পাথরঘাটায় পিপিআর মানছে না চায়না ঠিকাদার
বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা উপজেলায় এক বছর ধরে তিন শ কোটি টাকায় চলছে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)। এ বিষয়ে কিছুই জানে না এলাকাবাসী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, এমনকি প্রকৌশল বিভাগ। অথচ, সরকারি ক্রয় নীতিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করার আগে এলাকাবাসীকে জানাতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় সিইআইপির প্রথম পর্যায়ের ২ নম্বর প্যাকেজের কাজ চলছে। প্রায় ৮৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদীতীর ও বাঁধের ঢাল রক্ষা কাজে ৩১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ। দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিকো (ঈওঈঙ) সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পায়। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ১০-১৫ জন চায়নিজ কারিগরি কর্মীর পরিচালনায় সদর উপজেলার ৪১/১ নম্বর পোল্ডারে ৪৮ কিলোমিটার এবং পাথরঘাটা উপজেলায় ৪০/২ নম্বর পোল্ডারে কাজ শুরু হয়।
পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রিপন জানান, পিপিআর অনুযায়ী যেকোনো কাজ বাস্তবায়ন করার আগে এলাকাবাসীকে ধরন, প্রাক্কলন ব্যয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, কাজ শুরু ও শেষের তারিখ বিস্তারিত জানাতে হয়। এসব বিষয় উল্লেখ করে প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড টানাতে হয়। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এসবের কিছু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা কী কাজ করছে। কাজের মান কী হচ্ছে। কে বা কারা এসব কাজের মান পর্যবেক্ষণ করছে, তাও জানা নেই কারো।
বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিচুর রহমান বলেন, ‘আমিও এসব কাজের বিষয়ে কিছু জানি না। কেউ জানায়নি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান জানান, প্রকল্পের শুরুতে ঢাকায় একটি সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। সে সময় এসব বিষয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সেসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এরপর থেকে এ প্রকল্পের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তিনি বলেন, ‘জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এসব বিষয়ে আমি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে পারি না। ফলে প্রকল্পটির বিষয়ে অন্ধকারে থাকছেন সবাই।’
বরগুনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রকল্প পরিচালকের পক্ষের কেউ এখন পর্যন্ত আমাদের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় থাকেননি। এসব কাজের অগ্রগতি কী সেসব বিষয়েও আমাদের এখন পর্যন্ত কিছুই জানানো হয়নি। এ নিয়ে আমাদের সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। আমরা যতদূর জেনেছি, ঢাকা থেকেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একটি সরকারি দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে কোনো ঢালাই কাজে ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয় না। পাথুরে খোয়া ব্যবহার করা হয়। অথচ এ প্রকল্পের অধীনে সিসি ঢালাইর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে ইটের খোয়া। এতে স্থায়িত্ব কম হয়। এ ছাড়া চালনি দিয়ে ছেঁকে বালু ব্যবহার করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না। অন্যদিকে বাঁধের ঢাল যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকে মাটি কাটলে ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়। অথচ, গোড়া থেকেই মাটি কাটা হচ্ছে। বাঁধের মাটি নির্দিষ্ট স্তরে স্তরে রোলার দিয়ে কমপ্যাক্ট করাও হচ্ছে না।
প্রকল্প পরিকল্পনায় কিছু দুর্বলতা থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সিইআইপি প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরামর্শকরা (কনসালট্যান্ট) প্রধান।’ জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কেন কিছুই জানেন না? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানে না এটা সত্য না, কারণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ছাড়া হয় না। আর খোয়া ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। এর পরও কাজের গুণগত মান সম্পর্কে খতিয়ে দেখব।’(সূত্রঃ কালের কন্ঠ)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২৬ মে