পিরোজপুরে কওমি মাদরাসায় টাকায় মেলে স্নাতক পাসের সনদ!
বিশেষ প্রতিবেদন।। পিরোজপুর সদর উপজেলার ৭নং শংকরপাশা ইউনিয়ননের ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম বাদুরা কওমি মাদরাসায় টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে স্নাতক পাসের সনদপত্র। এই মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা জাকির হুসাইন সিকদার এ ব্যবসা করছেন।
তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র এনে দেওয়ার কথা বলে ইমামদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাওলানা জাকির মাদরাসার ছাত্র নয়, এমন ব্যক্তিকে সনদপত্র দেন। যদিও বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এখন সাময়িক সনদপত্র দিচ্ছে। কিন্তু ওই মাওলানা মাদরাসার প্যাডে প্রশংসাপত্রের এক ধরনের সনদ দিয়ে প্রতারণা করছেন। মূল সনদে বোর্ডের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর, সিল, জলছাপ থাকলেও এতে তা থাকছে না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানায়, বাদুরা গ্রামে ১৯৭২ সালে দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম বাদুরা কওমি মাদরাসা স্থাপিত হয়। মাদরাসার কার্যক্রমে চলছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর পেছনে প্রধান অভিযুক্ত হচ্ছেন মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অনেক অভিযোগের একটি হচ্ছে, মাদরাসার ভেতরে স্থাপিত মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক একটি শিক্ষাকেন্দ্র ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে পরিচালনার নামে টাকা আত্মসাৎ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে এই কেন্দ্রে ১২ ছাত্র, ১৮ ছাত্রীসহ মোট ৩০ শিক্ষার্থী থাকার কথা। তবে সরেজমিনে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এই মাদরাসার প্রধান মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ আলী আকবর দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত। এ সুযোগে জাকির হুসাইন সিকদার নির্বিঘ্নে এসব অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাদরাসার অন্য শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, মাওলানা জাকির নিজ নামে এই মাদরাসার মসজিদে একটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক একটি শিক্ষাকেন্দ্র চালান। তবে কেন্দ্রে কোনো শিক্ষার্থী নেই। শুধু খাতা-কলমে শিক্ষার্থী ও কেন্দ্র পরিচালনা দেখিয়ে গত আট বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, নায়েবে মুহতামিম মাদরাসাটিকে তাঁর নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন কক্ষ দখল করে রেখেছেন। পালন করেছেন গবাদি পশু। মূল্যবান কিতাব নিজের কাছে আটকে রাখছেন। সর্বশেষ মাদরাসার ভেতরে দুটি ভবনে তাঁর নিজ নামে এনেছেন বিদ্যুৎ সংযোগ।
অসুস্থ মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ আলী আকবর বলেন, ‘এ মাদরাসায় মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র বা কার্যক্রম আছে, তা আমার জানা নেই। আর অনেকে আমার কাছে মাওলানা জাকিরের নামে জাল সনদ বিক্রিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ করেছে। ’
এ বিষয়ে নায়েবে মুহতামিম মাওলানা জাকির হুসাইন সিকদার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। ’ মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বিষয়টি জানেন। আর এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে তিনি নিষেধ করছেন। ’
পিরোজপুর জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মতিন হাওলাদার বলেন, ‘মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব। ’
বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক অধ্যাপক যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের প্রশংসাপত্র একটি মাদরাসা দিতে পারে। কিন্তু মাদরাসার ছাত্র না হলে বা সনদপত্র হিসেবে প্রশংসাপত্র দেওয়া হলে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
এনএএস/পাথরঘাটা নিউজ