চলতি বছর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৪৮ হাজার ধর্ষণের শিকার নারী সন্তান জন্ম দেবে
বিশ্বের বৃহত্তম উদ্বাস্তু শিবিরে সাহায্য কর্মীরা এখন যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে অন্তঃসত্তা হওয়া রোহিঙ্গা নারীদের সন্তান প্রসব-জনিত সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকেরা অন্তঃসত্তা রোহিঙ্গা নারীদের খুঁজছেন হন্যে হয়ে। অনেক রোহিঙ্গা নারীই ওই ভয়ঙ্কর স্মৃতি লুকাতে নিজেদের আড়াল করে রাখছেন। তাদের ভয়, ওই লজ্জাজনক ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে তথা নবজাতকের জন্ম হলে তাদেরকে পরিবার থেকে পরিত্যক্ত করা হবে। আবার সাহায্য কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, হবু মায়েরা এমনটি করলে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কাও সৃষ্টি হতে পারে।
এমনই এক সাহায্যকর্মী তসমিনারা। তিনি নিজে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু। তিনি মাসের পর মাস ধরে এসব নারীদের খুঁজে বের করে তাদের পরিচর্যায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তাদেরকে সাহস দিচ্ছেন, ভরসা দিচ্ছেন। তিনি জানান, আমরা তাদেরকে একটি পাসওয়ার্ড দিচ্ছি। তারা হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে তারা সরাসরি সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন। তিনি বলেন, তারা অনেক সময় লজ্জা পায়। তারা সামনে আসতে ভয় পায়।
গত আগস্টে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দমন অভিযানের পর প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাদের অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়। তবে ঠিক কতজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তা জানা যায়নি। একটি অন্তার্জাতিক গণমাধ্যমকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্ড্রু গিলমর বলেন, গত আগস্ট সেপ্টেম্বরে ধর্ষণের শিকাররা অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক হারে সন্তান প্রসব করতে শুরু করবে।
এক হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৪৮ হাজার নারী সন্তান জন্ম দেবে। ধর্ষণের শিকার নারীরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়ার ঘরে কোনো ধরনের চিকিৎসা সুবিধা ছাড়াই সন্তান জন্ম দেবে।
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতা আবদুর রহিম বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ধর্ষণের শিকার দুজন নারীকে চেনেন। তারা চলতি মাসেই সন্তান প্রসব করবে। এ ধরনের অবস্থা আরো অনেকের রয়েছে বলে গুজব রয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তাদের ধর্ষণ করেছে। এসব শিশু হলো তাদের অপরাধের প্রমাণ।
ধাত্রীদের প্রশিক্ষণ দানের কাজে নিয়োজিত নূরজাহান মিঠু বলেন, অনেক সময় এসব সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত বিবেচিত হয়। এই লজ্জা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেক কিশোরী গর্ভপাতের আশ্রয়ও গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও বালিকা। তবে কিশোরীদের জনসম্মুখে খুব একটা দেখা যায় না। তাদের অভিভাবকেরা তাদেরকে ঘরের ভেতরেই রাখতে চেষ্টা করে। এতে করে রোহিঙ্গা নারীদের সত্যিকারের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক পরিবার অন্তঃসত্তার বিষয়টি লুকাতে জোর করে কিশোরীদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা করছে, নবজাতকদের পরিত্যক্ত করা হবে। সাহায্যকর্মীরা এখন সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পরিত্যক্ত শিশুদের কিভাবে পরিচর্যা করা যায়, তা নিয়েও তারা ভাবছেন।