এবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদের যে কোন একটি নারী নেতৃত্ব আসতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এ সংগঠনে একদিকে যেমন নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন হয়, তেমনি বেরিয়ে আসে নতুন নেতৃত্ব। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই সংগঠন জাতির ক্লান্তিকালেও ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তবে জাতিকে এগিয়ে নিতে পুরুষ নেতৃত্বের হাত ধরেই নারীরাও পিছিয়ে নেই।
ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বেশ কয়েকজন নারী নেত্রী আলোচনা রয়েছেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের ৬ নেতা ইতিমধ্যে ৮ জন নারী নেত্রীর তালিকা করেছেন। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আলোচনায় উঠে আসা নারী ছাত্রলীগ নেত্রী মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়ে অর্না জামান, সহ-সভাপতি চৈতালী হালদার চৈতী, রোকেয়া হলের শাখার বর্তমান সভাপতি বিএম লিপি আক্তার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির উপ আন্তর্জাতিক সম্পাদক ইশাত কাসফিয়া ইরা এবং উপ অর্থ সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদার। এছাড়া আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-পরিবেশ সম্পাদক শেখ মারুফা নাবিলা, সহ-সম্পাদক সাবরিনা আক্তার, রোকেয়া হলের সাবেক সভাপতি সাবরিনা, ফজিলাতুন্নেসা হলের সভাপতি বেনজীর হোসাইন নিশিও আলোচনায় রয়েছেন।
বিশেষ করে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রধান চারটি পদে কারা আসতে পারেন সেদিকে থাকে সবার দৃষ্টি। সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় পদ প্রত্যাশীদের নিজ নিজ বলয়ে থেকে জোর লবিং তদবির। কে কতো ত্যাগী, কার কতোটুকু গ্রহণযোগ্যতা তা প্রমাণের জন্যই নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা মরিয়া হয়ে উঠে।
বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বে ক্লিন ইমেজের নেতারা আসবে সেটি কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতারাও প্রত্যাশা করে। তবে এবার দুই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী নেতৃত্ব আসতে পারে। আর তারাই আসতে যারা মাঠেছিল, দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে। বরাবরের মতো এবারো আলোচিত প্রার্থীদের এলাকার পরিচিতি উঠে আসছে। সে হিসেবে এবারো বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ফরিদপুর শরীয়তপুরের, প্রার্থীদের নাম শোনা যাচ্ছে জোরে। তবে পিছিয়ে নেই বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ ও খুলনা অঞ্চলের নাম।
ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ ৫ নেতৃত্বের মধ্যে ২ টি নারী থাকতে পারে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদেও নারী নেতৃত্ব আসতে পারে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার গুঞ্জন শেষ নেই।
এদিকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। যোগ্য এবং মেধাবীরাই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসবেন বলে ঢাবির সম্মেলনে এসে বলেছেন ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে তিনি বলেন, ছাত্রলীগে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। বহিরাগতরাও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। শুধু তাই নয়; দুশ্চরিত্রবানদেরও ছাত্রলীগের কমিটিতে আনা হবে না বলেও জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদেরের এই ঘোষণার একদিন পর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের এক বৈঠকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসবেন, তা নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সম্মেলনে কোনো প্রার্থীর নাম প্রস্তাব ও সমর্থনের প্রয়োজন নেই। যোগ্যতার ভিত্তিতে পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও মেধার বিবেচনায় সিলেকশন পদ্ধতিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এই কথার ওপর ভিত্তি করে ছাত্রলীগের ঢাবি ও কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতা নির্বাচন করা হবে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের এমন বক্তব্যের পর যোগ্য ও মেধাবী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের ফলে অনুপ্রবেশকারীরা মাথাচাড়া দিতে পারবে না। দলের মধ্যে অনেক দক্ষ ও যোগ্য নেতাকর্মী রয়েছে, যাদের পরিবার আগে থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারাই ছাত্রলীগের এই শীর্ষ চার নেতৃত্বে আসতে পারবে।
এদিকে ঐতিহ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগের সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনে কয়েকটি বিষয় দেখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, বয়স, নিয়মিত ছাত্র, সংগঠনের জন্য ত্যাগ এবং এলাকা। এ ছাড়া সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতাকে এবারের সম্মেলনে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ এম বি । পি এন