রাসুলের রোজা পালনের অবস্থা যেমন ছিল ?
ইবাদতের বিবিধ উপকরণ দ্বারা রাসুল (সা.) রোজার দিবসগুলোকে শোভিত করতেন। অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সাথে তিনি সাহরি ও ইফতার গ্রহণ করতেন। ইফতারের সময় হলে দ্রুত ইফতার করে নিতেন, পক্ষান্তরে সাহরি করতেন অনেক দেরিতে, সুবহে সাদিকের কিছুক্ষন পূর্বে সাহরি সমাপ্ত করতেন। ইফতার করতেন ভেজা বা শুকনো খেজুর, অথবা পানি দিয়ে। ভেজা খেজুর দিয়ে সাহরি করাকে পছন্দ করতেন তিনি। জাঁকজমকহীন স্বাভাবিক সেহরি ও ইফতার গ্রহণ করতেন সর্বদা। রমজানে রাসুলের এ আচরণ বিষয়ে বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায়, আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়ের পূর্বে কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, যদি ভেজা খেজুর না থাকত, তবে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন। যদি তাও না থাকত, তবে কয়েক ঢোক পানিই হত তার ইফতার। [তিরমিযি: ৬৯৬,]। উপরোক্ত কিছুই যদি না থাকে, তবে রোজাদার যে কোন হালাল খাদ্য দিয়ে ইফতার করে নিবে।
আবু আতিয়া হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং মাসরুক আয়েশা (রা.)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। মাসরুক তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুজন সাহাবি উপস্থিত হয়েছে, যাদের কেউ কল্যাণে পশ্চাৎবর্তী হতে আগ্রহী নয়, তাদের একজন মাগরিব ও ইফতার উভয়টিকেই বিলম্ব করে, অপরজন দ্রুত করে মাগরিব ও ইফতার। আয়েশা বললেন, কে মাগরিব ও ইফতার দ্রুত করে? বললেন, আব্দুল্লাহ (ইবনে মাসউদ)। আয়েশা উত্তর দিলেন, রাসুল (সা.) এভাবেই রোজা পালন করতেন। [মুসলিম: ১০৯৯।]
আব্দুল্লাহ বিন আবি আউফা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার, রমজান মাসে আমরা রাসুলের সাথে সফরে ছিলাম। সূর্য অস্তমিত হলে তিনি বললেন, হে অমুক! নেমে এসে আমাদের জন্য ছাতু ও পানি মিশ্রিত ইফতার পরিবেশন কর। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এখনও তো দিবসের কিছু বাকি আছে। রাসুল পুনরায় বললেন, নেমে এসে আমাদের জন্য ছাতু ও পানি মিশ্রিত ইফতার পরিবেশন কর। বর্ণনাকারী বলেন, সে নেমে এসে ছাতু ও পানির ইফতার প্রস্ত্তত করে রাসুলের সামনে উপস্থিত করলে তিনি তা গ্রহণ করলেন। অত:পর তিনি হাতের ইশারা দিয়ে বললেন, সূর্য যখন এখান থেকে এখানে অস্ত যাবে এবং রাত্রি আগত হবে এতটুকু অবধি, তখন রোজাদার ইফতার করবে। [বুখারি : ১৯৪১, মুসলিম : ১১০১]
জনৈক সাহাবির সূত্র ধরে আব্দুল্লাহ বিন হারেস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলের নিকট হাজির হলাম, তিনি সেহরি খাচ্ছিলেন। রাসুল বললেন, নিশ্চয় তা বরকত স্বরূপ, আল্লাহ পাক বিশেষভাবে তা তোমাদেরকে দান করেছেন, সুতরাং তোমরা তা ত্যাগ কর না। [নাসায়ি: ২১৬২]
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেহরিকালিন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, হে আনাস, আমি রোজা রাখতে আগ্রহী। আমাকে কিছু আহার করাও। আমি তার সামনে শুকনো খেজুর এ একটি পাত্রে পানি উপস্থিত করলাম। বেলালের (প্রথম) আজানের পর তিনি সেহরি গ্রহণ করেছিলেন। [নাসায়ি: ২১৬৭]
উপরোক্ত হাদিসগুলো সামনে রেখে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, রাসুল ইফতার দ্রুত করতেন, আনাস (রা.) -এর স্পষ্ট হাদিস এ বিষয়ের উৎকৃষ্ট প্রমাণ, তিনি বলেন, আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে, এমনকি এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও, ইফতার করা ব্যতীত মাগরিবের সালাত আদায় করতে দেখিনি। [ইবনে হিববান: ৩৫০৪, শাইখাইনের শর্ত অনুসারে হাদিসটির সূত্র বর্ণিত।]
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল বলেছেন, এক ঢোক পানি দ্বারা হলেও, তোমরা সেহরি গ্রহণ কর। [ইবনে হিববান: ৩৪৭৬]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবুদিয়ত ও দাসত্বের সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠা পেরুনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, সাধ্যানুসারে যাবতীয় উপকরণ ব্যবহার করে কর্মের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করতে প্রয়াসী হয়েছেন