটে ঢুকতে দেওয়া না হলেও ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও খুলনাসহ পশ্চিমাংশের সাত রুট থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো বরিশাল-ঝালকাঠি সীমান্তে রায়াপুরে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। ওই সময় ২০ ডিসেম্বর বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামানের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমঝোতা বৈঠকে ঝালকাঠি মালিক সমিতি ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। তবে পরবর্তী সময়ে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় ৩ জানুয়ারি থেকে ঝালকাঠি মালিক সমিতি ফের বরিশালের রূপাতলী টার্মিনাল থেকে পশ্চিমাংশের সাত রুটে এবং পশ্চিমের ওই সাত রুট থেকে ছেড়ে আসা বাস বরিশালের রূপাতলী টার্মিনালে আসতে বাধা দিতে শুরু করে। আগের মতো পশ্চিমের সাত রুট থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো যাত্রীদের রায়াপুরে নামিয়ে দেয়। এমন অচলাবস্থা চলে টানা ২০ দিন। এর মধ্যে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি রায়াপুরে স্থাপন করে অস্থায়ী বাস টার্মিনাল। ফলে পশ্চিমের ওই ৭ রুটের যাত্রীদের রূপাতলী টার্মিনাল থেকে অটো অথবা মাহেন্দ্রয় চড়ে রায়াপুর গিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের বাসে উঠতে হচ্ছে।
৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর সফর থাকায় বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে ওই সাত রুটে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরাসরি বাস চলাচল শুরু হলেও ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এ অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি রায়াপুরে স্থাপন করা অবৈধ টার্মিনাল অপসারণ করবে এবং বরিশাল থেকে দক্ষিণের দুটি রুটে ঝালকাঠি মালিক সমিতির বাস চলাচল করবে। কিন্তু ওই সভার সিদ্ধান্ত ঝালকাঠি ও বরিশাল বাস মালিক সমিতি মানেনি। আড়াই মাস পার হলেও ঝালকাঠি মালিক সমিতি রায়াপুরের অবৈধ টার্মিনাল অপসারণ করেনি। অন্যদিকে বরিশাল মালিক সমিতিও দক্ষিণের দুই রুটে ঝালকাঠির বাস চলাচল করতে দিতে উদ্যোগ নেয়নি।
এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি ও বরিশাল বাস মালিক সমিতির শীর্ষ দুই নেতা একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়েছেন। বরিশাল-পটুয়াখালী বাস-মিনি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, ঝালকাঠি মালিক সমিতি টার্মিনাল অপসারণ না করে ১৫ মার্চের সভার সিদ্ধান্ত অমান্য করেছে। দুটি রুটে ঝালকাঠির বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত হলেও তারা দক্ষিণের সবগুলো রুটে বাস চালাতে চায়। তাই দুই রুটে ঝালকাঠির বাস চলাচল শুরু করা সম্ভব হয়নি। ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ খান রায়াপুরের অস্থায়ী টার্মিনাল অপসারণ না করার দায় স্বীকার করে বলেন, আমরা বাধ্য হয়েছি অস্থায়ী টার্মিনাল করতে। বরিশাল-পটুয়াখালী মালিক সমিতি আমাদের কোনো দাবিই মানতে চাইছে না। ফলে সমস্যারও সমাধান হচ্ছে না।
বরিশাল থেকে পশ্চিমাংশের সাত রুটে বাস চলাচলে সৃষ্ট সংকট নিরসনে গঠিত প্রশাসনিক কমিটির প্রধান বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, রায়াপুরের অবৈধ টার্মিনাল অপসারণে ঝালকাঠিকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও তারা শুনছে না। আবার বরিশাল মালিক সমিতিরও আন্তরিকতার অভাব আছে। দু-একদিনের মধ্যে সভা ডেকে এ সংকটের স্থায়ী সমাধান করা হবে।(সূত্রঃ সমকাল)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/৩০ মে