কাঁঠালিয়ায় স্মার্টকার্ড বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ
স্মার্ট কার্ড বিনামূল্যে বিতরণের নিয়ম থাকলেও ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় কার্ডপ্রতি ২৩০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এ অভিযোগ কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসী জানান, গত ১৯ এপ্রিল থেকে ১৪ মে পর্যন্ত ৬টি ইউনিয়নে ৫৯ হাজার স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়। এসব কার্ড বিতরনে অনিয়ম করে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জয়ন্তী রানী চক্রবর্তী ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রেজাউল জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কার্ড বিতরনকালে ঐ দুই কর্মকর্তার ব্যাগভর্তি টাকা নেয়ার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিপাকে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। পরে তারা আত্মসাৎ করা টাকার একটি অংশ ব্যাংকে জমা দিতে বাধ্য হন।
কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল থেকে কাঠালিয়ার ৬টি ইউনিয়নে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়ে ১৪ মে পর্যন্ত তা চলে। নির্বাচন কমিশন এ উপজেলায় ৭৫ হাজার ৩২১ জনের স্মার্টকার্ড বিতরনের জন্য প্রস্তুত রাখে। এর মধ্যে ৫৯হাজার কার্ড বিতরন করা হয়। বাকী ১৬ হাজার ২৩১ জনকে বলা হয় অফিস খোলা অবস্থায় যে কোন দিন এলেই কার্ড দেয়া হবে। বিতরণ করা কার্ডের মধ্যে প্রায় ১০শতাংশের বেশী ছিলো হারিয়ে যাওয়া জাতীয় পরিচয় পত্রধারীরা।
কার্ড নিতে আসা ব্যক্তিরা জানান, যারা নতুন কার্ড নিতে এসেছেন, তাদের কাছ থেকে ২৩০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ৩৪৫ টাকা। এদের কাউকেই ব্যাংকের রশিদ দেয়া হয়নি। আর যারা পুরোনো কার্ড জমা দিয়েছেন তাদের কার্ড ফুটো করে দেয়া হলেও কারও নাম নিবন্ধন করা হয়নি। তাতে পরবর্তীতে বোঝার উপায় থাকবেনা কার কার্ড ছিলো আর কার ছিলোনা। কর্তৃপক্ষ চাইলে যাদের কার্ড হারিয়ে গেছে তাদেরটাও ছিলো বলতে পারবে।
অভিযোগ রয়েছে যে, গত ১০, ১১ ও ১২ মে আকনের হাট, আওরাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এবং আওরাবুনিয়া মডেল হাই স্কুলে স্মার্ডকার্ড বিতরন করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, রেজাউল জোমাদ্দার একটি কক্ষে বসে পরিচয়পত্র হারানো বাবদ ৩৪৫ টাকা এবং নতুন কার্ডের জন্য ২৩০ টাকা করে নিয়ে টোকেন ধরিয়ে দিচ্ছেন। টাকার রশিদ বা নাম ঠিকানা নিবন্ধন করা হচ্ছে না।
আওরাবুনিয়া ইউপির সাবেক সদস্য মোঃ মোশারেফ হোসেন জানান, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জয়ন্তী রানী চক্রবর্তী ও রেজাউল জোমাদ্দার আওরাবুনিয়া থেকে ৫ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সংবাদকর্মীরা টাকা নেয়ার দৃশ্য ধারনের চেষ্টা করলে জয়ন্তী ও রেজাউল কৌশলে পালিয়ে যান।
আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিলিপ মিস্ত্রি ও ২নং ওয়ার্ডের তনিমা রানী জানান, আইডি কার্ড হারিয়ে যাওয়ায় নির্বাচন অফিসের লোকদের নগদ ৩৪৫ টাকা দিয়ে টোকেনের মাধ্যমে স্মার্টকার্ড নিয়েছি।
৩নং ওয়ার্ডের আল মামুন খান, ৪ নম্বরের সাইফুল ইসলাম ও রাজীব হোসেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাফিজ নকিব, নজরুল জোমাদ্দার, নয়ন হাওলাদার, ফিরোজ হাওলাদারসহ অনেকেই জানান, তারা আইডিকার্ড খুজে না পেয়ে ফটোকপি নিয়ে এলে ৩৪৫ টাকা, নতুন কার্ডের জন্য ২৩০ টাকা করে দিয়েছেন।
টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রেজাউল জোমাদ্দার বলেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার আদেশেই নগদ টাকা নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা জয়ন্তী রানী চক্রবর্তী বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। ব্যাংক চালানের টাকা আমাদের গ্রহণ করার আইনি অধিকার না থাকলেও জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা ভেবে টাকাগুলো নেয়া হয়েছে। সব টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। কি পরিমাণ হারানো কার্ডধারী উপজেলায় রয়েছে ও কত টাকা নেয়া হয়েছে তা বলতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সোহেল সামাদ বলেন, গত ১১ ও ১২ মে শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে চালানের টাকা জামা নেয়া হয়েছিল। পরে ব্যাংকে সব টাকা জমা করা হয়েছে। তবে ব্যাংক চালানের টাকা নির্বাচন অফিসের গ্রহণ করার অধিকার নেই বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা শরীফ মোহাম্মদ ফয়েজুল আলম সাংবাদিকদের জানান, যেহেতু নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, তাদের অভ্যন্তরীণ দূর্নীতি সংশ্লিষ্ট কমিশনের দেখার বিষয়। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কমিশনে পাঠানো হবে।(সূত্রঃ নয়াদিগন্ত)
পাথরঘাটা নিউজ/এএসএমজে/২৩ মে