চাকরির জন্য কোটা নয়, মেধাই হোক আসল পরিচয় !

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ,
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | আপডেট: ০৬:৩৫ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

লেখকঃ মামুন আকন সাংবাদিক এবং কলাম লেখক
একবিংশ শতাব্দির সবথেকে বড় সম্পদ বলে মনে করা হয় জ্ঞান কে । একটি দশের অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক কিংবা
সামাজিক মুক্তি লাভের জন্য মেধার মূল্যায়নের ভূমিকা অনস্বীকার্য।প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপুর্ন কিংবা শিল্প সম্পদে ভরপুর
হয়েও একটি দেশ কখনো উন্নতি লাভ করতে পারে না যদিনা, তা সঠিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে
তোলা যায় । আর সঠিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়জন একঝাঁক মেধাবী তারুণ্য । উদাহরণ হিসেবে লক্ষ করে
দেখুন প্রাকৃতিক সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়েও নাইজেরিয়া ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, আফগান, চাদ, সুদান,
মিযানমার, বলিভিয়া, ও ইন্দোনেশিযা পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশ। আবার, অন্যদিকে,জাপান, সুইজারল্যান্ড, কোরিয়া
ও সিঙ্গাপুরের মত দেশে কোন খনিজ সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও তারা পৃথিবীর উন্নত দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত প্রাকৃতিক
সম্পদে দরিদ্র জাপান, জার্মান ও কোরিয়া প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং মানব সম্পদকে ব্যবহারের মাধ্যমে মাত্র কয়েক দশকেই
অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিক
উন্মোচন করে অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলছে। কারণ তাদের দেশে মেধার মূল্যায়ন হয়েছে যথাযথ ভাবে ।
আবার রাজনৈতিক ভাবে যদি মুক্তিলাভ করতে চান তাহলেও সৎ এবং মেধাবী নেতৃত্বের কোনো তুলনা নেই । যেমনাটা
আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রয়ই বলেন “শুধু ভালো কর্মী হলেই হবে না,ভালো ছাত্রও হতে হবে” ।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়,আমাদের দেশে মেধার মূল্যায়ন খুবই তৎসামান্য ।লক্ষ লক্ষ মেধাবীদের একটা প্লাটফর্ম না
থাকার কারণে তাদের মেধা,বুদ্ধিমত্যা দিয়ে দেশের উন্নয়নে কোনো ভুমিকা রাখতে পারছে না । যার অন্যতম কারণ কোটা
পদ্ধতি । প্রতিটা সরকারি নিয়োগ প্রকিয়ায় কোটা পদ্ধতির দৌরত্যের কারণে সাধারণ মেধাবীরা ছিটকে পরে যায় । আমি
বলছি না যে কোটাধারিরা অমেধাবী কিংবা এদেশে কোটা পদ্ধতির কোনো প্রয়জন নেই । তবে আমাদের দেশের নিয়োগ
প্রকৃয়ায় কোটা পদ্ধতিটা অনেকটাই অনিয়মতান্ত্রিক ।শতকরা ৫৬% যদি কোটায় নিয়োগ করা হয় এবং কোটায় বরাদ্ধ
আসনে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে বছরের পর বছর তা যদি শূণ্য পদ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয় ,তাহলে তা দেশের জন্য
কতটা ক্ষতিকারক সে বিষয় একটু ভেবে দেখা দরকার। আমার প্রশ্ন এখানেই । বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য মতে
দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। এর মধ্যে ১০ কোটি মানুষ রয়েছে কর্মক্ষম। তার ভেতর পাঁচ কোটি মানুষ কাজ পেয়েছে।
বাকি পাঁচ কোটি মানুষ কোনো কাজ পায় না। সে দেশে কিভাবে বছরের পর বছর শূণ্য পদ রাখা হয় ?

আর এই অনিয়ম তান্ত্রিক কোটা পদ্ধতির শিকল ভাঙ্গতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকা শাহবাগ সহ সারা দেশের
বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজে গুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা গর্জে উঠেছে । সুধু সাধারণ শিক্ষার্থীরা নয়,পাশাপাশি কোটাধারি
মুক্তিযোদ্ধাদের আদর্শ সন্তানেরা দেশের কথা চিন্তা করে কোটা পদ্ধতির সংস্করণের দাবীতে একাত্যতা ঘোষণা করেছেন ।
কারণ এরা আদর্শ পিতার আদর্শ সন্তান ।বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন আর ছেলে দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে
নিজের সার্থকে বলি দিচ্ছে । এছাড়াও অনেক অনিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা স্বাধীনতার পরথেকে এখন প্রযন্ত ইচ্ছা
করে নিবন্ধন করেনি,কারণ তারা দেশকে ভালোবেসে যুদ্ধ করেছিলো,কোনো সুবিধা পাওয়ার জন্য নয় ।
কিন্তু সরিষার মধ্যে থাকা ভূতের ন্যয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বলে পরিচয় ধারী একদল কোটা পদ্ধতির পক্ষে আন্দোলন করছে ।

তাদের আন্দোলন দেখে মনে হচ্ছে তারা যৌতুক চাচ্ছে । লক্ষ করে দেখবেন বিয়ের পরে মেয়ে বাড়ি থেকে
জামাই কে শ্বশুর-শ্বশুরির ইচ্ছায় কিছু দেওয়া হলে তা হয় উপহার কিন্তু জামাই যদি কিছু চেয়ে নেয় তা
হয় যৌতুক । তাই তাদের আন্দোলনটা আমার কাছে যৌতুকের আন্দোলন ছাড়া আর কিছুই না ।
সেদিন বেসরকারি টেলিভিশন ৭১ লাইভ টকশোতে কোটার সংখ্যা আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
সন্তান কমান্ডের সভাপতি “মেহেদি হাসান”। তার মতে ৩০% কোটা তাদের জন্য যথেষ্ট নয় । অথচ,তারা মোট
জনসংখ্যার মাত্র ২ % । বাকি ৯৮% গোল্লায় গেলেও তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই । এটাকি কখনো দেশপ্রেম হতে পারে ?
যারা নিজেদের সার্থকে নিয়ে ভাবে তারা দেশপ্রেম কে কোন সংঙ্গায় সংঙ্গায়িত করবেন ?নিশ্চই তার বাবা কোটা সুবিধা
পাবে বলে দেশের জন্য যুদ্ধ করেন নাই ! আমার এইসব কোটা প্রেমিকদের নিয়ে সন্দেহ হয়,তরা যদি মুক্তিযুদ্ধের সময়
জন্মগ্রহন করতো তাহলে এদেশ কখনো স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহন করতে পরতো বলে আমার মনে হয় না !এইসব কোটা
প্রেমিকদের কাছে আমার প্রশ্ন ? “আপনার বাবা যুদ্ধ করেছে বলে আপনি মাত্রাঅতিরিক্ত কোটা সুবিধা পাওয়ার জন্য
আন্দোলন করছেন,কিন্তু এদেশটা স্বাধীন করার জন্য ৩০লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা বোনের যে ইজ্জত গেলো তাদের জন্য
কোন কোটার দাবী তুলছেন আপনারা ? না কোনো দাবী তোলেন নাই । সুধু নিজেদের কথাই ভেবেছেন ।
সুধুমাত্র আওয়মীলীগ সরকারের আমলেই মুক্তিযোদ্ধাদের সবথেকে বেশি সন্মান,সুযোগ-সুবিধা প্রধান করা হয়েছে । তাই এই
সরকার কেই কোটা পদ্ধতির সুষ্ঠ সমাধান করতে হবে । কোটা পদ্ধতি পূর্বে ছিলো এখনো আছে এবং ভবিষেৎও থাকবে ।
কিন্তু তা অবশ্যই একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকতে হবে । বাবা মুক্তিযোদ্ধা বলে তার স্ত্রী, সন্তান কে সুযোগ সুবিধা দেওয়া
আমাদের নৈতিক দায়িত্ব । কিন্তু তার নাতী-নাতনী ও যে একই সুবিধা ভোগ করবে তা অযুক্তিসংঙ্গত ।
তাই নিজের জন্য নয়,দেশের মঙ্গলের জন্য দেশকে সবার উপরে স্থান দিতে হবে । দেশকে উন্নতির সর্বচ্চ শেখরে পৌছানোর
জন্য মেধাবীদের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে ।

লেখকঃ মামুন আকন
সাংবাদিক এবং কলাম লেখক
ইমেইলঃmamunakon94@gmail.com
এ এম বি । পাথরঘাটা নিউজ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)