দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়েও যেভাবে জনপ্রিয় হলেন অপু বিশ্বাস
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপুদের প্রতিবেশীদের অনেকেই জানিয়েছেন বগুড়া শহরের মামাবাড়িতে জন্ম অপুর। বাবা ভুপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ইহলোক ত্যাগ করেছেন। ৩ বোন ১ ভাইয়ের সংসারে অপু সবার ছোট। তার বড় বোন মিলি রাণী বিশ্বাস বিয়ের সুবাদে ভারতে থাকেন। আর মেজো বোন লতা রাণী বিশ্বাস রাজশাহীতে। বগুড়ার দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও অপুর মা শেফালী বিশ্বাসের প্রেরণাতেই সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন অপু। অপুর মাকে নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। বর্তমানে তিনি অপুর সাথেই রয়েছেন।
বগুড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৬-৯৭ বছরগুলোতে বগুড়ার অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন অপু বিশ্বাস। এর আগে কালান্তর নামের একটি অখ্যাত সংগঠনের হয়ে নাটকও করেন। শহরের কালিতলা এলাকায় অবস্থিত আলোর মেলা কেজি স্কুল এবং পরে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন।
স্কুল শিক্ষার্থী থাকাকালীনই নৃত্যকলায় প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী অপু বিশ্বাস দ্রুতই আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীর নৃত্যকলা, আবৃত্তি ও অভিনয় শাখার অপরিহার্যর্ চরিত্রের স্থান দখল করে নেন। এ সময় নৃত্য প্রশিক্ষক আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা আব্দুস সামাদ পলাশের স্নেহধন্য হিসেবে তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
এরপরই ‘মা’ শেফালী বিশ্বাসের প্রেরণায় অপু রাজধানী ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন । আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীর সুনামকে পুঁজি করে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের স্বত্বাধিকারী ফরিদুর রেজা সাগর ও চলচ্চিত্র পরিচালক সূভাষ দত্তের সাথে পরিচিতি গড়ে ওঠে। বগুড়ার মেয়ে হিসেবে চলচ্চিত্রে ব্রেক দেন সুভাষ দত্ত। সুভাষ দত্তের পরিচালনা ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ‘ও আমার ছেলে’ এবং আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় ‘কাল সকাল’ নামে দুটি চলচ্চিত্রে অবন্তী নামে অভিনয় করেন অপু বিশ্বাস। একই সময়ে কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করেন তিনি।
২০০৪-২০০৫ সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকার সিনেমা জগতেও ক্রমশ পরিচিত হয়ে ওঠেন। তবে শাকিব খানের বিপরীতে ‘কোটি টাকার কাবিন’ নামের সিনেমাটি ব্যবসা সফল হয় ও তাকে তারকাখ্যাতি এনে দেয়। এরপর থেকে শাকিবের সাথে গভীর সম্পর্কের কারণে শাকিব খান তার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অপু বিশ্বাসকে কাস্ট করার কথা বলে দিতেন বলে শোনা যায়। তবে শাকিবের পাশাপাশি নিজের তারকাখ্যাতির পর তিনি বগুড়ায় খুব একটা ফিরে তাকাননি। ২০১০ সালে একবার তিনি বগুড়ায় যান শাকিবকে নিয়ে । সেসময় দত্তবাড়ির পূজামণ্ডপও পরিদর্শন করেন।
আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীতে তার নৃত্য প্রশিক্ষক আব্দুস সামাদ পলাশ ও অন্যান্যদের সাথে দেখা করেন। সংগঠনের একটা কল্যাণ ফান্ড গঠনেরও ঘোষণা দেন। তাকেও সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয় সংবর্ধনা। যদিও পরে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে পারেননি অপু। ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল গোপনে বিয়ে করেন এই জুটি। ভারতের কলকাতার একটি ক্লিনিকে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় শাকিব-অপুর ছেলে আব্রাম খান জয়ের।
এরপরই অপু বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে শাকিব খানের। এরপর ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল বিকেল চারটায় দীর্ঘদিন গোপনে থাকা বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন অপু। এরপর থেকেই এই জুটির দাম্পত্য জীবনে নেমে এসেছে এক কাল বৈশাখি ঝড়। তারপর গত বছরের ২২ নভেম্বর অপুকে তালাক নোটিশ পাঠান শাকিব। এবছর ২২ ফেব্রুয়ারি অপুকে পাঠানো শাকিবের তালাক নোটিশের ৯০ দিন পূর্ণ হয়। এর মধ্যে দু`জনের সমঝোতা না হলে বিধি মোতাবেক ডিভোর্স কার্যকর হয়।
বর্তমানে অপু বিশ্বাস ছেলে সহ ঢাকার নিকেতনের বাসায় আছেন। কোন ছবির শুটিং না থাকায় নিজেরমত করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত জিম করছেন। সবকিছু থেকে নিজেকে একটু দূরে রেখে নতুন লুকে দর্শকদের সামনে আসতে চান। আর এজন্য যা যা করার দরকার সবই তিনি করছেন।